|| সারাবেলা প্রতিনিধি, কুমিল্লা ||
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে যুগ যুগ ধরে অনুষ্ঠিত গ্রামীণ বাংলার ঐতিহ্যবাহী ‘ঠাণ্ডা কালীর মেলা’ এবছর বসছে না। করোনা মহামারীর কারনে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সোমবার এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লামইয়া সাইফুল স্বাক্ষরিত গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে বিষয়টি জানানো হয়।
ব্রিটিশ শাসনামল থেকেই প্রতি বছর বাংলা সনের মাঘ মাসের এক তারিখে উপজেলার ঢালুয়া ইউপির মোগরা গ্রামের মাঠে বিশাল এলাকাজুড়ে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এটি দক্ষিণ কুমিল্লার সবচেয়ে বড় মেলা। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে লাখ লাখ মানুষ হরেক রকম পণ্য বেচাকেনা করতে এ মেলায় আসেন।
কথিত আছে, নাঙ্গলকোট উপজেলার ঢালুয়া ইউনিয়নের মোগরা গ্রামের শ্রী উপেন্দ্র চন্দ্রের বাড়িতে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি হতো। কালক্রমে বাড়িটির নাম কালীবাড়ি হিসেবে পরিচিত পায়। এরপর কালীবাড়ির লোকজন শীতকালে বাংলা সনের পয়লা মাঘ মেলার আয়োজন শুরু করে। মেলাটি শীতকালে অনুষ্ঠিত হওয়ায় ‘ঠাণ্ডা’ আর কালী বাড়িতে হওয়ায় ‘কালীর’ এককথায় ‘ঠাণ্ডা কালীর মেলা’ নামে পরিচিতি পায়। মেলার দিন উৎসবে মেতে ওঠে এলাকার মানুষ। শীতের সবজি থেকে শুরু করে কৃষি যন্ত্রপাতি, নিত্যপন্য ও বাচ্চাদের খেলনার জন্য এই মেলার খ্যাতি রয়েছে। মেলায় সবচেয়ে বড় আকর্ষন থাকে পুকুর, নদী ও সমুদ্রের বড় বড় মাছ। প্রচণ্ড শীতেও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মৎস্যপ্রেমীরা পছন্দের মাছ কিনতে এ মেলায় আসেন। আনন্দ-বিনোদনের জন্য থাকে সার্কাস, নাগরদোলাসহ বিভিন্ন ধরনের আনন্দ উপকরণ। মেলায় পাঁচ হাজারেরও বেশি দোকান বসে। মেলায় আসেন আশপাশের চার থেকে পাঁচ লাখ মানুষ।
প্রতিবছরের মতোও এবারও ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় মেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু, করোনা মহামারীর কারণে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞায় সেটি আর সম্ভব হচ্ছেনা।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লামাইয়া সাইফুল জানান, মেলাটির আয়োজন করতে পারলে ইজারা বাবদ সরকারে রাজস্ব আয় হতো। কিন্তু, আমরা করোনা মহামারীতে জনগণের কথা চিন্তা করে লোকসমাগম না করতে মেলার আয়োজন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।