|| সাগর চৌধুরী, মধ্যপ্রাচ্য প্রতিনিধি ||
মদিনা শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে হেরাজ মার্কেটের কাছে আল খলিল সড়কের সোফা তৈরির কারখানায় আগুনে পুড়ে মারা গেছেন দুই সহোদরসহ ৬ বাংলাদেশি। জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেট সুত্রে জানা যায়, ১০ই ফেব্রুয়ারি বুধবার রাত আনুমানিক ৪টার দিকে আগুনের এই ঘটনা ঘটে। এতে শোক ও মৃতের স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী।
মদিনাস্থ উয়ুন থানা সুত্রে ৫ জন বাংলাদেশীর নাম পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। নিহত ৫ বাংলাদেশীর পরিচয় নিশ্চিত করেন জেদ্দা বাংলাদেশ কনস্যুলেটের শ্রম কাউন্সেলর আমিনুল ইসলাম। এরা হলেন, মিজানুর রহমান, পিতা- সুলতান আহমেদ, পাসপোর্ট নং- বিই০৯৬০৭৭৩ সাম্বিরপাড়া, ওয়ার্ড- ৯, লোহাগড়া, চট্টগ্রাম। মো. আরাফাত হোসেন মানিক, পিতা- সুলতান আহমেদ, পাসপোর্ট নং- ইবি ০৪৫২৪৫৯ দক্ষিন শুকচারি, ওয়ার্ড- ৯, দরবার শরীফ, লোহাগড়া, চট্টগ্রাম। ইসহাক মিয়া, পিতা- জালাল আহমেদ, পাসপোর্ট নং- ইএ ০৫৭৮০০৫ ঘাতিভাঙ্গা, ওয়ার্ড-১, কুতুবজম, মহেশখালী, কক্সবাজার। আব্দুল আজিজ, পিতা- কবির আহমেদ, পাসপোর্ট নং- বিএফ ০০৩৯০৫৯ ঘাতিভাঙ্গা, ওয়ার্ড-১, কুতুবজম, মহেশখালী, কক্সবাজার। মো. রফিক উদ্দিন, পিতা- আবু গফুর, পাসপোর্ট নং- বিকিউ ০৪৫৬৫৬৬ ঘাতিভাঙ্গা, ওয়ার্ড-১, কুতুবজম, মহেশখালী, কক্সবাজার।
এছাড়া স্হানীয় প্রবাসী সূত্রে আরেকজনের পরিচয় পাওয়া গেছে, তার নাম সাইফুল ইসলাম, বাড়ি কক্সবাজার জেলার ঈদগাঁ জালালাবাদে। ঐ সূত্রে টেকনাফের আরেকজনের ছবি পাওয়া গেলেও তার নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি। এদের মধ্যে মিজানুর রহমান ও আরাফাত হোসেন মানিক সহোদর ভাই। আরেক বাংলাদেশীর পরিচয় সংগ্রহের চেষ্টা চলছে বলে কনস্যুলেট জানিয়েছে।আগুনে মারা যাওয়াদের মৃতদেহ মদিনায় কিং ফাহাদ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। নিহতদের মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ পাওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ কনস্যুলেট তৎপর রয়েছে।
মর্মান্তিক এ ঘটনায় সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম (বার) গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। রাষ্ট্রদূত বলেন, মৃতদের ক্ষতিপূরণ আদায়ে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাব। রাষ্ট্রদূত জেদ্দাস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটের শ্রম কাউন্সেলরকে দ্রূত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে স্থানীয় বাংলাদেশীদের কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য জেনে দূতাবাসকে জানানোর নির্দেশ দেন।
এছাড়া স্থানীয় পুলিশ, প্রশাসন ও হাসপাতালের সাথে যোগাযোগ করে নিহতদের জন্য ক্ষতিপূরণ আদায় ও মৃতদেহ দ্রুত দেশে পাঠানোর নির্দেশ দেন রাষ্ট্রদূত।
এই ধরনের কারখানা ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত অভিজ্ঞ প্রবাসীরা মনে করেন, সোফা কারখানায় আগুনের ঘটনা রোধে ফায়ার সার্ভিসের সকল নিয়মনীতি মেনে চললে এমন ঘটনা কমানো সম্ভব হবে।
গত এক দশকে সৌদি আরবের বিভিন্ন কারখানায় আগুনের ঘটনায় ৫০ জন প্রবাসী নিহত হয়েছেন। এসবের মধ্যে সোফা কারখানার সংখ্যাই বেশি এবং এসকল কাজের সিংহভাগ শ্রমিকই বাংলাদেশের।
বিভিন্ন তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে জানা যায়, ২০১৭ সালের অক্টোবরে রিয়াদের শিফা সানাইয়া এলাকায় এরকম একটি কারখানায় আগুনের ঘটনায় দশজন বাংলাদেশি, ২০১৬ সালের এপ্রিলে পূর্বাঞ্চলীয় শহর জুবাইলের এক পেট্রোক্যামিক্যাল কারখানায় আগুন লাগায় ১২ জন প্রাণ হারান। সেইসময় গুরুতর আহত হয়েছিল ১১ জন। একই বছর আগষ্টে রিয়াদের হারাজ বিন কাশেম মানফুহা এলাকার একটি সোফা কারখানায় ৪ বাংলাদেশী শ্রমিক আগুনে পুড়ে মারা যান। এবং ঠিক তার এক বছর আগে দাম্মামের দাল্লা সানাইয়া এলাকার একটি সোফা কারখানায় আগুনে ৪ বাংলাদেশি নাগরিকসহ ৬ জন মারা যান। ২০১৪ সালের মে মাসে রিয়াদের সিফা সানাইয়ার আরেকটি সোফা কারখানায় আগুনে কুমিল্লার ৯ জন ও ফেনীর একজন সহ মোট দশজন নিহত হয়।