।। গোবিন্দ শীল ।।
খুব ভালো একটি ঘুম দিয়ে উঠলে আমাদের খুব আরাম বোধ হয়। এসময় মাথা (চেতনা) বেশ ঠান্ডা থাকে এবং মস্তিষ্ক বড় ধরণের পরিকল্পনা, ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় যদি ভূমিকম্প শুরু হয়, আমরা সাথে সাথে ভীত হয়ে যাই এবং মস্তিষ্ক তখন সাথে সাথে জীবন বাঁচানোর কাজে নেমে পড়ে। এসময় মস্তিষ্কের যে অংশ সচল হয় তা হলো ’এমিগডালা’ ।
এই অংশটি এতটাই ক্ষমতাশালী যে ভূমিকম্পের সময় তা পুরো মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। আর বলে, ‘পালাও!‘ আরেকটি উদাহরণ: রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় ধরুন একটি পাগল লোক এসে আমাকে
আক্রমণ করার চেষ্টা করছে। এসময় ‘এমিগডালা’ দুই ধরণের নির্দেশ দিতে পারে—‘পালাও’ অথবা ‘যুদ্ধ কর’। এই সিদ্ধান্ত এমিগডালা মুহূর্তের মধ্যে দিয়ে দেয়।
প্রাচীনকালে মানুষ শিকার করার সময় বন্যপ্রানীকে যখন ঘিরে ধরত, অথবা আচমকা কোন বন্যপ্রাণী সামনে এসে হাজির হত, তখন আমাদের পূর্ব পুরুষদের শরীরে কর্টিসল নামক একটি ‘চাপ’ হরমোন নি:সৃত হত। যাহোক, ঐ পরিস্থিতির অবসান হবার সাথে সাথে কর্টিসল নি:সরণ বন্ধ হতো এবং বন্যপ্রাণীটি মারা গেলে অক্সিটোসিন নামক ইতিবাচক হরমোন শরীরে তৈরী হতো (সামাজিক বন্ধন, অপরের জন্য কিছু করার—এখানে খাবার ভাগাভাগি করার— তাগিদ অনুভূত হত )। অর্থাত্ এমিগডালা আমাদেরকে হয় পালাতে বলে না হয় যৃদ্ধ করতে বলে (fight or flight mode of nervous system) ।
আবার ফিরে আসি মনের শান্ত অবস্থায়। এসময় মস্তিষ্কের সামনের অংশ, যাকে, প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্স বলা হয়, তা সচল থাকে। পছন্দের গান শোনা, ধ্যান করা, প্রাকৃতিক পরিবেশে থাকলে মস্তিষ্কের এই অংশটি সচল হয়। এটিই আমাদের executive function, creativity, স্মৃতি শক্তি ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে দিনের বেশিরভাগ সময় যদি শান্ত থাকা যায়, তাহলে সব কাজ গুছিয়ে, সৃজনশীলতার সাথে করা সম্ভব।
রাগ এবং ভয় খুবই শক্তিশালী অনুভূতি আর প্রাচীন মানুষের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় বিষয় ছিল। কিন্তু এখনও আমরা কর্টিসল দ্বারা আক্রান্ত হই, রাগ এবং ভয় আমদের মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। আর দীর্ঘদিন ধরে বৈরী পরিবেশে থাকলে ( মনই ঠিক করে পরিবেশটি বৈরী কিনা!) এমিগডালা আমাদের সকল সৃজনশীলতাকে নষ্ট করে দেয়। তখন, কোনভাবেই কৌশলগত সিদ্ধান্ত অথবা যুক্তিযুক্ত সিদ্ধান্ত নেয়া যায় না। সেকারণে আমাদের উচিত কোনভাবেই যেন রাগ এবং ভয় আমাদের পেয়ে না বসে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ভয় পেলে বা রাগান্বিত হলে ইঁদুর ও অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণী হয় চমকে গিয়ে ফ্রিজ হয়ে যায় অথবা দৌড়িয়ে পালিয়ে যায়। এই দুটি অনুভূতি একইভাবে মানুষের চিন্তনকেও প্রভাবিত করে ।
এই করোনাকালীন সময়ে আমরা সব সময় আতংকে আছি। ফলে, কর্টিসল নামক ক্ষতিকারক হরমোনটি বেশি বেশি নি:সৃত হচ্ছে এবং আমাদের পুরো মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিচ্ছে। শুধু তাই নয়, কর্টিসল নি:সরণ বন্ধ না করতে পারলে তা উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস তৈরী করে।
এরকম পরিস্থিতিতে আমাদের উচিত দিনে দুবার ১৫/২০ মিনিট করে মেডিটেশন করা, ভাল গান শোনা ও পারলে অনুপ্রাণিত করতে পারেন, এধরণের লোকজনের সাথে (টেলিফোনে অথবা সামাজিক দূরত্ব মেনে সামনা-সামনি ) বসে গল্প করা।
লেখক : সাংবাদিক ও লেখক