বড় চোরদের মাননীয়/মাননীয়ার আসনে বসিয়ে রাখি!

|| সীমান্ত বাধন চৌধুরী ||

পাঁচ হাজার কোটি টাকা দেড় মাসের মাথায় হজম করে ফেলা এক বিশাল যোগ্যতা। খেতেও জানতে হয়,হজমশক্তিও থাকতে হয়।

সবাই তো আর সবকিছু পারে না!

আমার মায়ের ছিল প্রচন্ড রকমের ভুলো মন। আমরা কাছাকাছি বয়সি ভাইবোনেরা তখন স্কুলে পড়তাম। প্রায়ই মায়ের টাকা হারিয়ে যেত।

খোঁজাখুঁজি শুরু হলে একপর্যায়ে আমাকে জিজ্ঞেস করা হতো,

-সত্যি বলবি,টাকা তুই নিছিস ? একথা শুনে

আমি তখন হেসে ফেলতাম। সবাই মনে করতো, হেসে যখন ফেলেছে ও-ই টাকা নিয়েছে। এই হাসির কারণেই আমার মত গো বেচারাকে চোর সাব্যস্ত করা হতো। আর অন্যসব ভাইবোনেরা গুরুগম্ভীর সুশীল সেজে বসে থাকতো।

পরে দেখা যেত, কলেজ পড়ুয়া আমার স্মার্ট মেজো ভাইটি আসল চোর । তার পকেটে পাওয়া টাকা,কেনাকাটা ফুটানি মারা চলাফেরায় ধরা খেতো মায়ের কাছে। সে তার ভাবগাম্ভীর্য দিয়ে বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল,যে সে একাজ করতেই পারে না।

তো বড় চোর হবার যোগ্যতা অর্জন করতে হয়।

এই করোনায় তেলচোর, চালচোর, বালচোর কতকি দেখলাম! এইসব ছ্যাঁচড়া ঘ্যাচরা চোরদের নিয়ে আমরা কত মাতা মাতলাম অযথাই। ছোট চোরদের মেধা কম বলে এটুকু করে খেতে পারবে না, এ হয় না।

বেশি মেধাবিদের হাজার হাজার কোটি টাকা চুরির কাছে তাদের ছোটোখাটো অপরাধ মহা সমুদ্রের কাছে এক গ্লাস জল সম।

বড় বড় চোরগুলোকে আমরা চিনেও মনের কোঠরে মাননীয়/মাননীয়ার আসনে বসিয়ে রাখি।

পিঁপড়ের কামড় আমাদের সহ্য হয় না,অথচ হাতির পায়ের ডলা মন্দ লাগে না,এমনই হয়ে গেছি আমরা।

প্রণোদনার নামে হাজার হাজার কোটি টাকা এমনি এমনি তো গিলে ফেলা যায় না।কিছু কৌশলী হতে হয়।

আগে মতিঝিল/গুলিস্তানে ফুটপাতে চুল্কানির মলম বিক্রেতারা দেখতাম অনবরত চিৎকার করে প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছে, আর তা তন্ময় হয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা শুনে যাচ্ছে দলবদ্ধ একশ্রেণী।

তো মন্ত্রমুগ্ধ বাক্য ব্যয় করে দর্শক ধরে না রাখতে পারলে চুল্কানীর মলম কিনবে কে ?

জনগণের এই হাজার হাজার কোটি টাকা খাওয়া ব্যক্তিগুলোও একধরণের ভান ধরেন। চুল্কানির মলম বিক্রেতাদের মতই মিডিয়ায় মিষ্টি মিষ্টি জ্ঞানগর্ভ কথা বলে বলে সরল মানুষের মনে এরা জায়গা করে নেয়। তাদের প্রতি মানুষকে ভক্তি,বিশ্বাস আনতে বাধ্য করে এভাবে,যেন মিসেস হকেরা কখনো দরিদ্রের টাকা চুরি করে খেতে পারেন না।

কিন্তু চোরের দশদিন গেরস্তের একদিন। এই করোনায় পুকুর চুরি করতে গিয়ে বুঝি হাজার কোটি খেতে পারা মিসেস হক সুশীলার এবার মুখোশ খসেই পড়লো! সুন্দর মন ভোলানো বাক্যবানে আর বুঝি নিজেকে রক্ষা করা গেল না।

Abraham Lincoln আপনাদেরকে সতর্ক করতেই বলেছিলেন মিসেস হক-
You can fool some of the people all of the time, and all of the people some of the time, but you can not fool all of the people all of the time.

সীমান্ত বাধন চৌধুরী, সাংবাদিক

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন