নো কমপ্লেকশান, নো কালার- অল লাইভস মেটার

||বদরুজ্জামান আলমগীর ||

অনেক কালো বন্ধুর সঙ্গে কথা বলে দেখেছি- তারা অন্যদের কথা শোনে না। ব্ল্যাক লাইভস মেটার আন্দোলনের অনেককেই চিনি, জানি। এমনকি মুমিয়া আবু জামাল মুক্তির সংগ্রামে যতোবার ফিলাডেলফিয়া সিটি হলের সামনে জমায়েত হয়েছি- মুমিয়া আবু জামাল মুক্তি পরিষদ নেতৃত্বের, এমনকী প্যাম আফ্রিকার বক্তব্য শুনে মনে হয়েছে একপেশে; তাদের কথা ও প্রকল্প প্লুরালিস্টিক নয়, তাদের মধ্যে অবশ্যই সার্বক্ষণিক একটা গাজুরি ভাব আছে।

আমার জানের দোস্ত আফ্রিকান আমেরিকান ডেভিড কানুমবা সবসময় বলে, একটু নজর করে দেখো- কালোরা সাদাদের থেকে অনেক বেশি বর্ণবাদী। আমি অবশ্য তাৎক্ষণিকভাবেই বলি- মিয়া, তোমারে আমি কালো হিসাবে নথিভুক্তই করি না; তুমি হাই ইসকুলে লেক্রস খেলে বড় হইসো, আর এখন ম্যাগান মেককারথির পিছনে ভাঁজ দাও- তাই তোমার মতিভ্রম হয়। ডেভিড নিজে কৃষ্ণাঙ্গ হয়েও একটা সাদা চামড়ার মুখোশ পড়ে থাকে।

আমার সাদা বন্ধু ইসাবেলা মুলার- তাকে কখনো প্রায় কোন ককেশিয়ান ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক করতে দেখিইনি। তারে জিজ্ঞেস করি- তোমার মামলা কী ইজি- ইসাবেলা, তোমাকে কোন সাদা ছেলের সঙ্গে বন্ধুত্বই করতে দেখি না। ইসাবেলার উত্তর খুব সিম্পল- আমার সঙ্গে যায় এমন কোন সাদা ছেলের সঙ্গে আমার এখনও দেখা হয়নি। আমার হাই ইসকুল সুইটহার্ট বেঞ্জামিন ইভানভ ছিল জাস্ট ফেনোমেনাল।

মিনিয়াপোলিসে টামিকা ম্যালোরির আগুনজ্বালানিয়া ভাইরাল বক্তৃতাটিও কী বর্ণবাদী নয়? তিনি যেন ঠেকায় পড়ে ন্যাটিভ এমেরিকানদের কথাটি উল্লেখ করলেন। কেবল যদি ব্ল্যাক লাইভস মেটার করে তাহলে ব্রাউনদের জায়গাটা কোথায়?

এই সীমাবদ্ধতাটুকু জানার পরও আমরা এই আন্দোলনকেই সমর্থন করি, পুরো পরিবারশুদ্ধ রাস্তায় গিয়ে দাঁড়াই। ১৯৭১-এ পূর্ববাঙলার সবাইকেই বাঙালি হিসাবে লড়াই করতে হয়েছিল, যদিও সবাই সেখানে বাঙালি ছিল না।

প্রকৃত ভীতিটা কিন্তু অন্য জায়গায়- পুলিশ অফিসার ডেরেক চোবিন কংক্রিটের রাস্তায় হাঁটুর নিচে জর্জ ফ্লয়েডকে চেপে ধরেছে- একমিনিট নয়, দুইমিনিট নয়- আস্ত পাঁচমিনিট! ফ্লয়েড আসলে ওখানেই মারা গিয়েছে, বাকিটা সৌজন্য মাত্র। ভিডিওটা খেয়াল করে দেখুন- একটা ফুটবল টিমের টাইটএন্ড, জবরদস্ত জর্জ তার হাঁটুর নিচে মারা যাচ্ছে- কিন্তু ডেরেক এতোটাই নির্বিকার, অনায়াস যে, সে তার হাতদু’টোও পকেট থেকে বের করার গরজ অনুভব করেনি; তার হাতে সিগারেট থাকলে সে পুরো সিগারেটটাও আয়েসে শেষ করতো।

এটা শুধু বর্ণবাদ নয়- এটা রাষ্ট্র, এটা ক্ষমতা, এটা জার্সি! এই পুলিশের গাত্রবর্ণ কালোও হতে পারতো।

এই পাষাণকে থামাতে হবে। তাই আমরা রাস্তায়। ব্ল্যাক লাইভস মেটার একটি আওয়াজ; তার ভিতরে আরেকটি কথা আছে- তা হলো, ব্রাউন লাইভস মেটার; তারও ভিতরে আরেকটি মন্ত্র আছে- নো কমপ্লেকশান, নো কালার- অল লাইভস মেটার।

বর্তমানে ভুল থাকে, ত্রুটি থাকে- কিন্তু ভবিষ্যৎ নির্ভুল।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন