|| সেলিম খান ||
করোনা সংক্রমণ এড়াতে শুরু থেকেই বিশ্বের রাস্ট্রগুলো মানুষকে ঘরবন্দি করে রাখাকেই বেছে নেয় অন্যতম প্রতিষেধক হিসেবে। সেইসঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হয় অর্থনীতির সব চাকা। বিশ্বের দেশে দেশে এই ঘরবন্দিত্ব বা লকডাউন বা সাধারণ ছুটি যাই বলি না কেন তা বেশ কাজে দেয়। করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে মাস্ক ও গ্লাভস পরা, মাথা থেকে পা অবধি বাতাস না ঢুকতে পারে এমন প্লাস্টিক জাতীয় কাপড়ে তৈরি আবদ্ধ পোশাকে মুড়ে দেওয়া হয় মানুষকে। যে পোশাকটি পরিচিতি পায় পিপিই হিসেবে। এসব স্বাস্থ্যসুরক্ষা নিয়েও মুক্তি মিলছে না করোনার সংক্রমণ থেকে।
নিজের মত করে উদ্ভাসিত প্রকৃতি যেনো বলতে চাইছে দেখো, আমাকে শত বছর ধরে দুষিত করেছো, প্লাস্টিকসহ নানা বর্জ্য, এমনকি পারমাণবিক বর্জে আমাকে করেছো ক্ষতবিক্ষত। এখন সেই তোমরাই নিজেকে মুড়িয়ে ফেলেছো প্লাস্টিকের পোশাকে। তারপরও তোমাদের রেহাই মিলছে না।
এরআগে এমন অনেক মহামারি সামাল দিতে পারলেও এবারে যেন কোনভাবেই পেরে উঠছে না প্রকৃতির সন্তান(!)। প্রতিষেধক তৈরি সেতো এখনও দুরস্ত। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনাভাইরাসটি মুহূর্তে তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট বদল করে। মানুষের শরীরে ঢুকেই নিজেকে মিউটিলেইট করতে থাকে লাখো সংখ্যায়। তাই এর প্রতিষেধক তৈরিতে নাকাল হতে হচ্ছে তাদেরকে। সংক্রমণের প্রায় তিনমাস হতে চললেও সেই পুরনো ওষুধ বা প্রতিষেধকেই আটকে আছেন বিজ্ঞানীরা।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এবোলাভাইরাস ও হেপাটাইটিস সি এর প্রতিষেধক রেমডেসিভিরেই ভাল ফল পাচ্ছেন তারা। আবার শুরুর দিকে ম্যালেরিয়ায় কার্যকর হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহারের কথা বলা হলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু বলেছে, এটির ব্যবহার আপাতত বন্ধ রাখতে হবে। গত সপ্তাহে মেডিকেল জার্নাল দ্য ল্যান্সেটে প্রকাশিত এক গবেষণায় জানানো হয় যে, করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহার করলে তা তো কোন কাজেই আসে না, উল্টো এটি রোগীদের হৃদরোগ ও মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ায়।
অথচ যে দেশটি করোনায় এখন পর্যন্ত সবথেকে বেশী বিপর্যস্ত সেই আমেরিকার অধিপতি(!) ডোনাল্ড ট্রাম্প শুরু থেকেই হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনেই ভরসা রাখছিলেন। এই কদিন আগেও তিনি নিজে এটি সেবন করছেন বলে জানালেও সম্প্রতি বলেছেন, তিনি আর এটি সেবন করছেন না।
এদিকে করোনার প্রতিষেধক তৈরির গবেষণা নিয়েও চলছে নানা টালবাহানা। স্বাভাবিকভাবেই যে কোন গবেষণা কাজই অত্যন্ত ব্যয়বহুল। আর সেটা যদি দ্রুততম সময়ে শেষ করতে হয় তাহলেতো কথাই নেই। বিশেষ করে যেখানে ওষুধ সম্পর্কিত যে কোন গবেষণা কাজে অর্থের অন্যতম যোগানদার হচ্ছে রাষ্ট্র ও ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো।
শুরুর দিকে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা এই গবেষণাকাজে বেশ তোড়জোর দেখালেও মূলত অর্থাভাবেই তাতেও পড়েছে ভাটা। অন্যান্য দেশের গবেষণাতেও চলছে একই অবস্থা। এরইমধ্যে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ কাজের অন্যতম সহায়ক বিশ্ব সংস্থা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে দেওয়া তহবিল প্রত্যাহার করে নিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘভিত্তিক এই সংস্থাটি ‘চীনের প্রতি পক্ষপাত’ করছে এমন অভিযোগে মার্কিন অধিপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প তহবিল বন্ধ করে দেন।
অথচ বিশ্বের মোড়ল বলে দাবিদার এই ট্রাম্পই গেল ফেব্রুয়ারিতে নিজ দেশের পারমানবিক শক্তি ও নিরাপত্তার জন্য বরাদ্দ করেছেন সর্বাধিক অর্থ। যার পরিমান ৩৫ দশমিক চার বিলিয়ন ডলার। এরমধ্যে ১ দশমিক দুই বিলিয়ন ডলার দেওয়া হয়েছে শুধু পারমানবিক শক্তি গবেষণা ও উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে। যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানিভিত্তিক সংবাদ সংস্থা পাওয়ার টেকনোলজি’র গেল ১২ই ফেব্রুয়ারির অনলাইন সংস্করণে এসব তথ্য জানিয়ে বলা হয়েছে, এই অর্থের পরিমাণ দেশটির ২০২০ সালের বরাদ্দের চেয়ে যথাক্রমে ১৬ দশমিক পাঁচ ও ৮২৪ মিলিয়ন ডলার বেশী।
পারমানবিক গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ালেও ট্রাম্প প্রশাসন করোনা গবেষণায় প্রথম বরাদ্দ বাতিল করে গেল এপ্রিল মাসে। যার পরিমাণ ছিল ৩ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হেলথ এনআইএইচ এই গবেষণা অনুদান দিয়েছিল চীনের উহান ইন্সটিটিউট অব ভায়রোলজিকে। যেখানে করোনা নামের এই ভাইরাসটি গবেষণা করছিলেন নিউইয়র্কভিত্তিক ইকো হেলথ এলায়েন্সের সভাপতি পিটার দাসজাক।
উহান থেকে যখন করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে তখন যুক্তরাষ্ট্র সরকার এর জন্য চীনকে দায়ী করে। নির্দিষ্ট করেই জানিয়ে দেয় এটি মনুষ্যসৃষ্ট এবং চীন সরকারই এটি ছড়িয়ে দিয়েছে। এজন্য উহান ইন্সটিটিউটকে আর কোন গবেষণা অনুদান দেওয়া হবে না। ঐ সময়টাতে ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের ইমপিচমেন্ট ঠেকানোর কৌশল হিসেবেই চীনবিরোধী এমন অবস্থান নেন বলেও ধারণা রয়েছে।
ভ্যাকসিন গবেষণায় অর্থ বরাদ্দ বাতিল করেই ক্ষান্ত হননি ট্রাম্প। গেল ১৫ই মে’র ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ভ্যাকসিন আবিস্কার হোক বা না হোক, আমেরিকা করোনাযুদ্ধে জয়ী হবেই। এছাড়া একটা সময়ে এই ভাইরাস সংক্রমণ এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ট্রাম্পের এহেন অবস্থানের মধ্য দিয়ে প্রকারান্তরে ভ্যাকসিন গবেষণায় তহবিল যোগানোতে তাঁর অনীহাই প্রকাশ পেয়েছে।
এদিকে ভ্যাকসিন গবেষণায় স্বাধীণ ও মুক্ত গবেষকদের তহবিল বাতিল করলেও ওষুধ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যুক্ত হতে আগ্রহের কমতি নেই ট্রাম্প প্রশাসনের। নিউইয়র্ক টাইমসের গেল ২১শে মে তারিখের অনলাইন সংস্করনের তথ্য বলছে, বাণিজ্যিকভাবে ভ্যাকসিন তৈরির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্রের হেলথ এন্ড হিউম্যান সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্ট ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেসা’র সঙ্গে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি করেছে। এই ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে ভ্যাকসিন তৈরির যে প্রক্রিয়া চলছে তাতে অন্যতম অর্থ যোগানদার হিসেবে সম্পৃক্ত রয়েছে। শুধু অ্যাস্ট্রাজেনেসাই নয়, এরকম আরো অনেক ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অর্থবিনিয়োগের চুক্তি করছে ট্রাম্প প্রশাসন।
করোনা সংক্রমণ ঠেকানো আর এর প্রতিষেধকবাণিজ্য নিয়ে এমন তৎপরতার মধ্যেই বিশ্বপুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থার মোড়ল রাষ্ট্রগুলো আর থাকতে চাইছেন না ঘরবন্দি। আরতো বাধা থাকতে চাইছে না মুনাফার ঘোড়া। মানুষের দুর্যোগেই তো তার সহজাত প্রবৃতি আরো বেশী দৌঁড়বার। আর কতদিন বাধা থাকা যায়? অনেকদিনতো হলো।
পুঁজি আর মুনাফার এমন সহজাত দাবির মুখে বিশ্বরাষ্ট্রগুলোর প্রধানরা সমস্বরে বলতে শুরু করেছেন, অর্থনীতির চাকা না ঘুরলে যে সবকিছু হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। এমনিতর শঙ্কায় করোনা সংক্রমণের মধ্যেই ঘরমুক্তির ঘোষণা আসছে প্রতিদিন।
প্রায় প্রতিটি রাজ্যে লকডাউন শিথিল কিংবা প্রায় তুলে নেওয়ায় সংক্রমণ আর লাখ পেরোনো মৃত্যুর তালিকার শীর্ষে রয়েছে আমেরিকা। করোনা-যুদ্ধে শামিল হওয়া প্রায় ৬২ হাজার ডাক্তার-নার্স আক্রান্ত হয়েছেন এই ক’মাসে। সমীক্ষা বলছে, গত বছরের তুলনায় আমেরিকার দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা এখন ১০ শতাংশ বেশি।
তবে ঘরবন্দিত্ব আর প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার সদিচ্ছাতেই যে ঘরমুক্তির ঘোষণা দেওয়া যাচ্ছে তার বড় প্রমাণ নিউজিল্যান্ড। দুই লাখ ৬৮ হাজার ২১ বর্গকিলোমিটার আয়তন আর মাত্র ৫০ লাখ ১৮ হাজার ৪৩০ জন মানুষের এই দেশটিতে এই মুহূর্তে অ্যাক্টিভ করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা মাত্র ২১ জন।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডের্নের প্রশাসন বলছে, তাদের কোনও হাসপাতালেই আর একজনও কোভিড-রোগী নেই। বৃহস্পতিবার ২৮শে মে সাংবাদিক বৈঠকে এমন দাবি করে দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগের ডিরেক্টর জেনারেল অ্যাশলে ব্লুমফিল্ড জানান, গেল ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে কেউ মারাও যাননি। আর সংক্রমিত ওই ২১ জনেরও চিকিৎসা চলছে বাড়িতেই। প্রায় তিন মাসের কঠিন লড়াই শেষে এই মাইলফলক ছোঁয়ার পিছনে কড়া লকডাউন এবং রাষ্ট্রের সদিচ্ছাকেই কৃতিত্ব দিচ্ছেন দেশটির চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা।
নিউজিল্যান্ডে এমন সাফল্যের দাবি মিললেও এশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকায় ঘরমুক্তিতে আবারও ফিরে আসছে করোনা প্রকোপ। ঘরমুক্তির পর টানা প্রায় তিন সপ্তাহ নতুন করে কেউ সংক্রমিত না হলেও, গেল শুক্রবার থেকে ফের সংক্রমিত হচ্ছেন জাপানের বন্দর শহর কিতাকিউশুর মানুষ। সংক্রমণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে ধরে নিয়েই গেল ১৪ই মে সারাদেশে জারি করা ‘ জরুরি অবস্থা’ তুলে নেয় প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের প্রশাসন। কিন্তু ঘরমুক্তিতে ফিরতে না ফিরতেই আবারো সংক্রমণের ঢেউ। আবারো শঙ্কায় ফেলেছে দেশটির সরকার ও মানুষকে।
একই বলয়ের দেশ দক্ষিণ কোরিয়া। সেখানেও ঘরবন্দিত্ব শিথিল করে আর্থ-বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করায় আবারো সংক্রমণে পড়েছে দেশটি। নাইট ক্লাব থেকে নতুন সংক্রমণের শুরু। বৃহস্পতিবার দেশটিতে নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ৪০ জন। যা গেল এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত সময়ে একদিনে সর্বোচ্চ।গেল তিন-চারদিনে নাইট ক্লাব থেকেই আক্রান্ত হয়েছেন ২৬০ জন। নতুন এই পরিস্থিতি চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে দেশটির সরকার ও সাধারণ মানুষের কপালে।
লকডাউন শিথিল বা তুলে নেওয়ায় নতুন করে সংক্রমণ বাড়ছে ব্রাজিল, পেরুর মতো দক্ষিণ আমেরিকার অনেক দেশে। করোনায় দিনে মৃত্যুর হিসাবে বৃহস্পতিবার ২৮শে মে আমেরিকাকে ছাপিয়ে গিয়েছে ব্রাজিল। সে দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এখন চার লাখের কাছাকাছি। দেশে করোনা পরীক্ষা কম হচ্ছে এই অভিযোগ তুলে সাও পাওলোর একটির সংস্থার দাবি, বাস্তবে দেশে করোনা আক্রান্ত সরকারি হিসাবের থেকেও ১৫ গুণ বেশি।
সংক্রমণ বাড়ছে পেরু, মেক্সিকোতেও। বুধবার ২৭শে মে’র হিসাব বলছে, ২৪ ঘণ্টায় পেরুতে প্রায় ৬ হাজার মানুষ নতুন করে সংক্রমিত হয়েছে।
এদিকে দক্ষিণ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার পরিসংখ্যাণ বলছে, বিশ্বসেরা জনবহুল দেশ চীন, যেখানকার প্রাদেশিক শহর উহান থেকে প্রাণঘাতি এই ভাইরাসের সংক্রমণের শুরু হলেও তা নিয়ন্ত্রণে বেশ অনেকটাই সামাল দিতে পেরেছিল দেশটির মানুষ ও সরকার। উহানকে একপ্রকার করোনামুক্ত ঘোষণা করে ঘুরতে দেওয়া হয় অর্থনীতির সব চাকা। কিন্তু সেই উহানেই ফের ফিরে এসেছে সংক্রমণ। সম্প্রতি নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ছয়জন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে উহানের সব মানুষের করোনা পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। মাত্র ১০ দিনে ১ কোটি ১০ লাখ মানুষের পরীক্ষা করাতে গিয়ে সৃষ্ট ভিড়ে দেখা দিয়েছে সংক্রমণের নতুন শঙ্কা।
আরেক জনবহুল দেশ ভারত এখনো ঘরবন্দিত্বেই রয়েছে। তবে এর মধ্যেই সংক্রমণ বিস্তারের মাত্রা বিবেচনায় জোন ভাগ করে শিথিল করা হচ্ছে ঘরবন্দিত্বের কঠোরতা। দেশটিতে বৃহস্পতিবার নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ৬ হাজার ৩৮৭ জন। মোট আক্রান্তের সংখ্যা এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৫৮ হাজার ৩৩৩ জন। মারা গেছেন ৪ হাজার ৫৩১ জন।
৩২ লাখ ৮৭ হাজার ২৬৩ বর্গকিলোমিটারের এই দেশটির প্রায় সর্বত্রই সংক্রমিত হয়েছে এই ভাইরাস। গণহারে পরীক্ষা সম্ভব না হলেও যা হচ্ছে তাতেই প্রতিদিন ৫ হাজারের বেশী মানুষের শরীরে সংক্রমণের উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে।
ভারতের নামী এপিডেমিওলজিস্ট ও ভেলোরের সিএমসি-র সাবেক অধ্যক্ষ জয়প্রকাশ মুলিয়িল মনে করছেন, লকডাউন পুরোপুরি তুলে নেওয়া হলে ভারতে অন্তত কুড়ি লাখ মানুষ মারা যেতে পারে। কিন্তু লকডাউন বহাল রাখাটাও কম বিপজ্জনক নয় বলেও মন্তব্য তার। তিনি এও বলেছেন,“লকডাউন অবশ্যই আমাদের মৃত্যুর হার অনেক শ্লথ করতে পেরেছে, কিন্তু এটা তুলে নেওয়া মাত্র মৃত্যুর হিসাব আবার আগের জায়গায় পৌঁছে দিতেই পারে।
আর আয়তনের প্রেক্ষিতে সাংঘাতিক রকমের জনঘনত্বের দেশ বাংলাদেশে অন্য অনেক রাষ্ট্রের মত লকডাউন বহাল না করা হলেও ‘সাধারণ ছুটি’ ঘোষণা করে মানুষকে ঘরবন্দি রাখতে সফল হয়েছিল দেশটির সরকার। কিন্তু মাঝে মধ্যে নানানো চাপে ও তাপে ‘ছেড়ে দিয়ে ধরবার’ মত সিদ্ধান্তে পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে দিনকে দিন।
খুলে দেওয়া হয়েছে অফিস আদালত, কল কারখানা এমনকি গেল প্রায় আড়াইমাস ধরে বন্ধ রাখা গণপরিবহনও। যদিও ব্যক্তিগত গাড়ি চলছে এ মাসের মাঝামাঝি থেকেই। দেশটির অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের একমাত্র শহর রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের শহরগুলোই হয়ে উঠেছে সংক্রমণের কেন্দ্রস্থল।
প্রায় ১৮ কোটি মানুষের এই দেশটিতে সবশেষ ২৭শে মে’র তথ্যমত ৪২টি ল্যাবে প্রতি চব্বিশ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষা করা যাচ্ছে মাত্র আট হাজারটি। আর এতে সংক্রমণ পাওয়া যাচ্ছে ১৫’শর বেশী। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গেল ২৪শে মে’র পরিসংখ্যান বলছে, করোনাভাইরাস শনাক্তের তালিকায় শীর্ষ ২৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ২৪ তম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় ৩য়। আর প্রতি ১০ লাখে কোভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে মাত্র ১২৩৯ জনের।
অন্যদিকে মানুষের পক্ষের কর্মসূচি নিয়ে রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালনা করলে যে করোন কেন অন্য যেকোন দুর্যোগ সাফল্যের সঙ্গে সামাল দেওয়া যায় তার উদহারণ হয়ে উঠেছে নেপাল, ভুটান ও ভারতের প্রাদেশিক রাজ্য কেরালার মত রাষ্ট্রসংগঠন।
লেখক : সম্পাদক, দৈনিক সংবাদ সারাবেলা