চা বাগানে নিশ্চিত করা হচ্ছে করোনা স্বাস্থ্যবিধি

|| জি এম শিবলী ||

সরকারের নির্দেশে সংক্রমণ ঝুঁকির মোকাবেলায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং করোনা সংক্রান্ত সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে চা বাগানের সকল কর্মকান্ড । কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে শ্রমিকরা কর্মরত অবস্থায় নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চা পাতা চয়নের কাজ করছে এবং অন্যান্য সবধরনের কাজ করার সময়ও চা বাগানের শ্রমিকরা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখছে।

চা বাগানের প্রত্যেক শ্রমিককে মাস্ক এবং সাবান সরবরাহ করা হয়েছে। তাছাড়া কর্মস্থলে হাত-পা পরিষ্কারের জন্য পানি ও সাবানের ব্যবস্থা রয়েছে। একই সাথে শ্রমিকরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে। শ্রমিক কলোনিগুলতে নিয়মিত জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। শ্রমিকদের করোনা বিষয়ে ধারনা ও প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে তাদেরকে নিয়মিত জ্ঞাত করা হচ্ছে। তাছাড়া শ্রমিকদের শারীরিক সুস্থতার বিষয়েও নিয়মিত খোজ খবর নেওয়া হচ্ছে।

কোভিড-১৯ মোকাবেলায় চা বাগান এবং পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে চা শ্রমিকরা শ্রীমঙ্গলের প্রতিটি আনাচে-কানাচে মেশিনের সাহায্যে সর্বপ্রথম জীবাণুনাশক স্প্রে করেছে।

চা বাগানের ভিতরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেক জোরদার করা হয়েছে। বাইরে থেকে কাউকে বাগানে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না আবার বাগানের লোকজনদের বাইরে যেতেও সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে এবং বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কাউকে বাগানের বাইরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।

পরম করুণাময়ের মেহেরবানিতে চা বাগানে এখন পর্যন্ত কেউ করোনায় আক্রান্ত হয় নি। করোনার কারণে চা বাগান বন্ধ হলে চা বাগান মালিক এবং শ্রমিক উভয়কে প্রচুর ক্ষতির সম্মুখীন হতে হত। প্রথমতঃ মার্চ এবং এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে প্রবল খরার কবলে পড়ে চা শিল্প। বাগানগুলো প্রাকৃতিক বৃষ্টির জন্য হাহাকার করছিল। চলতি বছর কাক্ষিত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় চায়ের সবুজ প্রকৃতিতে বিরূপ প্রভাব পড়েছিল। দীর্ঘদিন অনাবৃষ্টি সহ প্রখর রোদ্রতাপে অধিকাংশ চা গাছ বিবর্ন রূপ ধারণসহ মারা যেতে শুরু করেছিল। যে সময় চা বাগান বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রধান কাজ ছিল পানি সরবরাহ করা। বাগানের কাজ বন্ধ হয়ে গেলে পানির অভাবে রুগ্ন প্রায় চা গাছগুলো মারা যেত।

ঐ সময়ে আরেকটি প্রধান কাজ ছিল শ্রমিকদের ঘর তৈরি সহ পুরনো ঘর সংস্কার করা যাতে বর্ষার মৌসুমে তাদের কষ্ট না হয়। বাগানে ছুটি ঘোষণা করা হলে এ কাজগুলো বন্ধ হয়ে যেত।

চা বাগান বন্ধ থাকলে অস্থায়ী শ্রমিকদের কাজ বন্ধ থাকত এবং তাদের বেতনও বন্ধ হয়ে যেত। এতে তারা আর্থিকভাবে মারাÍক ক্ষতিগ্রস্থ হত। বাগান বন্ধ থাকলে হয়তো চা শ্রমিকরা বাগান মালিকদের পক্ষ থেকে ২-৩ মাস আর্থিকভাবে সহযোগিতা পেত কিন্তু তারপর উৎপাদন না হলে বেশিরভাগ মালিকদের পক্ষে আর সহযোগিতা করা সম্ভব হত না।

বৈশাখের শুরুতে কাঙ্খিত বৃষ্টিপাতের ফলে চা বাগান আবার সজীব হয়ে ওঠে, গাছে গাছে আবার কুঁড়ি আসতে শুর“ করে। চা বাগান বন্ধ থাকলে তখন নিয়মিত পার্কিং করা যেত না। এতে এক-একটা কুঁড়ি শাখায় পরিণত হয়ে যেত এবং পরে যখন কাজ শুরু হত এই শাখাগুলো ছেঁটে ফেলে দিতে হত। এরপর আবার চা চয়নের উপযুক্ত হতে এক থেকে দেড় মাস সময় লাগত।

এতে করে মালিকরা হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পেদের ক্ষতির সম্মুখীন হতেন, সাথে শ্রমিকরাও এই পাতি চয়ন করে অধিক উপার্জন থেকে বঞ্চিত হত। নিয়মিত কাজ করার ফলে গাছগুলি চা পাতা চয়নের জন্য তৈরি হয়ে গেছে এবং শ্রমিকরা সেই পাতি তোলার জন্য অতিরিক্ত উপার্জন করে বোনাস পাচ্ছে। এতে তারা লাভবান হচ্ছে । চা শ্রমিকরা নিয়মিত কাজ করার ফলে এ দুর্যোগের দিনেও এটা দেশের অর্থনীতিতে বিরাট ভ’মিকা পালন করছে ।

এই দুর্যোগ মুহুর্তে যারা সার্বিক সহযোগিতা করেছেন বিশেষ করে বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সরকারী কর্মচারী ও কর্মকর্তাবৃন্দ, সাংবাদিকবৃন্দ, চা বাগানের সাথে জড়িত সংস্থা, টি বোর্ড বাংলাদেশ, বি টি আর আই ও পিডিইউ এর কর্মকর্তাবৃন্দ সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। পরিশেষে বাংলাদেশীয় চা সংসদ ও মালিক পক্ষের সদস্যরা, চা বাগানের সাথে সরাসরি জড়িত ম্যানেজমেন্ট স্টাফবৃন্দ, অন্যান্য স্টাফবৃন্দ ও চা বাগানের সকল শ্রমিকগণ এই মহত কার্যক্রমের জন্য প্রশংসার দাবীদার।
বিশ্বের তথা দেশের বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে আমাদের চা বাগানগুলো এখন পর্যন্ত করোনা মুক্ত থাকার জন্য পরম করুণাময় আল্লাহতাআলার অশেষ শুকরিয়া আদায় করছি।

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশীয় চা সংসদ, সিলেট শাখা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন