।। আব্দুল খালেক ।।
করোনার অভিঘাত অনেক। টেস্ট কিট সংকট। পিসিআর লিমিটেশন। দরিদ্র অসহায়দের খাদ্য সংকট। মাস্ক/হ্যান্ড স্যানিটাইজারের উচ্চমূল্য। পিপিই সংকট । আই সি ইউ, ভেন্টিলেশন,হাসপাতালের বেড সংকট। অক্সিজেন সংকট।
শুধুমাত্র টেস্ট কিট সরবরাহ ছাড়া উপরের সবগুলি করোনাকালীন সময়ে ফেসবুক ভিত্তিক কমিউনিটি সংগঠন সংযোগ : কানেক্টিং পিপল অত্যন্ত সফলতার সাথেই অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু অক্সিজেন সংকট কেবল সংযোগকে নয়, পুরো দেশকে এক নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
অক্সিজেন ছাড়া অন্যান্য সমস্যাগুলো কনজিউমেবল ছিল বিধায় মানুষের আর্থিক সহযোগিতা যথেষ্ট ছিল, সেগুলোতে তুলনামূলক সফল হওয়া গেছে। কিন্তু অক্সিজেনের চাহিদা মেটানো ও অক্সিজেন সরবরাহের প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এসেট ম্যানেজমেন্ট ও টেকনিক্যাল এক্সপার্টাইজ। দেশের এ ক্রান্তলগ্নে, অক্সিজেন সরবরাহে গতিশীলতা বাড়াতে সংযোগ : কানেক্টিং পিপল কাজ করে যাচ্ছে। অক্সিজেন সিলিন্ডার সংগ্রহ ও বিনামূল্যে সেসব রিফিল করে রোগীর কাছে পৌঁছে দেয়া একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। আর এ কাজটি কিভাবে করতে চাই, সেটাতে সাধারন মানুষ কিভাবে যুক্ত হতে পারে, সে আলোচনার অবতারণা করতে এ লেখা। সাধারন মানুষের সমন্বয় ও সংযোগ ছাড়া এ সময় গোটা দেশের করোনাক্রান্ত মানুষের অক্সিজেন চাহিদা মেটানো সম্ভব না। আর এ জন্য আমরা প্রাথমিক পর্যায়ে ১০০ সিলিন্ডার পুল এর একটা প্রজেক্ট হিসেবে শুরু করতে চাই। একটা সিলিন্ডার একজন এর বাসায় সর্বোচ্চ ৩ দিন রাখতে পারবে । নো ইউজ নো স্টে পদ্ধতি তে অপারেট করা হবে।
কিভাবে কাজ করবে এই অক্সিজেন সরবরাহ প্রক্রিয়া :
১) আমাদের একটা ডেডিকেটেড অবশ্যই পেইড টিম থাকবে যাদেরকে সিলিন্ডার হ্যান্ডলিং এবং অপারেট করার উপর ট্রেনিং দেয়া হবে। এই সদস্যরাই আপনার বাড়িতে গিয়ে সিলিন্ডার সেট করে দিয়ে আসবে ডাক্তার এর পরামর্শ অনুযায়ী। এবং অবশ্যই রোগীর অবস্থা যদি অক্সিজেন দেবার মতো অবস্থায় হয় তবেই দেয়া হবে। করোনা হয়েছে, হয়তো স লাগতে পারে ভেবে চাইলে তাদেরকে দেয়া হবে না।
২) একজন রোগীর বাসায় সর্বোচ্চ ২-৩ দিন একটি সিলিন্ডার রাখা যাবে । এর বেশিদিন লাগলে আমরা ধরে নিবো আপনার অক্সিজেনের প্রয়োজন নেই । আমরা সর্বোচ্চ সিলিন্ডার টার্ন এরাউন্ড নিশ্চিত করে আগাতে চাই ।
৩) প্রাথমিক পরিকল্পনার ১০০ সিলিন্ডার দিয়ে আমরা আপাতত ঢাকা শহর ও চট্টগ্রাম শহর এ সেবা দেবার কথা চিন্তা করছি । আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ১০০ সিলিন্ডার নিয়ে কাজ করে সফল হলে পরবর্তীতে আর সিলিন্ডার চাইতে হবে না । সকলে এমনিতেই এগিয়ে আসবে ।
আয়োজনটি সফল করতে যা দরকার :
প্রথমেই আসে কিভাবে সিলিন্ডার সংগ্রহ করতে হবে। সে প্রসঙ্গে আমাদের পরিকল্পনা :
১) সকলের দান : এ ক্ষেত্রে সেই একই আহবান, আপনার বাসার অব্যবহিত সিলিন্ডারটি দয়া করে আমাদেরকে দিন এনং আপনি থাকবেন আমাদের ডোনার লিস্টে । আপনার প্রয়োজন আমাদের কাছে ফার্স্ট প্রায়োরিটি অর্থাৎ আপনার যদি অক্সিজেন সাপোর্ট লাগে তাহলে সর্বপ্রথম আপনাকে সার্ভ করার পর অন্যদের কথা চিন্তা করা হবে।
২) সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ভাড়া/দান: আমরা সংযোগের ব্যানারে প্রধান দুই কোম্পানি লিন্ডে ও স্পেক্ট্রার কাছে আবেদন করবো আপনাদের সিলিন্ডার এভেইলেবল হলে আমাদেরকে দয়া করে কিছু সিলিন্ডার ডোনেট করুন অথবা ভাড়ায় দেন। সংযোগ যেহেতু কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান না এবং এখানে একমাত্র সেবা ব্যাতিত কোনো হিসেব নেই, সকলের ডোনেশন এর টাকাই এতগুলি টাকা এসেট এ বিনিয়োগ করা হয়তোবা সঠিক হবে না । দেশের এই ক্রান্তি লগ্নে সাধারণ মানুষ অর্থ দিয়ে যেমন সাহায্য করছেন, আশা করি কর্তৃপক্ষ ও আমাদের আবেদনে সাড়া দিবেন।
৩) ক্রয়: সবশেষে উপরের একটিও কাজ না করলে সিলিন্ডার ক্রয় করে আগাতে হবে।
লোকবল:
আমরা যে মডেল এ অপারেট করার কথা ভাবসি তাতে আনুমানিক ৬/৭ জন ডেডিকেটেড এবং ট্রেইন্ড পারসন লাগবে যারা বাসায় গিয়ে সিলিন্ডার সেট করে দিয়ে আসবে । মাসিক বেতন এবং যাতায়াতের ভাড়া প্রদান সাপেক্ষে তাদেরকে নিয়োগ দেয়া হবে ।
পিকআপ:
অনেক ভাই পিক দিয়ে সাহায্য করার কথা দিয়েছেন সুতরাং আশা করা যায় সমস্যা হবে না ।
অর্থ:
কি পরিমান অর্থ লাগবে সেটা নির্ভর করছে কিভাবে সিলিন্ডার সংগ্রহ করতে পারছি সেটার উপর । যদি সিলিন্ডার ক্রয় কিংবা সিকিউরিটি মানি জমা দিয়ে ভাড়া নিতে চাই সেক্ষেত্রে ১০০ সিলিন্ডার সংগ্রহ করে ৩ মাস অপারেট করতে আনুমানিক ব্যায় হবে ৪০-৪২ লক্ষ্য টাকা যেটা অনেক ব্যায়বহুল ! সেজন্য নগদ অর্থ দানের চেয়ে সিলিন্ডার দান আমাদের জন্য বেশি হেল্পফুল হবে ।এর সাথে আরো কিছু আনুসাংগিক প্রয়োজনীয়তা থাকবে যেটা আশা করা যাই আমরা ওভারকাম করতে পারবো ইনশাল্লাহ । আমরা অলরেডি প্রায় ১০ টা সিলিন্ডার দান পাওয়ার আশ্বাস পেয়েছি । এখন বাকি সিলিন্ডার এর জন্য আপনাদের সাহায্য বা পরামর্শ চাই ।
সাধারন মানুষের কাছে অনুরোধ :
আবারো যারা সিলিন্ডার কিনে বাসায় রেখে দিয়েছেন তাদের অনুরোধ করে বলছি আমাদেরকে আপনাদের সিলিন্ডারটি দিন এবং এই চ্যালেঞ্জ বোকাবেলায় আমাদের পাশে থাকুন প্লিজ ।
একটা মেডিকেল অক্সিজেন সিলিন্ডার যত ছোটই মনে করেন না কেন প্রেসার থাকে ২০০০ পিএসআই এর উপর। বলতে পারেন ছোটোখাটো একটা বোমা যেটা বিস্ফোরণ ঘটলে আশেপাশে থাকা সবারই জীবন নাস হতে পারে অনায়াসে! আপনার অনুভূতিকে সন্মান জানিয়েই বলছি, কেন এইরকম একটা হ্যাজার্ডাস জিনিস আপনি কিনে ঘরের ভিতর রেখে দিতে চাচ্ছেন? এটা কিনে আপনি কোথায় রাখতে চান যদি এখনই ব্যবহার না করেন? আলমারিতে নিয়ে লক করে রাখার জিনিস তো এটা না।
আপনি কি জানেন বিস্ফোরক অধিদপ্তরের আইন অনুযায়ী সিলিন্ডার যেখানে স্টোর করবেন তার উপর কোনো স্থাপনা থাকতে পারবে না অর্থাৎ একতলা শেড! যদিও এ আইন ব্যাবসায়ীদের জন্য কিন্তু ভয়াবহতা নিশ্চই বুঝতে পারি! সিলিন্ডার ইম্পোর্ট করতে গেলে বিস্ফোরক অধিতপ্তর থেকে দুইবার পারমিশন নিতে হয় একবার এতগুলো সিলিন্ডার আন্তে চাই সেটার, এরপর পোর্ট থেকে ছাড়ানোর আগে সুতরাং বোঝাই যাই কি রকম হ্যাজার্ডাস জিনিস।
করোনা হলে আপনার অক্সিজেন লাগবে এমনটা ভাবার কারণ নাই। অক্সিজেন লাগবে কিনা শুধু ডাক্তাররাই বলতে পারবেন। আপনি নিজেরমত করে ব্যবহার করতে গিয়েত উলটো বিপদ ডেকে আন্তে পারেন তাই না? কি রেট এ নিবেন, কতক্ষন নিবেন এগুলি একমাত্র ডাক্তারই বলতে পারেন। প্রতিদিন যে পরিমান ফোন পাচ্ছি তাতে আমি নিজেই আতঙ্কবোধ করছি! এখনত আর অক্সিজেন এ চাকরি ও করি না। সাহায্য না করতে পারলেও খারাপ লাগসে আবার যে সমস্ত সোর্স এর কাছে সিলিন্ডার আছে জানি তাদের কাছে পাঠাতেও সাহস পাচ্ছি না!!! কিন্তু অবস্থা যাদের সত্যিই ক্রিটিকাল তাদেরকে তো যেকোনো অক্সিজেন নিতেই হবে।
সিলিন্ডার এভেইল্যাবলে সরকার যা করতে পারে:
বর্তমান পরিস্থিতে সিলিন্ডার সংকট কিন্তু একটা পার্টিকুলার সাইজ এর অর্থাৎ ১.৪ কিউবিক মিটার ছোট সিলিন্ডার । এই মুহূর্তে যতগুলি ছোট/মাঝারি সরকারি – বেসরকারি হাসপাতালে এই ছোট সিলিন্ডার ব্যবহার হয় তাদেরকে নির্দেশ দিতে হবে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপ্লাই ইনস্টল করতে হবে । ৯ মিকি বড় সিলিন্ডার এর ব্যাঙ্ক করে প্রতিটি বেড এ পাইপলাইনে সরবরাহ করবে । আর এই নির্দেশ অবশ্যই সরকার থেকে আসতে হবে। বাংলাদেশে বড় অক্সিজেন সিলিন্ডার এর কোনো ক্রাইসিস নাই বা হবেও না কারণ দরকার হলে অন্যান্য সিলিন্ডার যেমন নাইট্রোজেন, আর্গন ইত্যাদি কনভার্ট করে মেডিকেল অক্সিজেন সিলিন্ডার করা সম্ভব । এ ব্যাপারে সরকারের শক্ত উদ্যোগ ছাড়া প্রাইভেট হাসপাতালগুলি সাড়া দিবে না।
লেখক : কেমিকেল ইঞ্জিনিয়ার ও সাবেক প্রোডাক্ট এ্যান্ড প্রাইসিং ম্যানেজার, লিন্ডে