সাত দিনের সময় দিলেন সাংবাদিকরা

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হারুন অর রশিদের দুর্নীতি নিয়ে সংবাদ সম্প্রচার করায় কাফনের কাপড়সহ চিঠি পাঠিয়ে জীবন নাশের হুমকি দেওয়া হয় বৈশাখী টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক  সাইফুল ইসলাম ও রিপোর্টার কাজী ফরিদকে।

|| সারাবেলা প্রতিবেদন, ঢাকা||

বৈশাখী টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ও রিপোর্টার কাজী ফরিদকে হত্যার হুমকিদাতের আইনের আওতায় আনার জন্য সাত দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। শুক্রবার ৫ই ফেব্রুয়ারি রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সার্ক ফোয়ারার মোড়ে ‘সাধারণ সাংবাদিকবৃন্দ’র ব্যানারে মানববন্ধন থেকে এই এ আল্টিমেটাম দেয়া হয়।প্রসঙ্গত, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হারুন অর রশিদের দুর্নীতি নিয়ে সংবাদ সম্প্রচার করায় কাফনের কাপড়সহ চিঠি পাঠিয়ে জীবন নাশের হুমকি দেওয়া হয় বৈশাখী টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক  সাইফুল ইসলাম ও রিপোর্টার কাজী ফরিদকে। চিঠিতে ভিসি হারুণ অর রশিদ ও প্রক্টরকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ ও সজ্জন হিসেবে অভিহিত করে তাদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্প্রচার করায় ‘পরিনতি ভোগ করতে হবে’ এবং সংবাদ সংশ্লিষ্টদেরকে ‘রাস্কেল’ বলে গালিও দেয়া হয়। এরপরেই ক্ষোভে ফেটে পরে সাংবাদিক সমাজ। তারই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার এই কর্মসূচি পালন করা হলো।

ছবি: সংবাদ সারাবেলা

মানববন্ধনে সাংবাদিক নেতারা বলেছেন, হুমকিদাতাদের যদি আইনের আওতায় না নিয়ে আসা হয় তাহলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ঘেরাওসহ কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।

মানবন্ধনে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু বলেন, ‘আজকে আমাদের সহকর্মী সাইফুল ইসলাম ও কাজী ফরিদের বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এতে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা যেমন তাদের পরিবারে, তেমনি সমাজ ও রাষ্ট্রেও ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। আমরা এই মৃত্যু পরোয়ানা নিয়ে সাংবাদিকতা করতে আসিনি। এ ধরনের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে, হুমকি-ধামকি দিয়ে আসলে এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক চাপ হয়তো তৈরি করা সম্ভব। কিন্তু স্বাধীন সংবাদপত্র এবং সংবাদ বিকাশের পথ রুদ্ধ করা কঠিন। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন, জঙ্গীবাদ, সাম্প্রাদায়িক, অপশক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলনে সাংবাদিক সমাজ বরাবরই লড়াকু ভূমিকা পালন করেছেন। কোনো ধরনের রক্তচক্ষু আমাদের অগ্রযাত্রাকে স্তব্ধ করতে পারেনি। আগামীতেও পারবে না’।

ছবি: সংবাদ সারাবেলা

তিনি বলেন, ‘এখনো আমরা দেখি সেই ঘোড়াঘাট থেকে শুরু করে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত দুর্বৃত্ত চক্র সাংবাদিকদের কণ্ঠ বন্ধ করতে চায়। রাজধানীতেও তারা তাদের অভয়অরন্য তৈরি করেছে। গাজীপুর থেকে চিঠির মাধ্যমে মৃত্যু পরোয়ানার চিঠি পাঠিয়ে দেওয়া হয়, আমরা এর ধিক্কার জানাই’।

একই মানবন্ধনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের কোষাধাক্ষ দীপ আজাদ বলেন, ‘রাজাকার, খুনি-সন্ত্রাসীদের তালিকা হয়। এখন গণমাধ্যমের শত্রুদের তালিকা হওয়া দরকার। মানুষ জানুক কারা স্বাধীন গণমাধ্যমকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়, কারা অনিয়ম-দূর্নীতির খবর বন্ধ করতে চায়। তাদের নাম গুলো জানুক।

তিনি বলেন, ‘যারা বৈশাখী টিভি’র সাইফুল আলম ও কাজী ফরিদকে কাফনের কাপড় পাঠিয়েছে তাদের ব্যাপারে যদি দৃশ্যমান ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তাহলে আমরা আবার কর্মসূচি দেবো। সে কর্মসূচি এমন হতে পারে যে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণাল ঘেরাও করবো, আইজি ও সংশ্লিষ্টদের কাছে যাবো। আমরা বিচারের জন্য এখানেই কিন্তু থেমে থাকবো না’।

ছবি: সংবাদ সারাবেলা

এ সময় অন্য বক্তারা বলেন, এটি একটি ন্যক্কারজনক ঘটনা। হুমকি ধামকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে সাংবাদিকদের দমিয়ে রাখা যাবে না। সাংবাদিকরা সব সময় সত্য ও ন্যায়ের পথে আছে। মিথ্যার সাথে কখনো আপোস করবে না।

পরে মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল করেন সাংবাদিকরা।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, ডিইউজ’র যুগ্ম সম্পাদক খায়রুল আলম, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আকতার হোসেন, সাবেক নির্বাহী পরিষদ সদস্য গোলাম মুজতবা ধ্রুব, ক্র্যাব এর সহ সভাপতি নিত্য গোপাল তুতু, একুশে টেলিভিশনের চীফ রিপোর্টার দীপু সারোয়ার, ৭১ টেলিভিশনের রিপোর্টার নাদিয়া শারমিন প্রমুখ।

সংবাদ সারাদিন