মৃত্যু-ধ্বংসেও অপ্রতিরোধ্য সিলেটের পাথরখেকোরা

কোন কিছুতেই থামছে না পাথর তোলার যজ্ঞ, এক টিলাতেই ক্ষতি প্রায় ২৫৩ কোটি টাকা, পাথর তুলতে গিয়ে প্রাণ গেছে ৭৬ জনের, রোপওয়েও হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত, এবং হুমকিতে ধলাই নদী ও এর আশপাশ

|| তুহিন আহমদ, সিলেট ||

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ পাথর কোয়ারি। অবৈধ পাথর উত্তোলন, শ্রমিকের মৃত্যু, অভিযান, হামলা-মামলা, পরিবেশ আন্দোলন কর্মীদের বিরোধীতা কিংবা উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা সবই আছে। তারপরও থেমে নেই পাথর তোলার যজ্ঞ। কখনও দিনের আলোতে আবার কখনও রাতে আধারে চলে এই পাথর তোলার কাজ। এলাকার পরিবেশ প্রতিবেশ ধ্বংস করে এভাবে পাথর তোলায় উপজেলার স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী কিংবা প্রভাবশালী সবই একই সুতোয় গাঁথা। সবাই চান পাথর তোলার কাজটি চলতেই থাকুক। বৈধ কিংবা অবৈধ উপায়ে হলেও পাথর কোয়ারি চালু রাখতে মরিয়া সকলেই।

কোন কিছুতেই থামছে না পাথর তোলার যজ্ঞ
শ্রমিকের মৃত্যু, পরিবেশের ক্ষতি কিংবা ধলাই নদীর অব্যাহত ভাঙনে ঘরবাড়ি হারানো মানুষের কান্নাও তাদেরকে থামাতে পারছে না। পারছে না পুলিশ-উপজেলা প্রশাসন কিংবা পরিবেশ অধিদফতরও। প্রথমদিকে প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে পাথর কোয়ারি বন্ধ করা হলে তা খোলার দাবিতে উপজেলার ভেতরে বিভিন্ন স্থানে শ্রমিকদের দিয়ে বিক্ষোভ মানববন্ধন করাতো পাথরখেকোরা। পরে উপজেলার গন্ডি পেরিয়ে জেলা শহরেও বিক্ষোভ করানো হয়। সম্প্রতি তারা সিলেট নগরের চৌহাট্টাস্থ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের সামনে জড়ো হয়ে মানববন্ধন করানো হয়েছে শ্রমিকদের দিয়ে।

ছবি: সংগৃহিত

মানববন্ধন থেকে পাথর কোয়ারি খুলে দেয়ার দাবিতে আল্টিমেটামও দেওয়া হয়েছে। যেখানে প্রতিবছর পাথর চাপায় শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় কোনো বিচার পায়নি শ্রমিকের পরিবার। সেই শ্রমিকরা আবার কোয়ারি খুলে দেওয়ার দাবিতে সিলেট নগরে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে। পরিবেশ কর্মীরা বলছেন, শ্রমিকদের অন্য কাজের ব্যবস্থা না করে এভাবে মৃত্যুপুরি পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়ার দাবিতে তাদেরকে ব্যবহার করছে দুর্বৃত্ত ব্যবসায়ীরা।

পাথর উত্তোলন বন্ধে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে উপজেলা প্রশাসন অস্থায়ী শ্রমিকদের পাথর কোয়ারি থেকে নিজ নিজ এলাকায় পাঠিয়ে দেয়। এরপরও স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চলছিল পাথর উত্তোলন। তবে সম্প্রতি প্রশাসন কঠোর হলে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় পাথর উত্তোলন। এরমধ্যে শাহ আরেফিন টিলা, ধলাই নদী এবং রোপওয়ে এলাকায় পাথর কোয়ারিগুলো থেকে পুরোপুরি পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে যায়। পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকেই উপজেলার চিহ্নিত পাথরখেকোরা স্থানীয় শ্রমিকদের নিয়ে মাঠে নেমেছেন।

বৃহত্তর সিলেট পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব মো. নুরুল আমিন এ প্রসঙ্গে বলেন, সিলেট জেলায় ছয়টি কোয়ারি রয়েছে। এসব কোয়ারির সবগুলোতেই চার থেকে পাঁচশোর মত গর্ত তৈরি হয়। প্রতিটি গর্তে কাজ করেন প্রায় আড়াইশো শ্রমিক। এদের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকরাও রয়েছে। পাশাপাশি কারখানা থেকে পরিবেশকরা জড়িত। কোয়ারির শ্রমিকরা বিভিন্ন ভাবে একজন আরেকজনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আমাদের একটাই দাবি সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলনের অনুমতি দিয়ে কোয়ারিগুলো খুলে দেওয়া হোক। প্রয়োজন হলে প্রশাসন, ব্যবসায়ী ও শ্রমিকসহ একটি সমন্নয় কমিটি গঠন করা হোক।

শ্রমিক আন্দোলনকে ‘লোক দেখানো’ জানিয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সমন্বয়ক আব্দুল করীম ক্বিম সংবাদ সারাবেলাকে বলেন, পাথর কোয়ারিতে জড়িতরা শত কোটি টাকা লুটপাট করেছে। পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের কপালে এখন ভাঁজ পড়েছে। তাদের স্বার্থের কারণে বর্তমানে তারা গুটিকয়েক শ্রমিককে নিয়ে শহরে পর্যন্ত চলে এসেছে। অতীতে সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন করার কথা উল্লেখ করে বোমা মেশিন দিয়ে তারা পাথর উত্তোলন করে এসেছে। এখন তারা আবারো সনাতন পদ্ধতির কথা এনে আন্দোলন করছে। পাথর চক্রের স্বার্থে আঘাত পড়েছে। সরকার পরিবেশসহ সার্বিক দিক বিবেচনা করেই পাথর উত্তোলন বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাও বেশিদিন হয়নি। সরকারের উচিত শুরুতেই তাদের এই আন্দোলন কঠোর হাতে দমন করা।

ছবি: সংগৃহিত

এদিকে পাথর শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন গোয়াইনাঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাজমুস সাকিব ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন আচার্য্য। তিনি সংবাদ সারাবেলা’কে বলেন, আমরা ইতোমধ্যে একটি প্রস্তাবণাও পাঠিয়েছি। তাদেরকে বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণ দেওয়া, বিভিন্ন কাজে জড়িত হওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ঋণ দেওয়ার কথাও বলেছি। তবে ২০১৭ সাল থেকে পাথর কোয়ারি বন্ধ থাকার কারণে এবং রেজিস্ট্রার্ড কোনো পাথর কোয়ারি না থাকায় কত সংখ্যক শ্রমিক কাজের সঙ্গে জড়িত সেই সংখ্যা পাওয়াটা কঠিন।

আর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন আচার্য্য সংবাদ সারাবেলা’কে বলেন, আমাদের এই উপজেলায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমরা শ্রমিকদের কৃষিখাতে উৎসাহিত করেছি। বিশেষ করে সরকার থেকে দেওয়া সবধরণের ভাতায় তাদেরকে অন্তুর্ভূক্ত করা হয়েছে। এদিকে আমাদের পর্যটন কেন্দ্র সাদাপাথরেও তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি আমাদের এখানে যে হাইটেক পার্ক নির্মাণ করা হচ্ছে ওইখানে আমাদের এলাকার মানুষদের যাতে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করা যায় সেই বিষয়েও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

এক টিলাতেই ক্ষতি প্রায় ২৫৩ কোটি টাকা
পাথর উত্তোলনকারী বশির এন্ড কোম্পানির মালিক কাঠালবাড়ি গ্রামের জিয়াদ আলীর ছেলে মোহাম্মদ আলী ২০০৪ সালে বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে ইজারা নেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শাহ আরেফিন টিলা। মোট ১৩টি শর্তে ২০০৪ সালের ৫ই এপ্রিল তারিখ থেকে ৪ঠা এপ্রিল ২০০৫ ইংরেজি তারিখ পর্যন্ত বাংলাদেশ খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো (বিএমডি) থেকে ৫৫ নম্বর জে এল এর চিকাডুরা মৌজার ১ নম্বর খতিয়ানে ৯৪ নম্বর দাগে দরগাহ শ্রেণি হিসেবে বর্ণিত এ টিলার ২৫ হেক্টর জায়গার এক বছরের জন্য লিজ নেন মোহাম্মদ আলী। কিন্তু লিজের শর্ত ভঙ্গের কারণে চুক্তির ৫ মাস পরই সে ইজারা বাতিল করে বিএমডি।

তবে ইজারা বাতিল হলেও শাহ আরেফিন টিলা নিজ দখলে রাখেন মোহাম্মদ আলী। স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে উত্তোলন করতে থাকেন পাথর। এতে সবুজ-শ্যামল আর ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যপূণ শাহ আরেফিন টিলা এখন ছোটোখাটো নদীতে পরিণত হয়েছে। কোথাও নেই টিলার চিহ্নমাত্র।

ছবি: সংগৃহিত

এদিকে সর্বশেষ ২০০৯ সালে শাহ আরেফিন টিলার পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করতে সিলেটের তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. শহিদুল ইসলামকে আহ্বায়ক ও পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেটের তৎকালীন উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মুহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলামকে সদস্য সচিব করে ‘ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ কমিটি’ গঠন করা হয়। পরবর্তী সময়ে ২০০৯ সালের ১১ই নভেম্বর এ কমিটি পশুপাখি ও বন্যপ্রাণী অস্তিত্ব বিলীন করে জীববৈচিত্র ধ্বংসসহ বিভিন্ন অপরাধের কথা উল্লেখ করে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে ৫ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। সে প্রতিবেদনে শাহ আরেফিন টিলায় সরকারের প্রায় ২৫২ কোটি ৭৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা দেখানো হয় এবং এ টাকা আদায়ের সুপারিশ করা হয়। এই টাকাও আদায় করতে পারেনি পরিবেশ অধিদপ্তর। বর্তমানে এই প্রতিবেদনটি তদন্তের জন্য একটি সরকারি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেটের বিভাগীয় পরিচালক এমরান হোসেন সংবাদ সারাবেলা’কে বলেন, শাহ আরেফিন টিলায় সরকারের যে ক্ষতি হয়েছে ওই বিষয়ে তদন্তের জন্য একটি সরকারি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা সবধরণের কাগজাদি তাদেরকে হস্তান্তর করেছি। তারাও বর্তমানে তদন্তের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

পাথর তুলতে গিয়ে প্রাণ গেছে ৭৬ জনের
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা) সিলেটের তথ্যমতে, ২০১৭ সালের ২৩শে জানুয়ারি শাহ আরেফিন টিলায় একসঙ্গে ছয়জনের প্রাণহানি ঘটনার পর থেকে সিলেটের সব পাথর কোয়ারিতে শ্রমিক হতাহত হওয়ার ঘটনা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। সবশেষ চলতি বছরের ২০শে জানুয়ারি পর্যন্ত সিলেটে যত্রতত্র পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে ৭৬ জন পাথর শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো ২১ জন।

ছবি: সংগৃহিত

বেলা আরও জানায়, পাথরশ্রমিক পরিবার ও ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া তথ্যে ৭৬ জনের প্রাণহানির তথ্য পাওয়া গেলেও সরকারি হিসাবে এ সংখ্যা মাত্র ৩৭। এরমধ্যে বেশিরভাগ প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে কোম্পানীগঞ্জের শাহ আরেফিন টিলায়। এছাড়াও ভোলাগঞ্জ, গোয়াইনঘাটের জাফলং, বিছনাকান্দি, জৈন্তাপুরের শ্রীপুর, কানাইঘাটের লোভাছড়া ও বাংলাটিলা পাথর কোয়ারি এলাকায়ও পাাথর চাপায় শ্রমিকরা নিহত হয়েছে।

সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আসলাম উদ্দিন জানান, পাথর কোয়ারিগুলোতে শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনা দুঃখজনক। পাথর কোয়ারিতে শ্রমিক মৃত্যু নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে কথা হয়েছে। শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করে নেপথ্যের পাথরখেকোদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তারমতে ঝুঁকিপূর্ণ এ পেশা থেকে শ্রমিকরা নিজেদের সরিয়ে নিলে এমন অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব।

রোপওয়েও হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত
এদিকে, ১৯৬৪-১৯৬৯ সালে কোম্পানীগঞ্জ থেকে ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে পাথর পাঠানোর জন্য নির্মিত হয়েছিল রোপওয়ে। তবে ১৯৯৪ সালের পর থেকে এই পথ বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে সকল কার্যক্রমও। তবে সকল কার্যক্রম থেমে গেলেও থামেনি পাথর উত্তোলন। সরকারি দলের নেতা, পুলিশ, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা মিলে বছরের পর বছর ধরে রোপওয়ে থেকে পাথর উত্তোলন করছেন। আর পাথর উত্তোলনের এই মহাযজ্ঞে রোপওয়ে হারিয়েছে প্রায় ৩২ একর জমি। ৪২ একর জমির মধ্য বর্তমানে ধলাই নদীর মাঝখানে টিলার মতো রয়েছে এক টুকরো ভাসমান ভূমি। সব মিলিয়ে বর্তমান ভূমির পরিমাণ আনুমানিক ১০ একর। বাকি সবটুকুই বিলীন হয়েছে নদীগর্ভে।

ছবি: সংগৃহিত

তবে স্মৃতি কিংবা ইতিহাসের সাক্ষী রোপওয়ের বর্তমান ১০ একর ভূমিও রয়েছে হুমকিতে। কারণ এ ভূমির দিকেই এখন পাথরখেকোদের চোখ। পাথর-খেকোদের ক্রমাগত পাথর উত্তোলনের ফলে প্রতিনিয়তই কমছে ভূমির পরিমাণ। পাথর উত্তোলনের নামে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চললেও নির্বিকার ছিল স্থানীয় প্রশাসন।

তবে বাংলাদেশ রেলওয়ের সহকারী সচিব (ভূমি) মো. দুলাল মিঞা জানান, সরকারি ভূমির রক্ষণবেক্ষণ করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। কারণ কোনোভাবেই সরকারি সম্পত্তি নষ্ট হয়ে দেয়া যায় না। এজন্য যদি কোম্পানীগঞ্জের রোপওয়ের বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।

হুমকিতে ধলাই নদী ও এর আশপাশ
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ভারতের মেঘালয় ঘেঁষা ধলাই নদীও বাদ যায়নি পাথর খেকোদের আগ্রাসন থেকে। এ নদী থেকে বালু-পাথর উত্তোলনের ফলে নদীপাড়ে বাড়ছে কান্না। সবশেষ মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসনের জন্য তৈরি করা গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পও ধলাই নদী গিলে খেয়েছে। এ গ্রামের অর্ধেক নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে আর বাকি অর্ধেক বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। একই অবস্থা ধলাই ব্রিজেরও। এ ব্রিজের নিচ থেকে বালু-পাথর উত্তোলনের ফলে এটিও হুমকির মুখে রয়েছে। যেকোনো সময় ব্রিজটি ধ্বসে পরতে পারে। পাশাপাশি এই নদীর আশপাশের স্থাপনাগুলোও অনেকটা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

ছবি: সংগৃহিত

মূলত সরকারি দলের নেতা, প্রশাসন ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করেই ধলাই নদীতে চলেছিল পাথর উত্তোলন। আর এতেই বিপর্যস্ত হয়েছে পরিবেশ, বিলীন হচ্ছে কৃষি জমি, বাসস্থান হারিয়েছেন স্থানীয়রা। তাদের অভিযোগ দিনের বেলা প্রশাসন ঝটিকা অভিযান চলালেও অবৈধ পাথর উত্তোলনকারীরা আগে ভাগেই খবর পেয়ে সটকে পড়ে যান। পরে রাতের আধারে নির্বিঘ্নে চলে উত্তোলন।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার সংবাদ সারাবেলা’কে বলেন, বাংলাদেশের নদী রক্ষায় প্রত্যেককেই লেগে থাকতে হবে। আমরা অনেক দখলে থাকা নদীগুলোকে উদ্ধার করেছি। পাশাপাশি সরকার থেকেই কঠোরভাবেই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে বালু উত্তোলনে। সিলেটের ধলাই নদী ভাঙনের কারণে যেসব স্থাপনা হুমকির মুখে পড়েছে সেই বিষয়ে আমরা খুব দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা শিগগিরই নদী রক্ষার বিষয় নিয়ে সিলেটে কর্মশালা করব।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন