বন্দী কিশোর মুক্ত হলেন দশ মাস পর

কারাফটক থেকে বেরিয়ে আসার পর বেলা সাড়ে ১২টার দিকে একটি সাদা রঙের গাড়িতে করে তিনি চলে যান। এ সময় কারাগারের বাইরে থাকা সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি তিনি।

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, গাজীপুর ||

দশমাস পর কারাগার থেকে মুক্ত হলেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেফতার কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার -২ এর সুপার আবদুল জলিল জানান, বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১২টার দিকে কিশোরকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। বলেন, “জামিনের কাগজপত্র আমরা ১১টার দিকে পেয়েছি। সেগুলো যাচাই-বাছাই শেষে কিশোরকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।”

কিশোরের মুক্তির সময় তার কয়েকজন আত্মীয়-বন্ধু কারাগারের বাইরে অপেক্ষায় ছিলেন। কারাফটক থেকে বেরিয়ে আসার পর বেলা সাড়ে ১২টার দিকে একটি সাদা রঙের গাড়িতে করে তিনি চলে যান। এ সময় কারাগারের বাইরে থাকা সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি তিনি।

বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ বুধবার কিশোরকে ছয় মাসের জন্য জামিন দিলে তার মুক্তির পথ খোলে।

একই মামলায় কিশোরের সঙ্গে গ্রেপ্তার লেখক মুশতাক আহমেদ গত ২৫শে ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে মারা যান। কিশোরের সঙ্গে মুশতাকের জন্যও জামিন আবেদন করা হয়েছিল হাই কোর্টের ওই বেঞ্চে। কিন্তু শুনানির আগেই কারাভেতরেই তিনি মারা যান।

প্রসঙ্গত করোনাভাইরাস অতিমারির মধ্যে গতবছর ৫ই মে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর এবং অনলাইনে লেখালেখিতে সক্রিয় ব্যবসায়ী মুশতাক আহমেদকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। পরদিন ‘সরকারবিরোধী প্রচার ও গুজব ছড়ানোর’ অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তাদের বিরুদ্ধে রমনা থানায় মামলা করা হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানার এসআই জামশেদুল ইসলাম তখন বলেছিলেন, কার্টুনিস্ট কিশোর তার ‘আমি কিশোর’ নামের ফেইসবুক একাউন্টে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সরকারের ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন সমালোচনামূলক কার্টুন-পোস্টার পোস্ট করতেন। আর মুশতাক তার ফেইসবুক অ্যাকাউন্টে কিশোরের সেসব পোস্টের কয়েকটি শেয়ার করেন।

র‌্যাব-৩ এর ডিএডি আবু বকর সিদ্দিকের করা এই মামলায় রাষ্ট্রচিন্তার সংগঠক দিদারুল ভূইয়া এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নানকেও গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে এ দুজন জামিনে মুক্তি পেলেও কিশোর ও মুশতাকের জামিন হয়নি।

এ মামলায় আসামির তালিকায় মুশতাক, কিশোর, দিদার, মিনহাজের সঙ্গে আরও ছিলেন নেত্র নিউজের সম্পাদক সুইডেন প্রবাসী তাসনিম খলিল, জার্মানিতে থাকা ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক শাহেদ আলম, হাঙ্গেরি প্রবাসী জুলকারনাইন সায়ের খান (আল জাজিরার প্রতিবেদনের স্যামি), আশিক ইমরান, স্বপন ওয়াহিদ ও ফিলিপ শুমাখার।

তদন্তের পর শুধু মুশতাক, কিশোর ও দিদারকে আসামি করে গত জানুয়ারিতে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় রমনা থানা পুলিশ। বাকি আট আসামিকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে গত ১০ই ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আসসামছ জগলুল হোসেন এ মামলায় অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন।

সেই দায়িত্ব পাওয়ার পর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) উপপরিদর্শক ও মামলার নতুন তদন্ত কর্মকর্তা মো. আফছর আহমেদ গত ২৩শে ফেব্রুয়ারি কিশোর ও লেখক মুশতাক আহমেদের তিন দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেছিলেন। সে বিষয়ে শুনানি করে ঢাকার একজন মহানগর হাকিম গত ২৮শে ফেব্রুয়ারি কিশেরকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন নাকচ করে দেন। আর এ শুনানির আগেই ২৫শে ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে বন্দি অবস্থায় মারা যান মুশতাক।

মুশতাকের মৃত্যুতে প্রতিবাদ হচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি নতুন করে জোরালো হয়ে উঠেছে। কারাগারে বন্দি অবস্থায় মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনাকে ‘মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন’ হিসেবে বর্ণনা করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।

তবে কারাগারে মুশতাকের ‘স্বাভাবিক মৃত্যু’ হয়েছে বলে জানানো হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে।

সংবাদ সারাদিন