পঞ্চমদফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কুড়িগ্রামের কৃষকরা চান প্রণোদনার টাকা

সবশেষ লাগানো আমন নষ্ট হওয়ায় সামনের দিনগুলো কীভাবে পার করবেন তা জানা নেই তাদের। এই পরিস্থিতিতে করোনাকালে দেওয়া রাষ্ট্রের প্রণোদনার টাকাই তাদের ভরসা।

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম ||

আবারও বন্যায় পড়েছে কুড়িগ্রামের মানুষ। এনিয়ে ৫ বার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা আর আশায় বুক বাধতে পারছেন। চলতি বন্যায় পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে সবশেষ লাগানো আমন ধান। এরআগেও তিন দফা বন্যায় তলিয়ে যায় তিনবার লাগানো আমনের আবাদ।সবশেষ লাগানো আমন নষ্ট হওয়ায় সামনের দিনগুলো কীভাবে পার করবেন তা জানা নেই তাদের। এই পরিস্থিতিতে করোনাকালে দেওয়া রাষ্ট্রের প্রণোদনার টাকাই তাদের ভরসা।

এরআগে কৃষি নির্ভর পরিবারগুলো ধারদেনা ও ঋণ করে ৪র্থ দফা বন্যার পর আমন আবাদ করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু ৫ম দফা বন্যার ফলে ধরলা নদী তীরবর্তী এলাকার ৪ উপজেলার কৃষকের এখন মাথায় হাত। নিজেদের খাবার কিভাবে জুটবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা।

এছাড়াও আমন ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় নিজেরাতো বটেই সেইসঙ্গে গবাদি পশুর খাবার যোগানেও খাবি পাচ্ছেন না তারা। এ অবস্থায় তারা চাইছেন রাষ্ট্রের দেওয়া প্রণোদনার টাকা।

এদিকে, জেলা কৃষি বিভাগ মনে করে বন্যার কারনে জমিতে পলি পড়ায় এবার আমনের বাম্পার ফলন হবে। এ কারণে কৃষকদের ঘাটতি পুষিয়ে নেয়াও সম্ভব হবে। এছাড়াও সরকারি দফতরে ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য সহযোগিতা চাওয়ার পাশাপাশি পরিত্যক্ত জমিতে বিকল্প ফসল আবাদের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।

জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি বছর প্রথম দফা বন্যায় তেমন ক্ষতি না হলেও দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় জেলায় ১৭ হাজার ৫৫৬ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে ডুবে যায়। পানি নেমে যাওয়ার পর ১১হাজার ৬৬২হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এরমধ্যে আমন বীজতলা ১হাজার ৪০৯হেক্টর, আউশ ৫হাজার ২১৭হেক্টর, সবজি ৯৫৩হেক্টর, পাট ৯হাজার ২৩৫হেক্টর, তিল ৩০৫হেক্টর, মরিচ ২০৫হেক্টর ও চিনা ১৪০হেক্টর।

দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফা দুইয়ে মিলে ১লাখ ৩৪হাজার ৮৫৮জন কৃষকের মোট ১৪০কোটি ৬৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তৃতীয় দফা বন্যা শেষে জেলার ২৭হাজার ৭৬১জন কৃষককে সবজি বীজ, ১০৫টি কমিউনিটি বীজতলা ও শতাধিক ভাসমান বীজতলা এবং ১১২টি ট্রে বীজতলা তৈরি করে কৃষকদের বিনামূল্যে আমন চারার যোগান দেওয়া হয়। কৃষকরা নতুন করে আমন ধান চাষ শুরু করার দু’সপ্তাহের মধ্যে আবার বন্যা হলে আমনের আবাদ, মাসকালাই, চিনা, বাদাম ও শাকসবজি সম্পূর্ণরুপে পানিতে তলিয়ে যায়।

উলিপুরের বজরা ইউনিয়নের চর বজরা গ্রামের কৃষক কাসেম জানান, বন্যা ও নদী ভাঙনে ৭ একর জমি নদীতে চলে গেছে। ধারদেনা করে ৩৫ শতক জমিতে আমন আবাদ করেছি। বন্যায় সেগুলোও নষ্ট হয়ে গেছে। এখন কি করব জানিনা।

কৃষি বিভাগ আরো জানায়, চতুর্থ ও পঞ্চম দফা বন্যায় ক্ষতির পরিমান নির্ধারণ করা না হলেও সেপ্টেম্বরের ২ দফা বন্যায় ১৯ হাজার ২৩ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে যায়। এরমধ্যে সদ্য লাগানো আমনের আবাদই রয়েছে ১৮ হাজার ৮২০ হেক্টর। সবচেয়ে বেশি আমনের ক্ষতি হয় নাগেশ্বরীতে। এই এলাকায় ৬হাজার ৫৫হেক্টর জমির ফসলের বেশীর ভাগই এখনও পানিতে।

কৃষি বিভাগ বলছে, এবার আমনের ক্ষতি বেশি হয়েছে। এ অবস্থায় পুঁজি হারানোর শঙ্কায় থাকা কৃষকরা সরকারি সহায়তা না পেলে আগামি মৌসুমে কোন আবাদই করতে পারবেন না। এ প্রসঙ্গে জেলা কৃষি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক শামসুদ্দিন মিয়া জানান, ৫ম দফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য কোন প্রকার প্রণোদনা পাওয়া যায়নি। তবে কৃষকদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন