দিনে দুপুরে খুন হলেন বগুড়া জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা মিস্টার

|| অনলাইন প্রতিনিধি, বগুড়া ||

খুন হলেন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের বগুড়া জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আবু হানিফ ওরফে মিস্টার। শুক্রবার জুমার নামাজের সময়ে মসজিদের অজুখানার কাছে তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এলাকার আধিপত্য নিয়ে প্রতিপক্ষের লোকজন মিস্টারকে খুন করেছে বলে ধারণা করছে পুলিশ।

পুলিশের তালিকাভূক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী মিস্টার কমপক্ষে ৫ টি হত্যা মামলার প্রধান আসামী। শাবরুলের চাতাল ব্যবসায়ী দুখু মিয়া, ফুলতলার ৪ যুবলীগ নেতা শাহীন, মজনু, মজনুর ভাতিজা নাহিদ ও বুশ হত্যা মামলার প্রধান আসামী ছিলেন তিনি।

বিগত পৌরসভা নির্বাচনে ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে প্রার্থী ছিলেন মিস্টার। আগামী নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হওয়ার আগাম ঘোষণা দিয়ে রেখেছিলেন। স্থানীয়রা বলছেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হওয়ার পর থেকেই সামান্য ট্রাক ড্রাইভারের ছেলে মিস্টারের শণৈই অর্থবিত্ত বাড়তে থাকে। একইসঙ্গে প্রভাব প্রতিপত্তি বাড়াতে একপ্রকার বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তিনি। জোর করে স্থাণীয় বেশ কয়েকটি মাদ্রাসা, মসজিদ ও স্কুল কমিটির সভাপতিও বনে যান মিস্টার।

যুবলীগের স্থানীয় কয়েকজন নেতার মৃত্যুর পর শাকপালা-ফুলতলা-মাঝিড়াসহ শাজাহানপুর উপজেলার বেশিরভাগ এলাকায় একক আধিপত্য কায়েম করেন মিস্টার। এরপর শুন্য থেকে যাত্রা শুরু করে মাত্র ৭ থেকে ৮ বছরেই কোটিপতি বনে যান। মাত্র সপ্তম শ্র্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করলেও গতবছর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের বগুড়া জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয় তাকে। এরপরই শাজাহানপুর উপজেলায় আওয়ামী নেতৃত্বের শীর্ষে চলে আসেন তিনি।

এছাড়াও গেল কয়েক বছর ধরেই শাজাহানপুর উপজেলার মাঝিড়াহাট, রাণীরহাট, জামগ্রামহাট, খরনাহাটসহ বেশ কয়েকটি হাটের ইজারা তিনিই নিতেন। এসব নিয়ে তার বিরুদ্ধে স্থানীয় ব্যবসায়ী, রাজনীতিক ও নিহত যুবলীগ নেতাদের পরিবারের ক্ষোভ-সংক্ষোভ থাকলেও কিছু বলবার সাহস করতো না কেউ।

স্থানীয়রা জানান, এক কন্যা সন্তানের বাবা মিস্টার অর্থবিত্ত আর ক্ষমতার প্রভাব নিশ্চিত করবার পর থেকেই বেশ ‘পরহেজগার’ হয়ে উঠেছিলেন। ওয়াক্তের নামাজ পর্যন্ত মসজিদে গিয়েই পড়তেন। শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে শাকপালা বাসস্ট্যান্ড জামে মসজিদে জুমআর নামাজ পড়তে যান। অজুখানার কাছে পৌঁছলে মোটরসাইকেল করে আসা দুর্বৃত্তরা পেছন থেকে অতর্কিত হামলা চালায় তার ওপর। ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার মাথায় ও পেটে আঘাত করে পালিয়ে যায় তারা। আহত মিস্টারকে দ্রুত শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল (শজিমেক) কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য শজিমেক হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।

পুলিশ বলছে, ঘটনার সময় আশেপাশের দোকানপাট খোলা থাকলেও আতঙ্ক আর ভয়ে সব দোকানপাট বন্ধ করে চলে যান দোকানিরা। যে কারণে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনো প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য নিতে পারেনি পুলিশ। জেলা পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

এদিকে মিস্টার হত্যার তীব্র নিন্দা ও খুনীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবী জানিয়েছেন, বগুড়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ভিপি সাজেদুর রহমান সাহীন ও সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার রহমান শান্ত।

বগুড়ার শাজাহানপুর থানার ওসি (তদন্ত) আমবার হোসেন জানান, হত্যার বিষয়ে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতারে পুলিশ মাঠে নেমেছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন