|| সারাবেলা প্রতিনিধি, জয়পুরহাট ||
জয়পুরহাটে পলিকাদোয়া মহিলা দ্বি-মূখী দাখিল মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান টিটোর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে আটজন সদস্য পদত্যাগ করেছেন। এদিকে, মাদ্রাসার সুপার আ.ন.ম. নুর হোসেনসহ শিক্ষক-কর্মচারীদের ব্যাপক অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, দায়িত্বের অবহেলার অভিযোগ তুলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে এমপিও বাতিলের আবেদন করেছে ওই মাদ্রাসার সভাপতি। এতে ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাথী, অভিভাবক ও এলাকাবাসীদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
সংবাদ সারাবেলার অনুসন্ধান ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৮০ সালে স্থানীয় গণ্যমান্য শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের সহযোগিতায় জয়পুরহাট সদর উপজেলার বানিয়াপাড়া এলাকায় পলিকাদোয়া মহিলা দ্বি-মূখী দাখিল মাদ্রসা প্রতিষ্ঠিত হলেও ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠানটি এমপিও ভুক্তি করা হয়। এ প্রতিষ্ঠানে ১৫ জন শিক্ষক, ৪ জন কর্মচারী আছে এবং মাসে ৪ লক্ষাধিক টাকা সরকার থেকে বেতন পান তারা। এরপর দেড় বছর আগে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও জেলা পরিষদ সদস্য মিজানুর রহমান টিটো। এরপরে নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ নিয়ে বিরোধের জের ধরে সভাপতি ওই মাদ্রাসার শিক্ষকদের বেতন বিলের নিয়ম মাফিক সহি স্বাক্ষর করে না। অনাকাঙ্খিতভাবে ২৫-৩০ জন উগ্রপন্থি/উশৃঙ্খল লোক সঙ্গে নিয়ে মিটিংয়ে উপস্থিত হওয়া এবং তাদের দিয়ে শিক্ষাঙ্গনের ঘরে বাইরে নানা ধরনের পাইচারী ও ধুমপান করে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট সহ প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করায় ওই কমিটির ১০ জনের মধ্যে দাতা সদস্য, অভিভাবক সদস্য, সাধারণ শিক্ষক সদস্য, সংরক্ষিত মহিলা শিক্ষক সদস্য সহ আট জন প্রতিষ্ঠানের সুপারটেনডেন্ট বরাবর আগস্ট মাসে পদত্যাগ পত্র দিয়েছেন এবং জয়পুরহাট নোটারী পাবলিক কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে ২৭ অক্টোবর এফিডেভিট করে ঘোষণাও দিয়েছেন এবং জাতীয় দৈনিক পত্রিকাতে ৩০ অক্টোবর বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছেন।
অপরদিকে, মাদ্রাসার সুপার আ.ন.ম. নুর হোসেনসহ শিক্ষক-কর্মচারীদের ব্যাপক অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, দায়িত্বের অবহেলা, প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী সংকটে ক্লাস না হওয়া, অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থী এনে পরীক্ষা দেওয়া, সুপারের মালিকানাধীন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থী এনে বই উৎসব কর্মসূচি করা, সুপার মাসে দুই-একদিন উপস্থিত থাকাসহ নানা অভিযোগ তুলে চলতি মাসের ১ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর এমপিও বাতিলের আবেদন ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে অনুলিপি দিয়েছেন ওই মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান টিটো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দায়িত্বশীল একাধিক ব্যক্তি জানান, নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগে সভাপতি নিজের প্রার্থীকে যোগদান করানোর চেষ্টা করে। এতে অর্থের লেনদেন হয়। এ নিয়ে বিরোধের সৃষ্টি হয়। তারপর থেকে পদত্যাগ, এমপিও বাতিলের আবেদন করায় ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসীদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
ওই প্রতিষ্ঠানের সাবেক সভাপতি ও সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম সংবাদ সারাবেলাকে বলেন, ‘আমি সভাপতি থাকা অবস্থায় শিক্ষার্থী অনেক ভালো ছিল। সেখানকার সুপার, শিক্ষকরা যথেষ্ট আন্তরিক। এমপিও বাতিলের মতো পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি।’
এ ব্যাপারে পলিকাদোয়া মহিলা দ্বি-মূখী দাখিল মাদ্রাসার সুপার আ.ন.ম. নুর হোসেন সংবাদ সারাবেলাকে বলেন, ‘শিক্ষকদের বিল বেতনে নিয়মিত সই না করা সহ নানা অভিযোগের কারণে মাদ্রাসার আট জন ম্যানেজিং কমিটির সদস্য পদত্যাগ করেছে। এমপিও বাতিলের বিষয়ে আমার জানা নেই। আর আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য নয়।’
এদিকে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান টিটো সংবাদ সারাবেলাকে বলেন,‘ সেখানে নিয়োগ সংক্রান্ত কোন বিরোধ ও অর্থ লেনদেন হয়নি। এটি মিথ্যা। আমি সভাপতি হওয়ার পর দেখলাম ওই প্রতিষ্ঠানে করোনার আগেও কোন দিনই ক্লাস হওয়া হয়নি। এই মাদ্রাসার উত্তর ও দক্ষিণে দুটি মাদ্রাসা রয়েছে। তাই এই মাদ্রাসার প্রয়োজন নেই। সরকারের প্রতি মাসে ৪ লাখের উপরে টাকা অপচয় রোধ করতে এমপিও বাতিল চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে আবেদন করেছি। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।’
এ ব্যাপারে জেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ শাহাদুজ্জামান সংবাদ সারাবেলাকে বলেন, পলিকাদোয়া মহিলা দ্বি-মূখী দাখিল মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির আট জনের পদত্যাগের একটি চিঠি পেয়েছি এবং ওই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি মিজানুর রহমান টিটো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর এমপিও বাতিলের আবেদনের অনুলিপি কপি পেয়েছি। যেহেতু আমার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করা সেহেতু সেখান থেকে যেকোন নির্দেশ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।