চলে গেলেন অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক এমাজ উদ্দিন আহমদ ১৯৯২-৯৬ সময়ে প্রতিষ্ঠানটির উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন। মৃত্যুর আগ অবধি তিনি উপাচার্য ছিলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনির্ভাসিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভের (ইউডা) উপাচার্য। তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।

|| সারাবেলা প্রতিবেদন, ঢাকা ||

হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ। রাজধানীর ধানমন্ডির ল্যাব এইড হাসপাতালে শুক্রবার ভোরে সর্বজনশ্রদ্ধেয় এই শিক্ষকের মৃত্যু হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক এমাজ উদ্দিন আহমদ ১৯৯২-৯৬ সময়ে প্রতিষ্ঠানটির উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন। মৃত্যুর আগ অবধি তিনি উপাচার্য ছিলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনির্ভাসিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভের (ইউডা) উপাচার্য। তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।

স্যারের ছেলেন জিয়া হাসান ইবনে আহমদ জানান, “গত রাত আড়াইটার দিকে বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন। দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। ভোর পৌনে ৬টায় আইসিইউতেই মারা যান।”

অবিভক্ত বাংলার মালদহে ১৯৩২ সালে এমাজউদ্দিন আহমদের জন্ম। দেশভাগের পর তারা পরিবারসহ চলে আসেন পূর্ব বঙ্গের চাঁপাইনবাবগঞ্জে। সেখানে শিবগঞ্জের আদিনা সরকারি ফজলুল হক কলেজ ও রাজশাহী কলেজে পড়ালেখাশেষে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। জড়িয়েছিলেন ছাত্ররাজনীতির সঙ্গেও । নির্বাচিত ভিপি ছিলেন ফজলুল হক হলের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে যোগ দেন কর্মজীবনে। পেশাজীবনের শুরু রাজশাহী কলেজে শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে। পরে দেশের বাইরে উচ্চ শিক্ষাশেষে দেশে ফিরে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে। সেটা ছিল ১৯৭০ সাল। ডক্টরেট করেন কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে।

দীর্ঘদিন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন ড. এমাজউদ্দীন আহমদ। এছাড়া দায়িত্ব পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও উপ উপাচার্য হিসেবেও। উপাচার্য হন ১৯৯২ সালে। এই দায়িত্বে ছিলেন ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর নেন ১৯৯৮ সালে। এরপর উপাচার্যের দায়িত্ব নেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনির্ভাসিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভের (ইউডা)।

শিক্ষায় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৯২ সালে একুশে পদক পান এমাজউদ্দীন আহমদ। এর আগে থেকেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়লেও সরাসরি কোন পদে ছিলেন না তিনি। তবে দলটির একজন উপদেষ্টা হিসেবে বিভিন্ন সময়ে দলটির পাশে থেকেছেন। বিএনপি সমর্থিত বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে গঠিত শত নাগরিক কমিটির সভাপতির দায়িত্বেও তিনি ছিলেন।

বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সদস্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কথা, মধ্যযুগের রাষ্ট্র চিন্তা, তুলনামূলক রাজনীতি: রাজনৈতিক বিশ্লেষণ, বাংলাদেশে গণতন্ত্র সংকট, সমাজ ও রাজনীতি, গণতন্ত্রের ভবিষ্যত, আঞ্চলিক সহযোগিতা ও জাতীয় নিরাপত্তাসহ পঞ্চাশটিরও বেশী বই লিখেছেন।

তার স্ত্রী সেলিমা আহমদ ২০১৬ সালেই মারা গেছেন। অধ্যাপক দিলরুবা শওকতা আরা ইয়াসমিন ও অধ্যাপক দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন তাদের দুই মেয়ে। দুই ছেলের মধ্যে জিয়া হাসান ইবনে আহমদ সরকারি কর্মকর্তা, তানভীর ইকবাল ইবনে আহমদ একজন চিকিৎসক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও এমাজদ্দিন আহমদের মেয়ে জিন্নাত আরা নাজনীন জানান, শুক্রবার দুপুরে জুমার পর কাঁটাবন ঢাল মসজিদে তার বাবার জানাজা হবে। বাদ আসর তাকে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন