|| সারাবেলা প্রতিনিধি, গাজীপুর ||
গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলায় সর্বাধিক আলোচিত রাজিব ধর খুনের ৭ দিনের মাথায় হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন ও মূল হোতা শাহীনকে গ্রেফতার করেছে কাপাসিয়া থানা পুলিশ । সোমবার ২১শে ডিসেম্বর মূল হোতার জবানবন্দী রেকর্ড করার জন্য গাজীপুর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়েছে। দিনের শেষে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে শাহীন।
গ্রেফতার রাজিব হত্যার মূল হোতার নাম মো. শাহীন ইসলাম (৩৪)। সে নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলার মধ্য চালাকচর এলাকার কুখ্যাত ডাকাত মো. শহিদুল্লার ছেলে। অন্যদিকে খুন হওয়া রাজিব ধর (৩২) জেলার কাপাসিয়া উপজেলার দূর্গাপুর ইউনিয়নের স্বর্গীয় মুক্তিযোদ্ধা সুভাষ ধরের ছেলে। গেলো রোববার ১৩ই ডিসেম্বর সকালে কাপাসিয়া সদর ইউনিয়নের সাফাইশ্রী এলাকার শ্রী শ্রী শ্মশান কালী মন্দির ও শ্রী শ্রী শিব মন্দিরের পশ্চিম পাশের একটি কলা ক্ষেত থেকে রাজিব ধরের লাশ উদ্ধার করে থানা পুলিশ।
পুলিশ জানায়, মো. শাহিন ইসলাম আগে তার পিতার সাথে ডাকাতির কাজে জড়িত ছিলো। ২০০৯ সালের মে মাসে নরসিংদীর মনোহরদী থানায় দায়ের করা একটি ডাকাতি মামলার (নম্বর-৪) বিচার হলে ২০১৬ সালে তার যাবজ্জীবন জেল হয়। এক বছর জেল খাটার পর ২০১৭ সালে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে জেল থেকে বেরিয়ে এসে তার নানা আব্দুল রশিদের বাড়িতে উপজেলার শাফাইশ্রী এলাকায় বসবাস করতো । তার মা কাপাসিয়া থানায় রান্নাবান্না ও পরিচ্ছন্নতার কাজ করতো, সেই সুবাদে শাহীনও থানার পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করতো।
রাজিব ধর ঢাকায় প্রাইভেটকার চালক হিসেবে চাকরি করতো। কয়েক মাস আগে চাকরি থেকে বরখাস্তের পর নিজ এলাকায় ফিরে এসে সাফাইশ্রী এলাকায় তার মায়ের সাথে ভাড়া বাসায় থাকতো। এসময় সে নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে। আর এই নেশার সূএেই শাহীনের সাথে রাজিবের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে তারা হয়ে ওঠে এলাকার মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রক। এলাকার আরো কয়েকজন যুবক মিলে গড়ে তোলে শক্তিশালী মাদকের সিন্ডিকেট। আর এ সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তাদের মধ্যে সম্প্রতি দূরত্ব তৈরী হলে রাজিব শাহীনের ছোট ভাই ওসমানের সাথে সখ্য গড়ে তোলে।
ওসমান ও রাজিব একসাথে বসে গাঁজা,ইয়াবা সেবনের পাশাপাশি নানা অপকর্ম শুরু করে। নিজের আপন ছোট ভাইয়ের সাথে বন্ধু রাজিবের এমন সখ্য ও মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ কোন ভাবেই মানতে পারেনি শাহিন। এরই জের ধরে শাহিন আরো কতক সহযোগির সাথে পরামর্শ করে বন্ধু রাজিবকে খুন করার সিদ্ধান্ত নেয়।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১২ই ডিসেম্বর শনিবার রাতে একসঙ্গে নেশা করার কথা বলে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায় শাহিন। পরে রাতে সাফাইশ্রী মন্দিরের পাশে বসে নেশা করা শেষে বাড়ি ফেরার পথে কলাক্ষেতে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে রাজিবকে। পরদিন ১৩ই ডিসেম্বর রোববার সকালে ঐ মন্দিরের পাশের কলাক্ষেত থেকে অজ্ঞাত হিসেবে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে লাশ উদ্ধারের কথা জানাজানি হলে স্বজনরা তার লাশ শনাক্ত করে।
লাশ উদ্ধারের পরদিন ১৪ই ডিসেম্বর সোমবার নিহত রাজিব ধরের মা প্রতিভা রানী ধর অজ্ঞাত লোকদের আসামী করে কাপাসিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কাপাসিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আফজাল হোসাইন তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় রোববার ২০শে ডিসেম্বর ভোর ৫টার সময় নরসিংদীর পলাশ থানার চরসিন্দুর বাজার থেকে শাহিনকে গ্রেফতার করেন। গ্রেফতারের পর পুলিশের কাছে শাহিন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে খুনের কথা স্বীকার করেছে।
এ বিষয়ে কাপাসিয়া থানার তদন্ত কর্মকর্তা মোঃ আফজাল হোসাইন জানান, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও আপন ছোট ভাইয়ের সাথে নেশা করার বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে দন্ধ হয় আর এরই জের ধরে এই হত্যাকান্ডের ঘটনা সংগঠিত হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শাহিন তার দোষ স্বীকার করেছে। শাহিনের দেয়া তথ্যমতে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও আলামত সংগ্রহের চেষ্টা করেছি। কিন্তু তার দেখানো জায়গা তথা শীতলক্ষা নদিতে গিয়ে আমরা ডুবুরী নামিয়েও হত্যায় ব্যবহৃত দা ও অন্যান্য আলামত উদ্ধার করা যায়নি। তবে আমাদেও চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, সোমবার সন্ধ্যায় তাকে অতিরিক্ত চীপ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হামিদুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হলে ১৬৪ ধারায় শাহিনের জবানবন্ধী রেকর্ড করা হয়। এ হত্যাকান্ডের সাথে আরো কেউ জড়িত আছে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি বলেন মামলার তদন্তের স্বার্থে এ বিষয়ে বলা যাবেনা।