শ্রীমঙ্গলে হলুদ শাসের তরমুজের ভালো ফলনেও লোকসান শংকায় কৃষক

|| সব্যসাচী পুরকায়স্থ, শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) ||

শ্রীমঙ্গলে প্রথমবারের মতো চাষ হয়েছে হলুদ শাসের সবুজ তরমুজ। ব্যতিক্রমী শাসের রঙ আর মিষ্টি স্বাদের জন্য ক্রেতাদের কাছে এর চাহিদাও প্রচুর। উপজেলায় এই তরমুজ চাষের প্রথম উদ্যোক্তা আলাউদ্দিন মোহাম্মদ তৌফিক। ফাইন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিষয়ে পোস্ট গ্রাজুয়েশন (এমবিএ) করে কিছুদিন অধ্যাপনা করেন একটি বেসরকারী কলেজে। বেসরকারী একটি কোম্পানিতেও অডিট কর্মকর্তার কাজও করেন কিছুদিন।

কিন্তু, চাকরির বাঁধাধরা নিয়ম তার ভাল লাগেনি। উদয়াস্ত পরিশ্রমে সীমিত আয় দিয়ে সংসারের খরচ মেটাতে হাঁপিয়ে উঠেছিলেন। সব বাদ দিয়ে সিদ্ধান্ত নিলেন ‍কৃষিকেই করবেন জীবিকার উপায়।


সামাজিক মর্যাদায় আকর্ষনীয় চাকরি ফেলে রেখে নেমে পড়লেন কৃজি জমিতে। প্রথমে চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে বছর চারেক আগে শুরু করেন নার্সারির ব্যবসা। না দেন ‘এশিয়া প্লান্টার্স এন্ড নার্সারি’। ২০ বিঘা জমি লিজ নিয়ে ফলজ নার্সারির পাশাপাশি নিজেই চাষ করতে শুরু করেন মাল্টা, পেপে, ক্যাপসিকাম, স্কোয়াশ ও লেটুস পাতাসহ বিভিন্ন ফসল। ফটিকছড়িতর সাফল্যে সিদ্ধান্ত নেন কৃষিবিনিয়োগের।

গেলো বছর শ্রীমঙ্গলের ইছবপুরে ১০ বিঘা জমি লিজ নিয়ে পরীক্ষাপর্যায়ে শুরু করেন থাইল্যান্ডের হলুদ শাসের সবুজ তরমুজ ‘কর্নিয়া’র চাষ। শ্রীমঙ্গলের মাটিতে এ ধরনের তরমুজের ফলন কেমন হয় – সেটা দেখতেই তার এ পরীক্ষাপ্রয়াস।

লাখ দশেক টাকা বিনিয়োগ করেন তরমুজ চাষে। শ্রীমঙ্গলের মাটি তাকে আশাহত করেনি। আশানুরুপ ভালো উৎপাদন তার মনে দুশ্চিন্তা কাটিয়ে দেয়।

তৌফিকের খামারের এক একটি তরমুজের ওজর চার থেকে ছয় কেজি। বিস্তীর্ণ জায়গা জুড়ে শুধুই তরমুজ। তার খামারের কাছেই আরেক উদ্যোক্তাকৃষক মামুনুর রহমানের তরমুজের ক্ষেত। তিনিও প্রায় ৩৬০ শতাংশ জমিতে চাষ করেছেন পানিসমৃদ্ধ এই ফলের।

মামুনুর রহমান জানালেন, এ তরমুজ চাষ করতে তার খরচ করতে হয়েছে ১২ লাখ টাকা। বর্তমানে একেকটি ৫ কেজি ওজনের তরমুজ ২৫০-৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মূলত, রাজধানীতেই যাচ্ছে তার এ তরমুজ।

তিনি আরো জানান, গেলো বছরের শেষভাগে বিশেষ জাতের হলুদ শাসের তরমুজের বীজ সংগ্রহ করে নার্সারিতে চারা উৎপাদন করেন। ২১ দিন পর চারা রোপণ করেন। জমি চাষ আর গাছ লাগাতে ৪০ থেকে ৫০ জন শ্রমিকের প্রায় একমাস সময় লেগেছে। পুরো সময় জুড়ে পরিচর্যার কাজে ১০ থেকে ১৫ জন শ্রমিক কাজ করেন। ফল আসার পর মাচা করে দিয়েছেন। স্থানীয় কৃষিবিভাগের পরামর্শ মতো  রোদের আলো থেকে রক্ষা করতে তরমুজের ওপর টিস্যু জাতীয় কাপড় এবং ঝুলা বেঁধে দিয়েছেন।

তবে, তৌফিক আর মামুনুরের এতোসব প্রয়াস আর অর্থলগ্নিকে শঙ্কায় ফেলেছে করোনা। তরমুজের চাহিদা কমে গেছে আশংকাজনকভাবে। সরবরাহ করতে না পারায় তরমুজ খেতেই পঁচে যাচ্ছে। এরসঙ্গে যোগ হয়েছে বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢল। ফলে কাঙ্খিত লাভ তো দুরের কথা, বিনিয়োগটুকু উঠবে কিনা সে শঙ্কাতেই পড়েছেন তারা।

এছাড়া, তৌফিক আধা বিঘা জমিতে তরমুজ জাতীয় আরেকটি নতুন জাতের ফল চাষ করেছেন। বৃষ্টির প্রকোপ থেকে রক্ষা পেলে মাস খানেকের মধ্যেই হয়তো ফলটি পরিপক্ক হবে । এটির নাম ‘সাম্পান’। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত এবং মালয়েশিয়ায় এটি পাওয়া যায়। এ ফলেও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন , খনিজ লবন এবং এন্টি-অক্সিডেন্ট পাওয়া যায়।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি জানান, হলুদ শাস বিশিষ্ট তরমুজ শ্রীমঙ্গলের জন্য একেবারেই নতুন কৃষিপণ্য। তৌফিক শ্রীমঙ্গলে এটি চাষের আগ্রহ জানালে তারা নিয়মিত তাকে পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেছেন।  শ্রীমঙ্গলে চাষে এর পূর্ণতা মিলেছে। তিনি আরো জানান, তৌফিকের উৎপাদন ভালো হলেও করোনা পরিস্থিতিতে তার কিছুটা ক্ষতি হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক লুৎফুর বারী জানান, এটি হাইব্রিড জাতের তরমুজ। অনেক দেশে খুব জনপ্রিয়। এর স্বাদ ভালো ও সুন্দর একটি ফ্লেভার রয়েছে এবং লাল শ্বাসের তরমুজের তুলনায়  দামও বেশি পাওয়া যায়। শ্রীমঙ্গলের মাটি এ তরমুজ চাষের জন্য খুবই উপযুক্ত। আমরা ভবিষ্যতে যেকোন উদ্যোক্তাকে এ ব্যাপারে সহায়তা দেবো।

সংবাদ সারাবেলা/নাআ/সেখা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন