||সারাবেলা প্রতিনিধি, শ্রীমঙ্গল ||
স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন কার্যক্রম আরও অধিক জোরদার করতে এবার সন্ধ্যার পর বাইসাইকেলে চড়ে শ্রীমঙ্গল শহর ও শহরতলী চষে বেরিয়েছেন দুই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। উদ্দেশ্য শহরের দোকান – পাটগুলো হাল – হকিকত দেখা, নিয়ম অমান্যকারীর প্রতি আইন প্রয়োগ করা। সরকারের নিয়ম বা শর্ত অনুযায়ী সন্ধ্যার ৭ দিকে সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশনা রয়েছে।
সে অনুযায়ী বেশীরভাগ ব্যবসায়ীরা আইন মেনে দোকান বন্ধ করে চলে যাচ্ছেন যার যার গন্তব্যে কিন্তু অল্প কিছু সংখ্যক দোকানী আইনকে তোয়াক্কা না করে দোকান খোলা রাখেন রাত অবধি। এদেরকে বাগে আনাও যাচ্ছিলো না, নিয়মিত অভিযানে বের হলেও কোনও না কোনভাবে অভিযানের খবর পৌঁছে যেত এক এক করে খোলা রাখা দোকানিদের কানে।
পূর্বে থেকে খবর পেয়ে কিছু সময়ের জন্য দোকানের বাতি বন্ধ আর সাটার নামিয়ে রেখে আশেপাশে থেকে অবলোকন করা হয় কোনদিকে যায় ভ্রাম্যমান আদালতের গাড়ি। ফলে, প্রশাসনের কাছে থাকা গোপন সুত্রের খবর আর অভিযানে বের হয়ে বাস্তবতার মধ্যে যেনো বেশ ফারাক থেকে যাচ্ছিলো। আরো ব্যাপক নজরদারির মাধ্যমে বের হয়ে আসলো, অভিযানিক দল অন্যকোন দিকে চলে যাওয়ার খবর নিশ্চিত হয়েই পুনরায় খুলে যায় দোকান আবারও শুরু হয়, স্বাস্থ্যবিধি তোয়াক্কা ও নিয়ম ভঙ্গ করেই ব্যবসা। এমনটাই জানা গেলো প্রশাসন সুত্রে।
![](https://i0.wp.com/www.sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/07/787878787878-700x525.jpg?resize=568%2C426&ssl=1)
সুত্র জানায়, ৭ টার পর ব্যবসা জমে ভালো। সমজাতীয় অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার সুযোগে অনিয়মকারী ব্যবসায়ী নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত থাকেন, তৈরী হয় জটলার। এগুলোর মধ্যে থাকে না মাস্ক ব্যবহারের বালাই। করোনার এই সময়ে, মানুষকে ঘরে রাখার অন্যতম নিয়ামক হলো হাট -বাজার জনশুণ্য থাকা আর তা করতে হলে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও নিয়মানুযায়ী বন্ধ করার বিকল্প নেই। যদিও জরুরী সেবার দোকানগুলো রয়েছে যথারীতি খোলা, তবে সেগুলোতেও উদাসীনতা লক্ষনীয়। একাধিক ফার্মেসীর সামনে দাঁড়ানো ঔষধপ্রত্যাশী মানুষগুলো বেশীরভাগেরই মুখে নেই মাস্ক, কারওবা পকেটে, কারওবা থুননিতে! ফার্মাসিস্টও যেনো ভুলতে বসেছেন নিয়ম, নিজেদের মাস্কও ব্যবহারেও যেন প্রয়োজনীয়তা নেই। সেজন্য জরিমানাও গুনতে হয়েছে অনেকের। মুনাফালোভের কারনে নিজের ও অন্যদের জীবনকে বিপদাপন্ন করে একশ্রেণীর ব্যবসায়ীরা এই ইঁদুর – বিড়াল খেলায় শামিল হয়েছিলেন।
তবে আর শেষ রক্ষা হয়নি। সবকিছু অনুধাবন করে উপজেলা প্রশাসন সম্প্রতি গ্রহণ করলো ভিন্ন পদক্ষেপ। সরকারী গাড়ির বদলে উপজেলার দুই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চেপে বসলেন পা চালিত সাইকেলে অর্থাং, বাইসাইকেল চালিয়ে ছদ্দবেশে শহর ও শহরতলীর ৭ টার পরের চালচিত্র অবলোকন করলেন নিজচোখে। টানা ৩ দিন ধরে প্রতিনিয়ত আইন বা নিয়মভঙ্গকারী দোকানীদের চিহ্নিত করে ঠিক একই কায়দায় বাই সাইকেলে চেপে শনিবার (২৫ জুলাই) সন্ধ্যার পর থেকেই অতি সংঙ্গোপনে হানা দিতে থাকলেন অ-অনুমোদিত সময়ে খোলা রাখা দোকানগুলোতে। টানা চার ঘন্টা চলে এ অভিযান।
- দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন
- নিজ ছাত্রকে বলাৎকারের পর গলা টিপে খুন করলো মাদ্রাসার ‘বড় হুজুর’
- মৃত্যুদিনে জাতীয় কবি নজরুলকে স্মরণ করলেন দেশের মানুষ
- ইভ্যালিতে যমুনা গ্রুপের বিনিয়োগসিদ্ধান্ত নিরীক্ষার পর
- কাবুলে আইএসের বোমায় নিহতের সংখ্যা এ পর্যন্ত ৯০ জন
এক এক করে দুটি পৃথক ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনাকারী ম্যাজিস্ট্রেট’র ২৫ মামলায় ১৮ হাজার টাকা অর্থদণ্ড গুনতে হলো স্বাস্থ্যবিধি লংঘনকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে। শ্রীমঙ্গল শহরের কলেজ রোড, হবিগঞ্জ রোড হয়ে শহরতলীর সবুজবাগ আবাসিক এলাকায় এ ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়। মূলত, শর্ত অমান্য করে নির্ধারিত সময়ের পরেও দোকান খোলা রাখা, ক্রেতা ও বিক্রেতা পর্যায়ে এবং পাবলিক প্লেসে মাস্ক পরিধান না করা ইত্যাদি অপরাধে সংক্রামক রোগ ( প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮ এবং দণ্ডবিধিতে এসব মামলা ও অর্থদণ্ড করা হয়।
আর এ অভিযান পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদ্বয় হলেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার নজরুল ইসলাম ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাহমুদুর রহমান মামুন, সাথে ছিলেন ইউএইচএফপিও সাজ্জাদুর রহমান চৌধুরী।আর শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশের দুটি পৃথক দলও ছিলো সহযোগীতায়।
তবে শুধু জরিমানাতেই সীমাবদ্ধ ছিলো না ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনাকারী দলটির কার্যক্রম, কাউন্সিলিং এর প্রতিও নজর ছিলো তাদের, তরুনদের মধ্যে যারা স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করেনি তাদের দাঁড় করিয়ে করোনার অভিঘাত পরিস্থিতি সম্পর্কেও সজাগ করেছেন তারা। আর এতেই অল্পবয়সী তরুনরাও নিজেদের বুঝতে না পারার সীমাবদ্ধতা স্বীকার করে শহর থেকে ক্ষিপ্রগতিতে চলে যায় বাসার পানে।
এ সম্পর্কে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্যাট নজরুল ইসলাম সংবাদ সারাবেলাকে বলেন, সাইকেল চালিয়ে যেকোন সরু পথে শহরতলী ও গ্রামীন অঞ্চলে যাওয়া যায়। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে এই মুহুর্তে আমাদের লক্ষ মানুষকে করোনার হাত থেকে রক্ষা করা। সেটা করতে যেয়ে আমাদেরকে যখন যা, যেভাবে করতে হয় সেটাই করার প্রাণান্তকর চেষ্টা করছি। অনেক রাস্তা আছে সরু বা যানবাহন চলার মতো নয়, সেগুলোতে আমরা সাইকেল নিয়েই যেতে হচ্ছে, এতে আমাদের কোনো কুন্ঠাবোধ নেই। আমাদের এরকম অভিযান ও সচেতনতা কার্যক্রম চলমান থাকবে।সেই সাথে সবাইকে আবশ্যিকভাবে মাস্ক ব্যবহার ও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধের আহবান জানান তারা।