নিখোঁজের ১৩ ঘন্টা পর চা বাগানে মিললো শিক্ষার্থীর মরদেহ

স্বাক্ষরের লাশ মাটিতে পড়ে রয়েছে। সেখানে ছিলো মোবাইল। তার পাশেই দাঁড় করা রয়েছে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি। দুটি ফ্যান্টা কোল্ড ড্রিংকসের খালি বোতল, ঘুমের ঔষধের স্ট্রিপস। তার মোটরসাইকেলে ঝুলিয়ে রাখা প্লাস্টিকের ব্যাগে ভেতরে কাগজে মোড়ানো আরও কিছু জিনিস (সম্ভবত নাশতা জাতীয় খাদ্য) ছিল।

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, শ্রীমঙ্গল ||

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে একটি চা বাগান থেকে স্বাক্ষর দেব (১৭) নামের এক কলেজ ছাত্রের মরদেহ পাওয়া গেছে। রোববার ৩০ আগস্ট সকাল ছয়টার দিকে উপজেলার লাখাইছড়া চা–বাগানের সেকশনে মৃতদেহটি পড়ে থাকতে দেখা যায়। এর আগের দিন  শনিবার বিকেল ৪টার পর থেকে নিখোঁজ ছিল স্বাক্ষর । 

শনিবার রাতে তার নিখোঁজের বিষয়ে শ্রীমঙ্গল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেন তার বাবা।স্বাক্ষর দেব উপজেলার ইছবপুর এলাকার কল্যাণ দেবের বড় ছেলে। তার বাবা উত্তর ভাড়াউড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র স্বাক্ষরের এ বছর এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, স্বাক্ষরের লাশ মাটিতে পড়ে রয়েছে। সেখানে ছিলো মোবাইল। তার পাশেই দাঁড় করা রয়েছে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি। দুটি ফ্যান্টা কোল্ড ড্রিংকসের খালি বোতল, ঘুমের ঔষধের স্ট্রিপস। তার মোটরসাইকেলে ঝুলিয়ে রাখা প্লাস্টিকের ব্যাগে ভেতরে কাগজে মোড়ানো আরও কিছু জিনিস (সম্ভবত নাশতা জাতীয় খাদ্য) ছিল।

স্বাক্ষরের বাবা কল্যাণ দেব শনিবার রাতে  জানিয়েছিলেন,  ‘বিকেলে স্বাক্ষর তার মাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা ছিল।এদিন বিকালে তার মোবাইল ফোনে একটা কল আসলে সে তার মাকে বলে ‘একটু বাহির থেকে আসছি, তোমাকে পরে নিয়ে যাবো মা’।এ কথা বলে সে বাসা থেকে বের  হয়। কিছুক্ষণ পর তার মা তার নাম্বারে কল করলে অন্য একজন ফোন রিসিভ করে। পাঁচটার দিকে তার মা ওর মুঠোফোনে কল করলে রিসিভ করে অপরিচিত একজন। স্বাক্ষর কোথায় জিজ্ঞেস করলে অপর পাশ থেকে ‘স্বাক্ষর কে? স্বাক্ষর নামে কেউ নাই’ বলে ফোন রেখে দেয়। এরপর থেকে তাঁকে আর ফোনে পাওয়া যায়নি। কয়েকবার ফোনে কল ঢুকেছে, কিন্তু রিসিভ করেনি কেউ।

এদিকে স্বাক্ষরের নিখোঁজ হওয়ার খবর পেয়ে থানা পুলিশ, স্বাক্ষরের পরিবার, পাড়া–প্রতিবেশী ও তার বাবার সহকর্মীরা ও ৩ নং ইউপি চেয়ারম্যান ভানু লাল রায় উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় করে খোঁজাখোঁজি করেন।

শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) সোহেল রানা বলেন, গতকাল বিকেল থেকে স্বাক্ষর নিখোঁজ ছিল।  সন্ধ্যা ৭টা ১২ মিনিটের দিকে তার ফোনের লোকেশন ছিল ভানুগাছ অভিমূখী সড়কের গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট এন্ড গলফ এর আশেপাশে। পরে বারবারই ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। চতুর্দিকে তার আত্মীয়-স্বজনসহ আমরাও খুঁজছিলাম।তিনি আরো বলেন, হঠাৎ করে রাত সোয়া ১১টার দিকে একটা লোকেশন পেলাম সিন্দুরখাঁন অভিমূখী সড়কের শিববাড়ি সংলগ্ন কুমিল্লা পাড়ার দিকে। সাথে সাথে আমরা মুভ করলাম। সেখানেও গিয়েও কিছু পেলাম না। ফোন বন্ধ। রাত সাড়ে ৩টা পর্যন্ত আমরা ব্যাপক খোঁজাখুঁজি করেছি। পরে তো সকাল সাড়ে ৬টার দিকে খবর পেলাম যে, লাখাইছড়া চা বাগানের সেকশনের তার মরদেহ পাওয়া গেছে।

প্রসঙ্গত, ট্র্যাকিং করে পাওয়া স্থান দুটো থেকে মৃতদেহ পাওয়া যাওয়া স্থানের দুরত্ব বড়জোর ১০ কি.মি. মধ্যে এবং মূল রাস্তা ধরে চা বাগানের ভেতরে যেতে হলে ফিনলে চা বাগান কর্তৃপক্ষের নিজস্ব চেকপোস্ট রয়েছে। তবে, ফাঁড়ি রাস্তাও রয়েছে চা বাগানে প্রবেশের। 

একটি গণমাধ্যম পুলিশের বরাত দিয়ে বলছে, চা বাগানের ভিতরে মধ্য রাতে ৪টি মোটর বাইক প্রবেশ করেছিলো এবং ৩টি বাইক ভোররাতে বের হয়ে আসে।

 শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুছ ছালেক বলেন, ‘আমরা রাতে অনেক চেষ্টা করেছি স্বাক্ষরকে খুঁজে বের করার। রোববার সকালবেলা লাখাইছড়া চা–বাগানের শ্রমিকেরা চা–বাগানে লাশ পড়ে থাকতে দেখে ব্যবস্থাপককে জানান। পরে আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। তার শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। এখনো রহস্যজনক। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে অনেকটা ধারনা পাওয়া যাবে। আলামত সংগ্রহের জন্য শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশের পাশাপাশি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মৌলভীবাজার ও সিলেট থেকে আসা সিআইডির বিশেষ টিম কাজ করছে।’  

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন