টক আঙ্গুরকে মিষ্টি করতে স্বপ্ন বুনছেন খাসিয়া যুবক ক্যামন পড়ুয়াং

|| সব্যসাচী পুরকায়স্থ, শ্রীমঙ্গল থেকে ||

বাড়ির উঠানে আঙ্গুর বাগান। থোকায় থোকায় ঝুলছে আঙ্গুরফল। বাগানের মালিক শ্রীমঙ্গলের লাংলিয়াছড়ার খাসিয়া জনগোষ্ঠির যুবক ক্যামন পডুয়াং। শখ করেই বাড়ির চিলেকোঠা আর উঠোনের কোণায় লাগিয়েছেন আঙ্গুর ফলের গাছ। গাছজুড়ে থোকায় থোকায় ফল, কিন্তু স্বাদে টক। আবাদে সফল হলেও এখন টক আঙ্গুরকে কী করে মিষ্টি করা যায় সেই চেষ্টাতেই ব্যস্ত ক্যামন পড়ুয়াং। নিয়মিত কথা বলছেন স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে।

পডুয়াং জানালেন, “তিন বছর আগে নিতান্তই শখের বসে পাশের কমলগঞ্জ উপজেলার সমশেরনগরের একটি নার্সারী থেকে দুটি আঙ্গুর গাছের চারা এনে বাড়িতে লাগান। এ বছরের মে মাসের দিকে গাছটিতে প্রচুর পরিমাণে ফল ধরেছে। বললেন, চাষ সম্পর্কে অর্থাৎ মাটি ও সার ব্যবস্থাপনার ধারণা না থাকায় আঙ্গুরগুলো স্বাদে টক হচ্ছে।

দূর্গম এই পুঞ্জির পাহাড়ে বাণিজ্যিক ভাবে আঙ্গুর ফলানোর স্বপ্ন দেখছেন পড়ুয়াং। শুধু দরকার কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহায়তা। মূলত, খাসি পান আর লেবু চাষ করেই পডুয়াংদের পরিবার জীবিকা চলে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শ্রীমঙ্গল উপজেলার সকল ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়ন বিষয়ক প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর তাজুল ইসলাম জাবেদ বলেন, ‘খাসিয়া পুঞ্জির সম্প্রদায়, কৃষিই যাদের জীবিকা, তাদের আদি পেশা পানচাষ। যা বর্তমানে চলমান রয়েছে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে খাসি সম্প্রদায় এগিয়ে চলছে। পান চাষের পাশাপাশি সুপারি, কলা, লেবু, আনারস, কমলা, কাঁঠাল, চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছে তারা।”

আঙ্গুর চাষ এই পুঞ্জিতে প্রথম জানিয়ে তাজুল ইসলাম জাবেদ বলেন, “পডুয়াং সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। আমরা তাকে সর্বাত্বক সহযোগিতা করব।”

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি বলেন, “শ্রীমঙ্গল উপজেলায় খাসিয়া পুঞ্জির যুবক আঙ্গুর চাষ করেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। ফলও প্রচুর ধরেছে, দেখতে সুন্দর কিন্তু একটাই সমস্যা হলো ফলগুলো অনেক টক। এ বিষয়ে আমাদের সঙ্গে সে যোগাযোগ করেছে। আমরা পরামর্শ দিয়েছি মাটি পরীক্ষার জন্য। যেহেতু তার খুব ইচ্ছে বড় আকারের একটি খামার করার, আমরা তাকে সম্ভাব্য সবরকম সহায়তা করব। কৃষি গবেষকদের সঙ্গে কথা বলে আমরা দেখবো কি করলে ওই মাটিতে ভালো ও মিষ্টি ফল করা যায়।”

খাসিয়া যুবক পড়ুয়াংয়ের মত অন্য যুবকরাও যদি এই বিষয়ে উদ্যোগী হয় তাহলে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে জানিয়ে সুইটি বলেন, “ক্যামন পডুয়াংকে এখন থেকে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে সার্বিক পরামর্শ ও সহযোগিতা দেওয়া হবে। এ অঞ্চলে আঙ্গুরের আবাদের প্রসার বাড়লে এ ফল আর আমদানি করতে হবে না। অর্থনৈতিক উন্নয়নেও ব্যাপক অবদান রাখবে।

কৃষি বিজ্ঞানীরা বলছেন, আঙুর (Vitis vinifera) বা দ্রাক্ষা (ইংরেজি Grape) এক প্রকারের ফল যা লতা জাতীয় দ্রাক্ষালতা গাছে ফলে থাকে। স্বল্প পরিসরে আঙ্গুর চাষের জন্য বাড়তি জায়গার প্রয়োজন হয় না। বসতবাড়ীর আঙ্গিনায় যে স্থানে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত রৌদ্র থাকে অথচ পানি দাঁড়ায় না এমন জায়গা নির্বাচন করে আঙ্গুর চাষ করা যায়। যদি বাড়ির আশেপাশে বা আঙ্গিনায় জায়গা না থাকে বিশেষ করে শহর অঞ্চলে তারা বাড়ির ছাদে টবে আঙ্গুর চাষ করতে পারেন। আঙ্গুরের পুষ্টিগুণ অনেক। আমাদের দেশে রোগীর পথ্য হিসেবে আঙ্গুর ব্যাপক ব্যবহৃত হয়৷ এতে প্রোটিন, শর্করা, চর্বি, ক্যালসিয়াম, ফরফরাস, লৌহ, খনিজ, পটাশিয়াম, থিয়ামিন, রিবোফ্লাবিন, ভিটামিন-এ, বি, সি উপাদান রয়েছে৷

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন