|| অনলাইন প্রতিনিধি, শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) ||
গ্রামের মানুষ বিশেষ করে শ্রমজীবীরা ছুটে আসছে শহরে। ভ্রাম্যমান দোকানীরাও দোকান বসিয়েছেন রাস্তার পাশের ফুটপাতে আগের মতই। শপিং মলগুলো বন্ধ থাকলেও অনেক ব্যবসায়ীই দোকান খুলছেন নিয়মিত। একজনের দেখাদেখি খুলছেন আরেকজনও। নিম্ন আয়ের মানুষদের হাতে জমানো টাকা যা ছিল তাও প্রায় শেষ। বড়জোর টেনে টুনে সপ্তাহখানেক চলতে পারবেন। ছোটা মাঝারি দোকানিরা বলছেন, জমানো টাকা শেষ হয়ে যাওয়াতেই বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ কাজে নামছেন। খুলতে শুরু করেছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
একদিকে জীবনধারনের জন্য টাকা ও খাবার প্রয়োজন, অন্যদিকে করোনার চোখ রাঙানি। সময়ের ফেরে দ্বৈত এই সমস্যা ঘিরে ধরেছে উপজেলার নিম্ন ও নিম্ন – মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষকে। অনেকেই বলছেন, শতভাগ ঘরে থাকা নিশ্চিত করতে হলে সরকার থেকে প্রতি পরিবারে ব্যাংক বা ডিজিটাল মাধ্যমে নগদ অর্থসহায়তা দেওয়ার কোন বিকল্প নেই। এ করোনার প্রাদুর্ভাবকাল আরও বাড়লে, দ্রুত উপজেলার প্রত্যেকটি পরিবারের ডাটাবেইস তৈরি করে অর্থ বা ঋণ সহায়তার ব্যবস্থা করলে লকডাউনের সুফল পাওয়া যাবে। একই সঙ্গে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে করোনার কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের ঝুঁকি।
রোনার এ পরিস্থিতিতে শ্রীমঙ্গলের প্রবেশমূখে চেকপোস্ট বসালেও তা নিয়ে জনমনে যথেষ্ট সন্দেহ দেখা দিয়েছে। এক্ষেত্রে স্থানীয়রা বলছেন, পুলিশকে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব ও সততা নিয়ে কাজ করতে হবে। কোন অবস্থায়ই দেশের উপদ্রুত অঞ্চল থেকে আসা কোন যাত্রীবাহী পরিবহন বা ব্যক্তিকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া ঠিক হবে না।
তবে লকডাউনের মধ্যেই গেল ১০ দিনে অনেক মানুষ শ্রীমঙ্গলে ঢুকেছে যাদের মধ্যে কয়েকজনকে করোনা আক্রান্ত হিসেবে চিহ্নিত করা গেছে। শহরের কলেজ সড়কে ঢাকার আজগর আলী হাসপাতাল থেকে এসেছেন চারজন, ইছবপুর এলাকায় হবিগঞ্জ থেকে এসেছেন একজন, ভাড়াউড়া চা বাগানে ঢাকা থেকে এসেছেন একজন, কালাপুর পেট্রল পাম্প এলাকায় ঢাকা থেকে এসেছেন দুইজন, পূবালী আসাবিক এলাকায় ভারত থেকে এসেছেন একজন, এছাড়া গত ২৪শে এপ্রিল ভোরে পিকআপ ভ্যানে করে এসেছেন পাঁচ জন।
বিগত ২২শে এপ্রিল ঢাকা থেকে আসা ফুলছড়া চা বাগানের এক কলেজ ছাত্রীর শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে। এর আগে গত ২২শে মার্চ ঢাকা থেকে আসা শহরের এক ব্যাংক কর্মকর্তার শরীরেও করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে।

এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা বলছেন, মানুষের পেটে টান পড়লে ঝুঁকি থাকা সত্বেও মানুষ বেঁচে থাকার জন্য বাইরে বেরিয়ে পড়বে। এক্ষেত্রে, মানুষের ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য সরকারকে সময়োপযোগী ভিন্ন পরিকল্পনা করতে হবে। শুধু ত্রাণ দিয়ে সবার ক্ষুধা নিবৃত্ত করা অসম্ভব। অনেক মানুষ আছে সামাজিক বাস্তবতায় ত্রাণ চাইবেও না, কিন্তু ক্ষুধা তো আর লকডাউন মানবে না।
মানবাধিকার কর্মী এসকে দাশ সুমন বলেন, নাড়ির টানে হয়তো বাড়ির বাইরে থাকা কিছু মানুষ নীড়ে ফিরতে চায় ঝুঁকি নিয়ে। আর লকডাউন চলছে একমাসের উপরে। তাই প্রধাণত আর্থিক কারণে ঘরের বাইরে বের হতে হচ্ছে বেশীর ভাগ মানুষকে। তার ওপর মানসিক কারণ তো রয়েেছেই।’
তিনি এও বলেন, এই পরিস্থিতিতে যদি বাইরে থেকে কেউ এই এলাকায় আসতে চায় তাহলে তাকে চেকপোস্ট থেকেই সরাসরি পরীক্ষার জন্য পাঠিয়ে দিতে হবে। সেখানে ভাইরাস নেগেটিভ হলেই তাকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া যাবে।
সিনিয়র এএসপি (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সার্কেল) আশরাফুজ্জামান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন সার্বক্ষণিক শ্রীমঙ্গলে প্রবেশমূখে দুটি চেক পোস্ট করছি। আজও কিছু লোককে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া শহরে পুলিশি টহল আরও জোরদার করা হচ্ছে।’
উপজেলা করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন,‘ মানুষ যদি নিজে থেকে সচেতন না হয়, তাদের মধ্যে মৃত্যু ভয় না থাকে তা হলে প্রশাসনের আর কত কি করবে। আমরা মানুষকে ঘরে রাখার জন্য দিন রাত কষ্ট করে যাচ্ছি, তাদের বুঝাচ্ছি। আমরা যেমন আমাদের জায়গা থেকে চেষ্টা করছি, ঠিক একই ভাবে মানুষকেও সচেতন হতে হবে।’