করোনায় বিদ্যালয়ের মাঠ ভরাট হয়ে গেলো সবজীতে !

মাধ্যমিক বিদ্যালয়টির সদর দরজা পেরিয়ে দু’চার কদম এগোলেই শিক্ষার্থীদের খেলার মাঠ। ছ’মাস আগেও এ মাঠে ছিলো না কোন গাছ - গাছালি। কিন্তু বিগত ছ’মাসে এই ফাঁকা মাঠেই হলো সবজী বাগান ! খেলার মাঠে সবজী

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) ||

লাল তীরের কালো মরিচ ও পার্পল কিং জাতের বেগুনে ঢাকা পড়েছে গাছের সবুজ পাতা। মাটিতে থোকায় থোকায় লাল সবুজের বাহারী রং ছড়াচ্ছে লালশাক আর লাইশাক। তর তর করে বেড়ে উঠছে পুঁই আর ডাটাশাক। লাউয়ের ভারে দুলছে মাচা । সাদা ফুল এসেছে সিমের লতিতে। পেঁপে গাছের পাতার নিচ দিয়ে উঁকি দিচ্ছে পেঁপের মোচা । এছাড়া পুরো বিদ্যালয় প্রাঙ্গন জুড়ে লাগানো রযেছে ২০০০ বনজ, ৩০০ ফলজ ও ৫০টি ঔষধি গাছ। এছাড়া গাছের গোড়ায় দেয়ার জন্য রয়েছে একটি জৈব সারের প্লান্ট। এই প্লান্টে উৎপন্ন করা হচ্ছে বার্মি কম্পোজ ও ট্রইকো কম্পোজ সার।  চোখ ধাঁধানো সবুজের এই সমারোহ মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিন্দুরখান ইউনিয়নের হাজী আব্দুল গফুর উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ প্রাঙ্গনে। 

করোনাকালে সারাদেশের মতো এই বিদ্যালয়টিও বন্ধ রয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অফুরন্ত অবসর সময় কাটাতে বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় শখের চাষে ব্রতী হন। তার এই সবজি চাষ দেখে এখন এলাকার সাধারণ মানুষরা সবজি চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এরই মধ্য অনেক শিক্ষক তাদের বাড়ীর অঙ্গিনায় ও ছাদে সবজি চাষ শুরু করেছেন।

গেলো বুধবার এই বিদ্যালয়ের মাঠটি পরিদর্শন করেন মাল্টিমোড গ্রুপের পরিচালক তাজওয়াল এম আউয়াল, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ লুৎফুর বারী, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি ও সিন্দুরখাঁন ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হেলাল প্রমুখ।  

প্রধান শিক্ষক ফিরোজ আহম্মেদ জানালেন, করোনার কারণে মার্চ মাস থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এই অলস সময় পার করার জন্য তিনি শখের বসে বিদ্যালয়ের অঙ্গিনায় সবজি চাষ শুরু করেন। কিন্তু এটা যে এতো মানুষের মন কাড়বে বা অনুকরনীয় হবে তা তিনি আগে ভাবেননি। তবে এখন তিনি মনে করছেন বিদ্যালয় খোলার পর সবজির মাঠ দেখে শিক্ষার্থীরাও সবজি চাষে উৎসাহিত হবে। তার এই নার্সারী থেকে স্বল্প মূল্যে শিক্ষার্থীদের চারা দেয়া হবে।  

    মাল্টিমোড গ্রুপের পরিচালক তাজওয়াল এম আউয়াল বলেন, শ্রীমঙ্গলে এমন একটি উদ্যোগ দেখতে আমি ঢাকা থেকে চলে এলাম আপনাদের মাঝে।শ্রীমঙ্গল খুবই সুন্দর জায়গা, আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে শ্রীমঙ্গলে আপনাদের মাঝে আমরাও একটু স্থান করে নিতে চাই। সবার সহযোগীতা থাকলে মাল্টিমোড গ্রুপের চেষ্টা থাকবে আপনাদেরকে নিয়ে, আপনাদের এলাকায়, আপনাদের জন্য, সর্বপরি দেশের কৃষি তথা অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখার জন্য আগামীতে নতুন কোন প্রকল্প নিয়ে আসা যায় কিনা। 

    উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি বলেন, এটা খুবই চমৎকার উদ্যোগ। শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে ক্লাস শেষে প্র্যাকটিক্যালি সবজি চাষ শিখতে পারবে। 

    জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ লুৎফুর বারী বরেন, করোনাকালে বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। এই বন্ধ বিদ্যালয়ে একটি সুন্দর সবজি বাগান করা হয়েছে। এটা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। আমরা চাচ্ছি প্রতিটি বিদ্যালয়েই এরকম সবজি চাষ ছড়িয়ে দেয়ার জন্য। তবে প্রাথমিকভাবে ৫০টি বিদ্যালয় নিয়ে আমরা এটা শুরু করবো। যাতে খেলাধুলাও করা যায় আবার কৃষিরও সম্প্রসারণ ঘটানো যায়।

    Leave a Comment

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    সংবাদ সারাদিন