করোনাকালেও উৎপাদনে ‘শৃংখলিত’ জীবনে বাধ্যগত চাশিল্পের মানুষগুলো

|| সব্যসাচী পুরকায়স্থ , শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) থেকে ||

করোনাবিপর্যস্ত পরিস্থিতিতেও পিছিয়ে পড়া জীবিকায় অভ্যস্ত এক করোনাসচেতন অঞ্চল দেশের চা বাগান। সীমিত চাহিদায় জীবনধারনে অভ্যস্ত এসব চা শ্রমিকেরা খুব সহজেই মেনে চলছেন করোনা স্বাস্থ্যবিধি।

গেল ২০শে মে ছিল চা শ্রমিক দিবস। আজ থেকে ৯৯ বছর আগে, ১৯২১ সালের ২০শে মে ‘মুল্লক চলো’ আওয়াজ তুলে প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক চাঁদপুরে পৌঁছেছিলেন স্টিমারে নিজ নিজ এলাকায় ফিরে যাওয়ার জন্য। সেখানে বাধা দেয় মালিকপক্ষ। বাগানমালিকদের স্বার্থরক্ষাকারী ব্রিটিশ সরকারের গোর্খা সৈন্যরা পাখির মতো গুলি করে হত্যা করে শ্রমিকদের আর লাশ ভাসিয়ে দেওয়া হয় মেঘনা নদীতে। বাকিদেরকে ফিরিয়ে আনা হয় চাশিল্পের বেধেধরা ঘেরাটোপের বাধ্যগত জীবনে।

যে বাধ্যগত যাপিতজীবনের অভ্যস্ততাই যেন করোনাসময়ে ভাল রেখেছে চা শিল্পের সকলকে। শ্রমিকদের বাধ্যগত যাপিতজীবন পদ্ধতিকে পুঁজি করে খোলা রাখা হয়েছে দেশের সবগুলো চা বাগান। করোনার প্রথম দিকে মালিকদের এমন সিদ্ধান্তে অনেকেই প্রকাশ করেছেন খেদ। আশংকা থেকে দাবি তুলেছেন চা বাগান বন্ধ রাখতে।

কিন্তু, এই শিল্পের কর্মঅভ্যস্ততাই হচ্ছে সাংঘাতিক রকমের শৃংখলার সঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনা করা। চা পাতা তোলা থেকে শুরু করে তা কারখানায় পৌঁছে দেওয়ার শ্রমিকদের এই কর্মপথে নিয়মতান্ত্রিকভাবেই মেনে চলতে হয় জনদূরত্ব। আর সেই সুবিধাটাই সাপে বড় হয়েছে বাগান মালিকদের জন্য।

তবে ছোট ছোট দু:স্থ ঘরগুলোতে কেমন থাকেন তা দেখার ফুরসত যেমন আগেও ছিল না। এখনো দেখার কেউ নেই কারখানা কাজের বাইরে এইসব চা শ্রমিকরা কতটা মানতে পারছেন করোনা স্বাস্থ্যবিধি।

বাগান কড়চা

বাংলাদেশে চা বাগান রয়েছে ১৬৭টি যা, টি বোর্ডে নিবন্ধিত এবং ফাঁড়ি বাগানসহ মোট ২৪০টি, যেগুলো ব্যক্তিমালিকানাধীন এবং সমতলে পঞ্চগড়, লালমনিহাটের নতুন চাষ শুরু করা বাগান নিয়ে। এগুলোর মধ্যে মৌলভীবাজারেই রয়েছে ৯১টি, আর চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলে রয়েছে ৪০টি।

শ্রমিকদের মৌলিক সুবিধা(!) (যা কিনা আজকের সভ্যসমাজের প্রেক্ষিতে মানবেতর বৈকি), চা আহরণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং বাজারজাতকরণ এমন স্থাপনাজাত সুবিধা যে সব বাগানে থাকে সেগুলোকে বলা হয় ‘টি এস্টেট’। আর যেগুলোতে এসব স্থাপনা নেই এবং ২৫ একর জমির বেশী জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠা সেগুলোকে ‘চা বাগান’ হিসেবে ধরা হয়।

করোনায় স্বাস্থ্যসুরক্ষা

দেশের রফতানি আয়ের এই খাতে উৎপাদন চালু রাখতে বাংলাদেশ চা বোর্ড, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, বিটিআরআই, ডিডিএল কার্যালয়, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের প্রত্যক্ষ তত্বাবধান ও কঠোর মনিটরিংয়ে খোলা রাখা হয়েছে সব টি এস্টেট ও চা বাগান।
মালিক কর্তৃপক্ষ বলছেন, উৎপাদন চালু রাখতে এ অঞ্চলের প্রায় সবকটি ছোট-বড় বাগান নিজব্যবস্থাপনায় শ্রমিকদের জন্য নিয়মিত মাস্ক দেওয়া, ও সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কারখানায় ঢোকার আগে শ্রমিকদের নন কন্ট্রাক্ট থার্মোমিটার দিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে শরীরের তাপমাত্রা।

প্রত্যেকটি চা বাগান কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের সচেতন রাখতে এবং নিয়ম মেনে চলার অভ্যাস গড়তে সমন্বিত স্বেচ্ছাসেবক টিম কাজ করছে। যারা চা বাগানের শ্রমিক ও অধিবাসীদের করোনা মোকাবেলায় করনীয় সম্পর্কে দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন।

এছাড়া চা শিল্পের সঙ্গে জড়িত কর্মচারীরা চা বাগানে থেকেই প্রাত্যাহিক কাজকর্ম করছেন। ঝুঁকি এড়াতে জেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় প্রায় প্রত্যেকটি চা বাগানে বাগানের বাইরের মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

প্রতিটি বাগানের প্রবেশমূখে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট ও জীবানুনাশক সুরক্ষা ব্যবস্থা। জরুরি দরকার ছাড়া বাগান পাশ্ববর্তী শহরে যেতে শ্রমিক ও কর্মচারীদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। ব্যবস্থাপনা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্যও অনুসরণ করা হচ্ছে একই নীতি। দুয়েকটি ছোট বাগানে করোনার দু:সময়ে, মনুষ্যসৃষ্ট হ্যাজার্ড প্রতিরোধে প্রণীত স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি)পুর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়নে কাজ করছে সংশ্লিষ্ট সরকারী দপ্তরগুলো। ফলে, এখন পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়ে চললেও চা বাগান এলাকায় তেমনটা হয়নি।

করোনা সংক্রমণ

এই অঞ্চলের করোনা আক্রান্তের পরিসংখ্যান বলছে, এরমধ্যেই কমলগঞ্জ উপজেলার আলীনগর চা বাগানের শুনছড়া ফাঁড়িবাগানে একজন, শ্রীমঙ্গলের ফুলছড়া চা বাগানের একজন, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার চন্ডিছড়া চা বাগানের একজন এবং কুলাউড়ার রাজকী চা বাগানের একজনের শরীরে করোনা সংক্রমণের তথ্য জানা গেছে। এদের সবাই এরা সবাই করোনা উপদ্রুত অঞ্চল থেকেই এসেছিলেন। স্থানীয়ভাবে কেউ সংক্রমিত হয়েছেন এমন খবর পাওয়া যায়নি।

তবে, ঈদের এই সময়ে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ঘরমুখো মানুষ নিজেদের এলাকায় ফিরছেন বিভিন্নভাবে। নাড়ীর টানে ঘরে ফেরা মানুষরা আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রতিদিনই আসছেন। যারা এসেই পড়েছেন তাদের অনেককেই স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ কোয়ারেন্টিন করছে।

স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্টরা বলছেন, মৌলভীবাজারের সাতটি উপজেলার সবগুলোতেই রয়েছে চা বাগান। এসব উপজেলায় উপসর্গহীনর কারো করোনা থেকে থাকলে তাদের সংস্পর্শে আসলে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তাদের উদ্বেগের জায়গাটা ঠিক এখানেই আর তা হলো, কোনওভাবে যদি তা চা বাগান এলাকায় সংক্রমিত হয় তাহলে চা বাগানের বর্তমান স্বাভাবিক অবস্থা রাখা দুষ্কর হয়ে পড়বে।

সুরক্ষা নিয়ে শ্রমিক কথন

করোনা সাবধানতার কারনে সাধারণ চা শ্রমিকের সরেজমিনে বক্তব্য গ্রহণ করা না গেলেও মুঠোফোনে অনেক ক‘জন চা শ্রমিক জানান, ‘আমরা যারা চা বাগানে মাঠে কাজ করছি তাদের মাঠেই পাতি তোলার কাজ করানো হচ্ছে, কারখানায় যারা কাজ করছে তাদের কারখানায়ই। বাংলো, কোয়ার্টারে যারা কাজ করছি তাদেরও অদল – বদল করা হচ্ছে না এই করোনার সময়ে। সাহেব, বাবু, সরদার (সুপারভাইজার) ও ছুকরা (তরুন) স্বেচ্ছাসেবীর সহায়তায় আমরা নিয়ম মেনে কাজ করছি এবং মজুরী ও রেশন পাচ্ছি।’

তবে তারা বাগানগুলোতে মালিকের ব্যবস্থাপনায় সন্দেহজনক ব্যক্তির জন্য আলাদা ‘করোনা ঘর’ (ফ্যাসিলেটিজ কোয়ারেন্টিন) তৈরীর দাবি জানান। যাতে কারো লক্ষণ দেখা গেলে তাকে যেন নিজের ঘরে না রেখে ওখানে রাখা যায়।

গা সয়ে নেওয়া বঞ্চনা

নিয়মতান্ত্রিক ও সুশৃংখল কর্মপদ্ধতিতে বাধ্যগত শ্রমিকরা করোনাদুর্যোগে উৎপাদন চালু রাখলেও তাদের যাপিতজীবনে আসেনি এতোটুকু আর্থিক স্বস্তি। তাদেরকে দিয়ে কাজ করানো হলেও অর্থনৈতিক বঞ্চনার বিষয়টি রয়ে গেছে আগের মতই।

দিনে মাত্র শ্রমিক প্রতি ১০২ টাকা মজুরীতে করোনাদুর্যোগ সামাল দিতে বেসামাল অবস্থা শ্রমিকদের। স্থানীয়ভাবে, নিত্যপণ্যের বাজার মূল্যের উর্ধগতির কারনে এই মজুরীতে কিছুতেই খাদ্যাভাব মেটানো সম্ভব হচ্ছে না তাদের পক্ষে। এর সঙ্গে রয়েছে আগে থেকে চলে আসা নানানো বঞ্চনা। এসবের বিরুদ্ধে এই করোনাদুর্যোগেও বিক্ষিপ্তভাবে তৈরি হচ্ছে অসন্তোষ।

সংক্ষোভ বিক্ষোভ আর অসন্তোষ

এমন করোনাদুর্যোগেও কাজ করিয়ে নিলেও মজুরি ও অন্যান্য সুবিধা না বাড়ানোয় বিক্ষিপ্তভাবে বিক্ষোভ ও অসন্তোষ জানাচ্ছেন কোন কোন বাগান ও এস্টেটের শ্রমিকরা। এমনি একটি বাগান রেমি। হবিগঞ্জের চুনারুঘাট সীমান্তবর্তী এই বাগানে প্রায় দু’মাস ধরে চলছে অচলাবস্থা। নানানো দাবী দাওয়া নিয়ে শ্রমিক ও মালিকপক্ষের মধ্যে এমন অসন্তোষে প্রহৃত হয়েছেন চা বাগানের ব্যবস্থাপক।

স্থানীয় সুত্র জানায়, গত ২রা মার্চ খেলার মাঠে বাগান ব্যবস্থাপক গাছের চারা রোপণ করতে গেলে প্রতিবাদী শ্রমিকদের সঙ্গে তার বিরোধিতা করে। ৪ ও ৫ই মার্চ চা শ্রমিকরা এর প্রতিবাদে এক ঘণ্টা প্রতিকী কর্মবিরতি পালন করে। ৫ই মার্চ সকালে চা-শ্রমিক নেতারা সমাধানের আশ্বাস দেন। কিন্তু, বিরোধের জের ধরে বাগান ব্যবস্থাপক চুনারুঘাট থানায় অভিযোগ করলে ৫ই মার্চ বিকেলে পুলিশ তদন্ত করতে বাগানে আসে। এতে আরো ক্ষেপে যায় শ্রমিকরা। এরপর ৬ই মার্চ বাগান ব্যবস্থাপক দিলীপ সরকারের সঙ্গে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে শ্রমিকরা তাকে মারধর করে।

এ ঘটনায় রেমা চা বাগানের সাবেক সহকারী ব্যবস্থাপক ও বর্তমান ইউপি সদস্য নির্মল দেব, পঞ্চায়েত সদস্য মানিক দাশসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে চা বাগান কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকেই এ চা বাগানে সৃষ্টি হয় অচলাবস্থা।

করোনার এ দুর্যোগপুর্ণ পরিস্থিতিতে বিরোধের শান্তিপুর্ণ সমাধানের চেষ্টায় জেলা পুলিশ দু’পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসলেও এর সমাধান করা যায়নি। বরং বাগানের ৩৮৫টি স্থায়ী শ্রমিক পরিবারসহ আরো কিছু অস্থায়ী শ্রমিক পরিবারকে কাজে যোগ দিতে দেয়নি বাগান কর্তৃপক্ষ। যে কারণে যারপর নাই খাদ্য ও অর্থসংকটে পড়েছে তারা। হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসন থেকে যে খাদ্যসহায়তা দিয়েছে তাও পর্যাপ্ত নয়। জেলা প্রশাসক জানালেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।

করোনাদুর্যোগে চা শ্রমিকদের কাজ চালূ থাকলেও চা শ্রমগোষ্ঠি এলাকার শ্রমিক পরিবারের অনেকেই কাজ করেন বাগানের বাইরের প্রতিষ্ঠানে। যাদের আয়ে শ্রমিক পরিবারের স্বচ্ছলতা আনে অনেকটাই। কিন্তু বাগানের বাইরে কাজ করিয়ে সেইসব মানুষের কাজ না থাকায় অভাব বেড়েছে শ্রমিকপরিবারগুলোতে।

যা বলছেন শ্রমিক সংগঠনগেুলো

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাখন লাল কর্মকার বলেন, ‘করোনার ঝুঁকিতেও কাজ করে চলেছেন চা শ্রমিকরা। মালিকরা তাদের স্বার্থে উৎপাদন চালু রাখতে যেসব ব্যবস্থা নিয়েছে তাতে কিছুটা হলেও স্বাস্থ্যস্বস্তি তৈরি হয়েছে বৈকি। কিন্তু আমাদের ভূমির যে অধিকার সে দাবিতো রয়েই গেছে। চা শিল্পের সঙ্গে শত বছর ধরে জীবনজড়ানো শ্রমিকদের নিজেদের নামে জমি না থাকায় তারা বঞ্চিত হচ্ছে রাষ্ট্রিয় সব ধরণের সহায়তা থেকে। নিজনামে জমি না থাকায় শ্রমিকদেরা পাবেন না ব্যাংখঋণ। এই পরিস্থিতিতে আমরা যে তিমিরে রয়েছি, সেই তিমিরেই থেকে যাচ্ছি।

অন্যদিকে একই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরী চা বাগানগুলোতে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না দাবী করে বলেন, অনেকটা জীবনঝুঁকি নিয়েই কারাখানার উৎপাদন চালু রেখেছে শ্রমিকরা। কিন্তু মজুরীসহ সাধারন ছুটির দাবি এখনো মানা হয়নি। ন্যায্য মজুরীসহ যৌক্তিক ছুটিছাটা নিশ্চিত করতে মালিক ও সরকারসংশ্লিষ্টদের বরাবরে আবেদন করা হলেও কোন প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।

তার ওপর করোনা সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে তাতে চা বাগানগুলোতেও সংক্রমণ বিস্তারের যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে। আর এমনটা হলে কাজ বন্ধ রাখা ছাড়া শ্রমিকদের সামনে আর কোনো পথ খোলা থাকবে না।

জীবনের আগে জীবিকা নয় জানিয়ে রামভজন কৈরী বলেন, চা শ্রমিকদের যেকোন পরিস্থিতিতে সুরক্ষায় ও জীবননির্বাহের জন্য বাগানমালিক ও সরকার সংশ্লিষ্টদের পুর্বপ্রস্তুতি থাকতে হবে। ঝুঁকিতে থেকেও কাজ চালু রাখায় চা শ্রমিকদের জন্য আর্থিক প্রণোদনারও দাবি জানান এই শ্রমিক নেতা।

বিভিন্ন টি এস্টেট ও বাগানে ১৮ মাসের এরিয়ার বকেয়া রয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশে চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা বলেন, মালিকপক্ষ ১১০ টাকা দিতে চাইছে, আমরা ৩০০ টাকা দাবী করছি, আলোচনার মাধ্যমে একটা গ্রহণযোগ্য মজুরী নির্ধারণ করা জরুরী।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নকে চা শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষায় একমাত্র নিবন্ধিত ট্রেড ইউনিয়ন জানিয়ে বিজয় হাজরা বলের, শ্রমিকের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আমরাই নেতৃত্ব দিয়ে আসছি। কিন্তু বতর্মান করোনা পরিস্থিতিতে মজুরী বাড়ানোসহ অন্যান্য দাবিতে মালিকপক্ষের সঙ্গে কোন ধরনের বৈঠক করা যাচ্ছে না।

চা জনগোষ্টির নারীনেত্রী গীতা কানু মুঠোফোনে সংবাদ সারাবেলাকে বলেন, দুর্যোগপরিস্থিতিতে সবকিছু শতভাগ স্বাভাবিকভাবে চলবে সেটা ভাবাও অজ্ঞানতার পরিচায়ক। দুর্যোগকে ব্যবস্থাপনা করে কিভাবে শ্রমিক–মালিক ও শিল্পকে ক্ষতির হাত থেকে যতটা সম্ভব রক্ষা করা যায় সেটাই গুরুত্বপুর্ণ। রেমা চা বাগানের অচলাবস্থা প্রসঙ্গে এই নারীনেত্রী বলেন, করোনাকালে আন্দোলন–সংগ্রাম বেশ ঝুঁকিপুর্ণ। তারপরও এর গ্রহণযোগ্য সুরাহা দাবিতে সাধারণ শ্রমিকদের সঙ্গে শিগগিরই আন্দোলনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।

কর্তৃপক্ষীয় অবস্থান

চা বোর্ডের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের পরিচালক ড. রফিকুল হক জানান, বাগানে কোন প্রবাসী থাকলে তাদের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে এবং সবসময় করোনা বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখতে বলেছেন তারা।

বর্তমানে কোনো বাগান লে–অফ করেনি জানিয়ে শ্রীমঙ্গল বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের কর্মকর্তা নাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রেমা চা বাগানের অচলাবস্থা নিরসনে জেলা প্রশাসন কাজ করছেন। যেহেতু এটা এখন সাব-জুডিস মেটার তাই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করছি না।’

কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর শ্রীমঙ্গলের উপমহাপরিদর্শক মাহবুবুল হাসান বলেন, ‘আমরা করোনাকালে সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে এবং মোবাইলে বাগান ব্যবস্থাপক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখছি, মনিটরিং করছি সবকিছু।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, করোনা দুর্যোগে চা বাগানগুলোতে সরকারী তরফ থেকে চাল সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। শ্রমিকদের জন্য বিশেষ নগদ অর্থসাহায্য দিতে তালিকা অনুযায়ী চেক প্রস্তুত করা হচ্ছে, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতায় সুবিধাভোগী চা জনগোষ্টি অঞ্চলের অধিবাসী প্রাক্তন চা শ্রমিক ও বয়স্ক, বিধবাভাতা ইত্যাদি একটি বেসরকারী ব্যাংকের মাধ্যমে জিটুপি পদ্ধতিতে ভাতা দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।

মালিকদের আর্থিক দাবি

হবিগঞ্জের অনেক বাগান কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনার কারনে নিলাম বন্ধ থাকায় চা অবিক্রিত থেকে গেছে, ফলে মিলছে না চা বিক্রির বকেয়া টাকা। চায়ের গড় দাম কম পাওয়ায়, উৎপাদন খরচও তুলতে পারেননি এমন দাবী করছেন চা বাগান মালিকরা। করোনার এ পরিস্থিতির জন্য রাষ্ট্রিয় প্রণোদনা সহায়তা চান বাগান মালিকেরা।

এদিকে সামাজিক দুরত্ব নির্বাহে চলমান ২০২০-২১ অর্থবছরের ১ম চা নিলাম চট্টগ্রাম নিলাম কেন্দ্রে সোমবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর শ্রীমঙ্গল চা নিলাম কেন্দ্রের জন্য মাসে নির্ধারিত দুটি নিলাম চট্টগ্রাম নিলাম কেন্দ্রে সংযুক্তি করা হয়েছে এবং শ্রীমঙ্গল নিলাম কেন্দ্রকে দুটি বিশেষ নিলাম কার্যক্রম পরিচালনার কথা বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন টি প্লান্টার্স এন্ড ট্রেডার্স এসোসিয়েশনের (টিপিটিএবি) সদস্য সচিব জহর তরফদার#

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন