|| সারাবেলা প্রতিনিধি, সিলেট ||
সিলেটের আলোচিত তিনটি মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জের সাবেক মেয়র জিকে গৌছসহ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
তিনটি মামলার মধ্যে ২০০৪ সালে দিরাইয়ে আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় মানুষ হত্যায় করা আলাদা দুটি মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। একই সঙ্গে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজারে আওয়ামী লীগের ঈদ পরবর্তী জনসভা শেষে বের হওয়ার পথে গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হন সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহ এ এম এম কিবরিয়া। এই ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলার মধ্যে বিস্ফোরক ছোঁড়ার মামলায় অভিযোগ গঠন হলেও হত্যা মামলায় সাক্ষী উপস্থিত না থাকায় অভিযোগ গঠন করা যায়নি।
সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট সরওয়ার আহমদ চৌধুরী এ প্রসঙ্গে জানানা, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে কিবরিয়া হত্যা মামলার সাক্ষ্য নেওয়া যায়নি। তবে ওই ঘটনায় বিষ্ফোরক মামলার চার্জ গঠন ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সমাবেশে বোমা হামলার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক মামলায় আলাদা চার্জ গঠন করা হয় আসামিদের উপস্থিতিতেই। আলোচিত এসব মামলার পরবর্তী তারিখ ১৮ই নভেম্বর।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের আদালতে বাবর ও আরিফসহ মোট ১১ জনকে হাজির করা হয়। এসময় সিলেট সিটি কর্পরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নিজে আদালতে হাজির হলেও বাকি সকলকে সিলেটের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে হাজির করা হয়। বৃহস্পতিবার এই ৪টি মামলার সাক্ষ্য নেওয়ার দিন ধার্য ছিলো।
প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালের ২৭শে জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজারে আওয়ামী লীগের ঈদ-পরবর্তী জনসভা শেষে বের হওয়ার পথে গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হন সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহ এ এম এস কিবরিয়া। আহত কিবরিয়াকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেওয়ার পথে মারা যান তিনি। ওই হামলায় তাঁর ভাতিজা শাহ মঞ্জুরুল হুদা, আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা আবদুর রহিম, আবুল হোসেন ও সিদ্দিক আলী নিহত হন। আহত হন আরো ৭০ জন।
ঘটনার পরদিন আবদুল মজিদ খান বাদী হয়ে হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা করেন। পরে মামলা দুটি সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়। তদন্ত শেষে ২০০৫ সালে ১৮ই মার্চ শহীদ জিয়া স্মৃতি ও গবেষণা পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতিসহ ১০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে একটি অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। এই অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি আবেদন করেন বাদী মজিদ খান। পরে ২০০৭ সালে মামলাটি পুনর্তদন্তের জন্য আবারো সিআইডিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
মামলার পঞ্চম তদন্তকারী কর্মকর্তা সিলেট অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মেহেরুন্নেসা পারুল সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১৩ই নভেম্বর হবিগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেন। এতে নতুন করে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপির নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া, মাওলানা তাজউদ্দিনের ভগ্নিপতি হাফেজ মো. ইয়াহিয়াসহ আবু বকর, দেলোয়ার হোসেন, শেখ ফরিদ, আবদুল জলিল ও মাওলানা শেখ আবদুস সালামকে আসামি করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে বোমা হামলা ও হত্যার অভিযোগ আনা হয়।
এর আগে ২০০৫ সালের ১৮ই মার্চ প্রথম দফায় ১০ জনের বিরুদ্ধে ও দ্বিতীয় দফায় ২০১১ সালের ২০শে জুন আসামির সংখ্যা ১৬ জন বাড়িয়ে ২৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে দু’জন ভারতে মারা গেছেন। আর তৃতীয় দফায় আসামির সংখ্যা আরও নয়জন বাড়িয়ে এ মামলায় মোট আসামি করা হয় ৩৫ জনকে।