কোরবানির ঈদেও ব্যস্ততা নেই উলিপুরের কামারদের

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার কামারদের কোরবানির ঈদেও নেই আগেরমত ব্যস্ততা।  উপজেলার চৌমহনী বাজারের কামার মন্টু মিয়া (৪৫)।

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, উলিপুর (কুড়িগ্রাম) ||

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার কামারদের কোরবানির ঈদেও নেই আগেরমত ব্যস্ততা।  উপজেলার চৌমহনী বাজারের কামার মন্টু মিয়া (৪৫)। সংসারে রয়েছেন স্ত্রী, আর তিন ছেলে  তার বয়স যখন ১৫ বছর, তখন থেকে বাবার সঙ্গে হাতেখড়ি হয় এই পেশায়। বাপ-দাদার পেশা ৩০ বছর ধরে জড়িয়ে আছেন তিনি।

মন্টু কামার বলেন, গত বছর থেকে করোনার কারণে মন্দাভাব যাচ্ছে তার। এছাড়াও কয়লা, লোহাসহ অন্যান্য উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ার ফলে নতুন দা, বটিসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দামও বেড়ে গেছে। বছরের মধ্যে ১১ মাসই বসে থাকতে হয়। শুধু কোরবানির ঈদ এলেই ব্যস্ততা পুরোদমে বেড়ে যায় কিন্তু গত বছর থেকে করোনার কারণে মন্দাভাব যাচ্ছে তার। কোরবানির ঈদেও নেই আগেরমত ব্যস্ততা। মূলত কোরবানির ঈদের দিকে চেয়ে থাকেন তিনি। এ সময় কাজ করে সারা বছরের রোজগার হয় তার। কিন্তু করোনার কারণে গত বছরের মতো এ বছরও কাজ কমে গেছে। আগে ঈদের সময় যেখানে প্রতিদিন তিনি এক-দুই হাজার টাকা রোজগার করতেন, সেখানে এখন আয় হয় তিন-চারশ টাকার মতো। ফলে পাঁচ সদস্যের পরিবারের ভরণপোষণ চলাতে হিমমিশ খেতে হচ্ছে তাকে। তার মতো একই অবস্থা উপজেলার কামারদের পরিবারের।

রোববার সকালে (১৮ জুলাই) বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, করোনা মহামারির মধ্যে আর্থিক সংকট থাকায় এ বছর পশু কোরবানির সংখ্যা কমে যাওয়ায় তেমন কেউ অস্ত্র বানাতে আসছেন না। এতে সেই কর্মচাঞ্চল্য নেই। ক্রেতা না থাকায় অনেকে পশু কোরবানির সরঞ্জাম না বানিয়ে পাট মৌসুমকে কেন্দ্র করে কাস্তে বানাচ্ছেন। দু-একজন ক্রেতা আসলেও নতুন অস্ত্র না কিনে তারা পুরাতন অস্ত্র ঠিক করে নিচ্ছেন।

পশু জবাই করা, মাংস কাটা ও চামডা ছাডানোর জন্য প্রয়োজন হয় চাকু, চাপাতি, দাসহ নানা ধরনের উপকরণের। কিন্তু করোনার কারণে এ বছর চাকু, চাপাতিসহ বিভিন্ন অস্ত্র আগাম তৈরি করে রাখেননি কামাররা।

ক্রেতা উপজেলার কাশিয়াগাড়ী গ্রামের মিলন (৪০), মধুপুর গ্রামের মো.  শাহবুদ্দিন (৬০) বলেন, এবার করোনার কারণে হাতে কাজ না থাকায় কোরবানির পশু কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন। এ বছর একা কোরবানি দিতে পারছেন না। তবে কয়েকজন মিলে পশু কোরবানি দিলেও এ জন্য চাপাতি, ছুরিসহ বিভিন্ন অস্ত্রের দরকার। তবে এবার নতুন অস্ত্র নয়, পুরাতন অস্ত্র ধার দিতে এসেছেন।

ক্রেতা উপজেলার মাদরটারী গ্রামের আবু বক্কর, মধুপুর গ্রামের ছামাদ আলী বলেন, ‘করোনার কারণে কয়েকবার লকডাউন থাকায় আর্থিক অনাটনের রয়েছি। যে কারণে নতুন অস্ত্র তৈরি করা সম্ভব হয়নি। তবে পুরাতন অস্ত্র ঠিক করে এ বছর কোরবানির পশু জবাই করবো।

একই এলাকার আবদুল হাকিম, ছালাম, মোহাম্মদ আলী কামার বলেন, করোনার কারণে কোরবানির সরঞ্জাম বানাতেও তেমন কেউ আসছে না। দু-একজন যা এসেছেন, তারা পুরাতন অস্ত্র ঠিক করে নিয়ে যাচ্ছেন। যে কারণে এ বছর আগাম অস্ত্র বানাননি তিনি।

এ বছর লোহা, কয়লা প্রভৃতির দাম আগের থেকে বেশি হওয়ায় উৎপাদিত মালামালও বেশিদামে বিক্রি করতে হচ্ছে। কিন্তু ক্রেতা সংকটের কারণে তেমন বিক্রি করতে পারছেন না। এতে তাদের সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে।

সংবাদ সারাদিন