পানি কমলেও সিরাজগঞ্জে বন্যা আর বৃষ্টিতে বাড়ছে দুর্ভোগ

যমুনার পানি সিরাজগঞ্জে সামান্য কমলেও এখনও বইছে বিপৎসীমার অনেক উপর দিয়ে। ফলে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্হিতি এখনো আগের মতই রয়ে গেছে। এরই মধ্যে টানা ভারি বৃষ্টি যেন দুর্গত মানুষদের কাছে মরার ওপর খারার ঘা।

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, সিরাজগঞ্জ ||

যমুনার পানি সিরাজগঞ্জে সামান্য কমলেও এখনও বইছে বিপৎসীমার অনেক উপর দিয়ে। ফলে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্হিতি এখনো আগের মতই রয়ে গেছে। এরই মধ্যে টানা ভারি বৃষ্টি যেন দুর্গত মানুষদের কাছে মরার ওপর খারার ঘা।

বিশেষ করে যারা বাঁধ ও উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়ে পলিথিনের তাঁবু টানিয়ে রাত পার করছিল তাদের হয়েছে নাকাল অবস্থা। এদিকে বেলকুচি পৌর এলাকার দশ হাজার দুর্গত পরিবারের জন্য সরকারিভাবে মিলেছে মাত্র ৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার! আর সোমবার এগুলোই দুর্গতদের দিয়েছেন মেয়র আশানুর বিশ্বাস।

জেলার সোয়া দুই লাখ ভানবাসি পানিবন্দি মানুষদের নেই শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, শিশুখাদ্য এবং ওষুধপত্র। চাল ডাল সামান্য থাকলেও জ্বালানি সংকটে তাও রান্না করার কোন উপায় নেই। চারদেকে পানিতে সয়লাব হওয়ায় পয়:কাজ হয়ে উঠেছে অন্যতম সমস্য।

ঘরের মধ্যে পানি থৈই থৈই, নিজেদেরই থাকা-খাবারের উপায় নেই, তার ওপর গরু ছাগল নিয়ে যারপর নাই বেকায়দায় পড়েছে পানিবন্দি মানুষেরা। বানে ভেসে যাচ্ছে কৃষক ও খামারিদের কোরবানির পশু বিক্রির সব চেষ্টা।

এদিকে গত ১২ ঘন্টায় সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি কমেছে মাত্র ৩ সেন্টিমিটার ও কাজিপুর পয়েন্টে কমেছে ১০ সেন্টিমিটার। মঙ্গলবার সকাল ৬ টায় সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষাবাঁধের হার্ডপয়েন্টে ৬৯ সেন্টিমিটার ও কাজিপুর পয়েন্টে ৭৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বাইছে যমুনার পানি।

পানি কমার সময়ে নদী ভাঙনের মাত্রাও বাড়ছে। আতংকে দিনরাত পার করছে যমুনাপাড়ের মানুষেরা। দু’দফা ভাঙনে জেলার উত্তরে সিরাজগঞ্জ সদরের শিমলা স্পার নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার পর দক্ষিণে সোমবার এনায়েতপুরের বেতিল স্পার-১ এর ৭০ মিটার এলাকা যমুনার তীব্র স্রোতে ধ্বসে গেছে।

বেলকুচিতে খাবারের জন্য হাহাকার

জেলার শাহজাদপুর, চৌহালী, বেলকুচি, সদর ও কাজিপুর উপজেলার চরাঞ্চল ও গ্রামগুলোর ঘর-বাড়িতে ২ সপ্তাহ ধরে পানি থাকায় মানুষের দুর্ভোগ দিন দিনই বাড়ছে। বিশেষ করে নদী পারের বেলকুচি পৌর এলাকার পানিবন্দি মানুষের কোন কাজ নেই। আয় নেই, নেই খাবার। ঘর-বাড়িগুলো তলিয়ে আছে ১ থেকে ৩ ফুট পানিতে। নলকুপ ডুবে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট।

এই পরিস্থিতিতে বেলকুচি পৌর এলাকার চরাঞ্চলের মানুষ নৌকা দেখলেই ছুটে আসছে ত্রানের জন্য। সোমবার বিকেলে বন্যাবিপর্যস্ত দেলুয়া, রতনকান্দি, বাংগুয়া, সোহাগপুর, ক্ষিদ্রমাটিয়া এলাকায় সরকারি বরাদ্দের ৫০ বস্তা শুকনা খাবার বিতরন করেছেন পৌর মেয়র বেগম আশানুর বিশ্বাস। উপজেলা সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার খোরশেদ আলম সহ অন্য কাউন্সিলররা মেয়রের সঙ্গে ছিলেন।

ত্রাণ নিতে আসা ছমিরন বেগম, আরদশ আলী ও ছালাম হোসেন জানান, বন্যার পানিতে জমির সব ফসল তলিয়ে গেছে। খেয়ে না খেয়ে চলছে সংসার। এই অবস্থায় কোন সহযোগিতা আমরা পাইনি। এখানে আমরা হাজার-হাজার পরিবার বন্যা কবলিত। অথচ খাদ্য আনা হয়েছে মাত্র ৫০ প্যাকেট। তা দিয়ে কি হবে?

ত্রাণের অপ্রতুলতা নিয়ে মেয়র বেগম আশানুর বিশ্বাস জানান, পৌরসভার বেশীর ভাগ এলাকা যমুনা তীরবর্তী চরাঞ্চল। ১০ হাজারের বেশী পরিবারের জন্য মাত্র ৫০ প্যাকেট শুকনা খাবার সরকারিভাবে বরাদ্দ মিলেছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুব সামান্য হওয়ায় আমরা মেয়র, কাউন্সিলররা বিড়ম্বনায় পড়েছি। সরকার ও আমরা মিলে করোনাকালে যথাসাধ্য খাদ্যসামগ্রী বিতরন করেছি। এখন এই বন্যায় সেইভাবে ধনীমানুষেরা এগিয়ে আসছে না। তাই সব মিলিয়ে সবাই দুরাবস্থায়। আর সরকারও কত দেবে। এখন নিজেদের যার-যার সাধ্যমত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন