চলাচল বন্ধ করে মহাসড়কের কাজ, রাজশাহীতে লাখো মানুষের দুর্ভোগ

ঠিকাদারের লোক পরিচয়ে একজন বলেন, ‘কাজের সময় রাস্তা দিয়ে গাড়ী চলাচল করলে আবার নতুন করে সংস্কার করতে হবে। তাই সাময়িকভাবে চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কাজ শেষ হলে খুলে দেওয়া হবে।’

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, রাজশাহী||

রাজশাহী সিটি বাইপাস নামে পরিচিত রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কের বহরমপুর-কাশিয়াডাঙ্গা দুই-লেন সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ শুরু হয় ৬ মাস আগে। ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে তিন কিলোমিটার সড়ক প্রসস্তকরণের কাজ করছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন। কিন্তু প্রায় সপ্তাহ ধরে চারটি লেনই বন্ধ করে কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে এই রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী লাখো মানুষ।

স্থানীয় ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের দু’জন প্রভাবশালী নেতার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এ কাজটি করছে। এদের একজন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের বিগত কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক, অন্যজন আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া সাবেক বিএনপি নেতা। তাদের প্রভাবের কারণে পুরো রাস্তা বন্ধ করে কাজ চালানো হচ্ছে।

জানা যায়, রাজশাহী মহানগরীর ভিতর দিয়ে যাওয়া রাজশাহী-চাঁপাই মহাসড়কের এ অংশটির প্রসস্তকরণ কাজ চলছে প্রায় ৬ মাস ধরে। গত ১৫দিন ধরে হঠাৎ রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ করে কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কার্পেটিংয়ের সময় সাধারণত রাস্তার এক পাশ বন্ধ করে আরেক পাশ দিয়ে যান চলাচলের ব্যবস্থা রাখা হয়। তাতে কিছুটা সাময়িক ক্ষতি হয় এবং সেটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিজ দায়িত্বে ঠিক করে দেয়। কিন্তু ঝামেলা এড়াতে মহাসড়কটিই বন্ধ করে চালানো হচ্ছে প্রসস্তকরণ কাজ। আর তাতে রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী লাখো মানুষকে পড়তে হয়েছে ব্যাপক ভোগান্তিতে।

সরেজমিন দেখা গেছে, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ সংলগ্ন নগরীর বহুরমপুর বাইপাস মোড় রেলক্রসিংয়ের কাছে ইট-বালু ভরাট করে  সড়ক বন্ধ রাখা হয়েছে। অপর প্রান্তে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে মহানগরীতে প্রবেশের স্থান চারকুঠার মোড় এলাকায় ট্রাক থেকে সড়কের মাঝখানে উন্নয়নকাজের মালামাল ফেলা হয়েছে। ফলে দুই পাশ থেকেই বন্ধ হয়ে গেছে যান চলাচল।

কয়েক জন বাস-ট্রাক ও অটো চালক অভিযোগ করে বলেন,‘এভাবে গোটা সড়ক বন্ধ করে কখনো মহাসড়কের কাজ করতে দেখিনি। সাধারণত সড়কের এক পাশ বন্ধ করে  কার্পেটিং করা হয়। অন্য পাশ দিয়ে তখন যান চলাচল করতে পারে। কিন্তু পুরো সড়ক বন্ধ করে কাজ চালাচ্ছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এতে চলাচলকারী যানবাহনকে কয়েক কিলোমিটার বেশি পথ ঘুরে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এর ফলে যাত্রীদের যেমন হয়রানি হচ্ছে, তেমনি আমাদেরও বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। হাজার হাজার যাত্রী নির্দিষ্ট গন্তব্যে নামতেও পারছেন না রাস্তাটি বন্ধ থাকায়।’

 স্থানীয়দের কয়েকজন জানান, ‘এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন লাখো মানুষের চলাচল। কারণ এটি মহাসড়ক। কাজ শুরুর পর থেকে কষ্ট করে হলেও যান চলাচল করতে পারছিলো। কিন্তু এখন সড়কটি বন্ধ করে দিয়েছে ঠিকাদারের লোকজন। ফলে এইসব এলাকায় আসতে হচ্ছে দীর্ঘ পথ হেঁটে অথবা  বিকল্প পথ হয়ে। এতে বাড়তি ভাড়াও গুনতে হচ্ছে।

অন্যদিকে রাজশাহী সিটি করপোরেশনে (রাসিক) যোগাযোগ করা হলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী বলেন, ‘ঠিকাদারের সামান্য ক্ষতি এড়াতে রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে কাজ করার কোনো নিয়ম নাই। কিন্তু তারা কেন এটি করলেন সেটি তাদের নিজস্ব ব্যাপার। তার পরেও বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখবো।’

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে ঠিকাদারদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের চেষ্টা করে তাদেরকে পাওয়া যায়নি। পরে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানে  যোগাযোগ করলে ঠিকাদারের লোক পরিচয়ে একজন বলেন, ‘কাজের সময় রাস্তা দিয়ে গাড়ী চলাচল করলে আবার নতুন করে সংস্কার করতে হবে। তাই সাময়িকভাবে চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কাজ শেষ হলে খুলে দেওয়া হবে।’

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন