|| ইমরান হোসাইন, সিরাজগঞ্জ থেকে ||
শহর থেকে দূরের পিছিয়ে পড়া গ্রাম চর গাড়াবাড়ি। সেই গ্রামের যুবকরা ভেবেছে মানুষ হতে হলে শিক্ষার বিকল্প নেই। আর সে শিক্ষা হতে হবে অপ্রাতিষ্ঠানিক। যা মানুষকে করে তুলবে আলোকিত। যে আলোয় পাল্টে যাবে মানুষ, সমাজ ও রাষ্ট্র। এমনি ভাবনা থেকে চর গারাবাড়ির কয়েক যুবকের প্রয়াস বই পড়ার আয়োজন। যে আয়োজন থেকে গড়ে উঠেছে একটি পাঠাগার। নাম জ্ঞানদ্বীপ পাঠাগার।
চর গারাবাড়ি সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার যুমনাঅধ্যুষিত একটি চর। শহরসভ্যতা থেকে বেশ অনেকটা দূরে হওয়ায় ওরা এখনো ভাবতে পারে নিজের মত করে।
তাই ওপর প্রয়াস নিতে পারে নিজেদের মত করে। সেই নিজেদের মত করে মানুষ হয়ে উঠবার প্রয়াস থেকেই চলছে জ্ঞানদ্বীপ পাঠাগারের পথ চলা। পাঠাগারের পেছনের মানুষগুলোর বার্তা হচ্ছে যে জ্ঞান নিরঅহংকারে ঋদ্ধ, যে প্রজ্ঞা মানুষকে সততা এবং অন্যের কল্যাণে উদ্বুদ্ধ করে সেই জ্ঞানে সমৃদ্ধরাইতো আলোকিত মানুষ। আর সেই আলোকিত মানুষ হতে হলে অবশ্যই হতে হবে ভালো মানুষ। আর ভালো মানুষ হতে হলে দরকার বই পড়া। যে বই সমাজ থেকে দূর করবে সমাজ থেকে সব কুসংস্কার ও অজ্ঞানতার অন্ধকার।
এমন ভাবনার ফসল জ্ঞানদীপ পাঠাগার। যার সভাপতি গারাবাড়ির যুবক জাকির মাহি। নিজেদের প্রয়াস সম্পর্কে মাহি বললেন, “বর্তমানে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি গতিশীল থাকলেও একইসাথে জাতির বুদ্ধিবৃত্তিক মুক্তি না ঘটলে আমাদের এই অগ্রগতি কোনো কাজেই আসবে না। জাতি হিসেবে আমরা অসভ্য ও বর্বর হয়ে উঠবো। তেমনি প্রতিনিয়ত আমরা ধার করা জ্ঞানে নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি। বলা যায়— ইতিমধ্যে আমরা জাতি হিসেবে নিজস্ব জ্ঞানের অভাবে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে দেউলিয়া হতে চলেছি। এমতাবস্থায় জাতির প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক মুক্তি বা আলোকিত মানুষ ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্য আমাদের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা ‘জ্ঞানদীপ পাঠাগার’।”
একজন আলোকিত মানুষ, ১০০ জন সাধারণ মানুষ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ এই স্লোগান নিয়ে গ্রামের শিশু, কিশোর, তরুণ ও বয়োজ্যেষ্ঠদের জ্ঞান অর্জনের দুয়ার খুলে দিয়েছে জ্ঞানদ্বীপ পাঠাগার।
এই পাঠাগার সম্পর্কে কামারখন্দ উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা সবুজ আলী জানান, এধরণের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে আমরা বছর শেষে সরকারের পক্ষ থেকে কিছু সম্মানী দিয়ে থাকি। আর যারা নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেন তাদের কাজের বিষয়গুলো দেখে পর্যায়ক্রমে তালিকাভুক্ত করা হয়।