মন্ত্রীর সমালোচনা করে গ্রেফতার রাবি শিক্ষক জাহিদ এবার ‘বরখাস্ত’

|| সারাবেলা প্রতিবেদক, রাজশাহী ||

প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমকে নিয়ে ফেইসবুকে মন্তব্য করে গ্রেফতার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক জাহিদুর রহমানকে ‘সাময়িক’ বরখাস্ত করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কাজী জাহিদুর রহমানকে গত ১৭ই জুন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আবাসিক কোয়ার্টার থেকে গ্রেফতার করা হয়।

মামলায় মোহাম্মদ নাসিমকে নিয়ে মানহানিকর তথ্য প্রচারের অভিযোগ আনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জাহিদুর বিরুদ্ধে। গত ১৭ই জুন রাজশাহী শহরের সাগরপাড়ার বাসিন্দা আইনজীবী তাপস সাহা মতিহার থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫, ২৯ ও ৩১ ধারায় মামলা করেন শিক্ষক জাহিদের বিরুদ্ধে। তিনি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এম এ বারী জানিয়েছেন, শনিবার সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৯৯তম সিন্ডিকেট সভায় জাহিদুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী যদি কোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ফৌজদারি মামলায় গ্রেপ্তার হন, তাহলে তাকে সাময়িক বহিস্কারের বিধান রয়েছে। এই বিধান অনুসারেই ওই শিক্ষককে বহিস্কার করা হয়েছে। এটা কার্যকর হবে তাকে গ্রেফতারের দিন ১৮ই জুন থেকে।”

সিন্ডিকেট সভায় সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহান। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আব্দুস সোবহানকে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে গেফতার হয়ে কারাগারে যেতে হয়েছিল। এছাড়া ২০১৯ সালের ২রা ডিসেম্বর সোমবার তিনি কোন কর্তৃত্ব বলে উপাচার্য পদে বহাল, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছিল বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাই কোর্ট বেঞ্চ।

জাহিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ
মোহাম্মদ নাসিম অসুস্থ হওয়ার পর গত ১ ও ২রা জুন কাজী জাহিদুর তার ফেইসবুকে নাসিমকে ইঙ্গিত করে স্বাস্থ্যখাতসংশ্লিষ্ট কয়েকটি স্ট্যাটাস দেন। স্ট্যাটাসগুলো প্রথমে সেভাবে সামনে না আসলেও মোহাম্মদ নাসিম মারা যাওয়ার পর এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়।

এরপর ১৫ জুন কাজী জাহিদুর রহমানের লেখা সামনে এনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। তার একদিন বাদেই ১৭ই জুন রাতে রাজশাহীর আইনজীবী তাপস কুমার সাহা বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫, ২৯ এবং ৩১ ধারায় মতিহার থানায় মামলা জাহিদুর রহমানের ‍বিরুদ্ধে মামলা করেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ‘রাবি শিক্ষক তার ফেসবুক পোস্টে কারো নাম উল্লেখ করেননি। কিন্তু মামলার বাদী দাবি করেছেন, তার পোস্ট নাসিমের সমালোচনা করেই ছিল। জাহিদুর রহমান চ্যানেল আই অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত নাসিমের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কিত একটি সংবাদ শেয়ার করেন। সেখানে মন্তব্য করেন, এই সংবাদে পাঠকদের মন্তব্য সরকারের নজরে আনা উচিত। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ১ ও ২রা জুন মোহাম্মদ নাসিম যখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছিলেন তখন জাহিদুর রহমান আক্রমণাত্মক ও বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করেন। জাহিদুর রহমান নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ছিলেন। নাসিমের সমালোচনা করে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার পরে গত ১৬ই জুন দল থেকে তার সদস্য পদ বাতিল করা হয়।’

গত ১৭ই জুন রাতে মামলার পর সেই রাতেই জাহিদকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আবাসিক কোয়ার্টার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর রাজশাহী সিটি পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেছিলেন, “জাহিদুর রহমান ফেইসবুকে মোহাম্মদ নাসিমকে নিয়ে আজেবাজে কথা লিখে কটূক্তি করেছেন এই অভিযোগে মামলার পর তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”

উল্লেখ্য সরকারের সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম অসুস্থ হলে প্রথমে তাকে রাজধানী ঢাকার শ্যামলীতে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতিতে তাকে নেওয়া হয় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে। সেখানে তার মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করা হয়। গত ১৩ই জুন সকালে তিনি মারা যান। পরদিন রোববার সকালে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে মায়ের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হন এই আওয়ামী লীগ নেতা।

নাসিমের মৃত্যুর পর তাকে নিয়ে ‘বিরূপ মন্তব্য’ করে সেদিনই অর্থাৎ ১৩ই জুন গ্রেফতার হন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রভাষক সিরাজুম মুনিরা।

জাহিদ ও সিরাজুম মুনিরাকে গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন দেশের অধিকারকর্মীরা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন