|| আনোয়ার হোসেন, কুড়িগ্রাম থেকে ||
কুড়িগ্রামের নদ নদীর পানি কিছুটা কমতে শুরু করলেও সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আগের মতই রয়েছে। জেলার ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদের পানি গত ৫ দিন ধরে বিপদ সীমার উপর দিয়ে বইছে। বানের পানিতে ডুবে মারা গেছে তিন শিশু শান্ত, বেলাল ও মোস্তাকিম। সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, গেল তিনদিনে জেলার বিভিন্ন স্থানে এসব শিশু মারা গেছে।
গেল ২৪ ঘন্টায় জেলার ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর সকল পয়েন্টে কয়েক সেন্টিমিটার করে পানি কমলেও এখনও তা বিপদসীমার অনেক ওপর দিয়ে বইছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ৮ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ৫ সন্টিমিটার কমে ৫৮ সেন্টিমিটার এবং ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে ১৭ সেন্টিমিটার কমে ৫৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে।
এদিকে, বন্যায় প্রতিদিনই নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এ পর্যন্ত জেলার ৮ উপজেলার ৭৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫৫টিই বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। এসব ইউনিয়নের দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানি কমলেও মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে দুর্গত এলাকায়। স্যানিটেশন সমস্যাও প্রকট আকার নিয়েছে। দেখা দিচ্ছে পানিবাহিত নানানো অসুখ বিসুখ।
বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে জেলার ৩ হাজার ৬২২ হেক্টর জমির ফসল। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা দিলীপ কুমার সাহা জানান, জেলার ৩টি পৌরসভা ও ৭৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫৫টিই এখন বন্যা কবলিত। আর ৩৫৭টি গ্রাম ভাসছে বন্যার পানিতে। এ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৯ দশমিক ৫০ কি.মি বাঁধ এবং ৩৭ কি.মি কাঁচা রাস্তা। ৫ শত পরিবার ভাঙ্গনের শিকার হয়ে ভিটেমাটি হারিয়েছেন।
জেলা প্রশাসক রেজাউল করিম জানান, আমরা ইতোমধ্যেই ৩৬ লাখ ৬৮ হাজার টাকা ও ৩০২ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দিয়েছি এবং তা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে বন্যার্ত মানুষের মাঝে তা বিতরণও করা হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জে যমুনাতেও বাড়ছে পানি
আমাদের সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর টানা বৃষ্টিতে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বাড়ছে। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় যমুনায় পানি বেড়ছে ১৪ সেন্টিমিটার। বইছে বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে। তবে জেলাবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে পানি কমার আভাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
পানি বাড়তে থাকায় জেলার চৌহালী, শাহজাদপুর, এনায়েতপুর, বেলকুচি কাজিপুর ও সদর উপজেলার চরাঞ্চলের নিচু এলাকার বেশ কিছু ঘর-বাড়ি ও রাস্তা-ঘাট তলিয়ে গেছে। দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ। কাচা ঘাস তলিয়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে পশুর খাবারের সংকট।