|| এম আর রকি, নওগাঁ থেকে ||
গেল কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি আর ভারত থেকে আসা ঢলের পানিতে নওগাঁর ১১টি জেলার মধ্যে ছয়টিই এখন নিমজ্জিত। ভেসে গেছে পুকুর, খাল-বিলের মাছ। শত শত একর জমির ফসল ও সবজির সবই পানির নিচে। জেলার কৃষি মৎস বিভাগের হিসাবে বন্যায় সার্বিক ক্ষতির পরিমান এখন পর্যন্ত এক শ’ কোটির টাকার মত।
এদিকে প্রতিবারের মত বাঁধ ভেঙ্গে নদীর পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় এলাকার মানুষ অনেকটাই দিশেহারা। তারা বলছেন, বন্যার আগে বাঁধগুলো ঠিকঠাকমত সংস্কার না করাতেই প্রতিবছর এভাবেই বন্যার পানিতে ডুবতে হচ্ছে তাদেরকে। বাঁধগুলো স্থায়ীভাবে মেরামত ও সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি আর ভারত থেকে আসা পানিতে নওগাঁর ছোট যমুনা ও আত্রাই নদীতে পানি এখন বিপৎসীমার উপর দিয়ে বইছে। গেল ১৫ই জুলাই মান্দা উপজেলায় আত্রাই নদীর উভয় তীরের নুরুল্লাবাদ উত্তরপাড়া, জোকাহাট, পাঁজরভাঙা, চকরামপুর ও কয়লাবাড়িতে ভেঙ্গে গেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ। এতে করে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে মান্দা-আত্রাই আঞ্চলিক সড়কের যোগাযোগব্যবস্থা।
ঠিক পরদিনই ১৬ই জুলাই সকালে বানের তোড়ে ভেঙ্গে যায় আত্রাই উপজেলার আহসানগঞ্জ-বান্দাইখাড়া সড়কের আহসানগঞ্জ স্লুইস গেটের দক্ষিণে জাত আমরুল জিয়ানী পাড়ার সামনের সড়ক। এতে নওগাঁ সদর, রানীনগর, আত্রাই, মান্দা, সাপাহার ও পোরশা উপজেলার বেশীর ভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। হঠাৎ করে পানি ঢুকে পড়ায় বিস্তর ক্ষতিতে পড়েছে কৃষক। ভেসে গেছে মাছের ঘের আর ধান-পাটের জমি।
আত্রাই উপজেলার জাত আমরুল গ্রামের মোবারক হোসেন বলেন, “আমার চার বিঘা জমির আউশ ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। আমন চাষের তৈরি করা ১০ কাঠা জমির বীজতলাও এখন পানির নিচে। নতুন করে বীজতলা তৈরি করতে গিয়ে আমন চাষে খরচ অনেকটাই বেশি পড়বে।”
প্রতিবছরই এই জেলার বেশীর ভাগ মানুষকে বন্যার ক্ষতিতে পড়তে হয় জানিয়ে মোবারক বলেন, “নদীগুলো খনন করার পাশাপাশি বাঁধগুলো ঠিকঠাক মেরামত করা হলে ক্ষতি অনেকটাই কম হতো।
দমদমা গ্রামের মৎস্যচাষি চয়েন উদ্দিন জানালেন, তিন বছরের জন্য তিনটি পুকুর তিন লাখ ৫৫ হাজার টাকায় ইজারা নিয়েছেন তিনি। এসব পুকুরে চাষ করেছেন রুই, কাতলা, ও মৃগেলসহ দেশীয় প্রজাতির মাছ। গত ১৫ই জুলাই আত্রাই নদীর মান্দা-আত্রাই সড়কের চকরামপুর ও কয়লাবাড়িতে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় আধ ঘন্টার মধ্যেই ভেসে যায় তিনটি পুকুর। একটি পুকুর থেকে পাঁচ মণের মতো মাছ তুলতে পারলেও বাকি মাছ বানের পানিতে ভেসে গেছে বলে জানান তিনি। বলেন, “হঠাৎ করেই বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় কোনো ধরণের পূর্ব প্রস্তুতি নিতে পারেননি তারা। তার ক্ষতির পরিমান প্রায় তিন লাখ টাকা।
বন্যা ও এর ক্ষতি সম্পর্কে নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. রবীআহ নূর আহমেদ বলেন, জেলায় চার হাজার ১৪৪ হেক্টর জমির ধান ও শাকসবজি পানিতে ডুবে যায়। এখন পানি অনেকটাই নেমে গেলেও নষ্ট হয়ে গেছে তিন হাজার ৯৭৬ হেক্টর জমির ফসল। তাদের হিসাবে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫১ কোটি টাকা। বৃষ্টি চলতে থাকলে পানি বাড়বে জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, এতে ফসলের ক্ষতি আরও বাড়তে পারে।
মঙ্গলবার ২১শে জুলাই বিকেল পর্যন্ত জেলার ৩৭২টি পুকুর বানের পানিতে ভেসে গেছে জানিয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফিরোজ আহমেদ বলেন, প্রায় ৩০০ হেক্টর জমির এসব পুকুরের প্রায় ২১ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে।