বন্যাবিপর্যয়ে রাষ্ট্রের কার্যকর পদক্ষেপ চান সিরাজগঞ্জের তাঁতমালিক-শ্রমিকরা

“করোনাভাইরাসের প্রভাবে কয়েক মাস কারখানা বন্ধ ছিল। যখন কারখানাগুলো খোলা হয় তখনই দেখা দেয় বন্যা। বর্তমানে বন্যার পানিতে ডুবে আছে সাজানো সংসার, বসতভিটা আর জীবনের পুরো সঞ্চয় দিয়ে গড়ে তোলা স্বপ্নের তাঁত কারখানাগুলো ও তাঁতের সরঞ্জাম। পানি কমতে শুরু করলেও এখনও তলিয়ে আছে অধিকাংশ কারখানা। এ অবস্থায় সরকারি সহযোগিতা ছাড়া ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হবে।

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, সিরাজগঞ্জ ||

বন্যাবিপর্যস্ত জেলার তাঁতী ও তাঁতশিল্পকে রক্ষা করতে বিশেষ বরাদ্দের জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। জেলাকে তাঁতকুঞ্জ হিসেবে অভিহিত করে জেলা প্রশাসক ফারুক আহম্মদ বলেছেন, “এই জেলার মোট জনসংখ্যার একটি বড় অংশের জীবন ও জীবিকা তাঁতশিল্পের ওপর নির্ভরশীল। যার বেশীর ভাগই বন্যাবিপর্যস্ত। ক্ষতিগ্রস্ত তাঁতমালিক ও শ্রমিকরা যাতে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেন সেজন্য বিশেষ বরাদ্দের জন্য স্থানীয় সরকার ও বাণ্যিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে।”

বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড সিরাজগঞ্জ বেসিক সেন্টারের সমন্বয় কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সিরাজগঞ্জ, বেলকুচি, উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুর বেসিক সেন্টারের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত তাঁতমালিক ও শ্রমিক পরিবারের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। বন্যার পানি কমে গেলে এই তালিকা চূড়ান্ত করা হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

এই বিপর্যয় থেকে তাঁতমালিক ও শ্রমিকদের রক্ষায় দ্রুত আর্থিক প্রণোদনাসহ বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে রাষ্ট্র ও সরকার সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জেলার রাজনৈতিক ও নাগরিক সমাজের নেতারাও।

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের জেলা সমন্বয়ক নব কুমার কর্মকার জানিয়েছেন, কাজ ও পুঁজি হারিয়ে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের জীবন ও জীবিকা আজ ভয়াবহ হুমকিতে পড়েছে। বাসদের উদ্যোগে করা এক জরিপে উপরোক্ত তথ্য উঠে এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এখন সরকারি প্রণোদনা তাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি। না হলে বিপাকে পড়বে এই শিল্প ও বিশাল জনগোষ্ঠী।”

এ বিষয়ে সরকারি কোনো পরিসংখ্যান নেই দাবি করে নব কুমার কর্মকার বলেন, সরকারি সহযোগিতা ছাড়া তাতিঁদের ঘুরে দাঁড়ানো ‘কঠিন হবে’।

যা বলছেন মালিক ও শ্রমিকরা

বেলকুচি উপজেলার খিন্দ্র মাটিয়া গ্রামের তাঁতমালিক আকছেদ আলী বলেন, “করোনাভাইরাসের প্রভাবে কয়েক মাস কারখানা বন্ধ ছিল। যখন কারখানাগুলো খোলা হয় তখনই দেখা দেয় বন্যা। বর্তমানে বন্যার পানিতে ডুবে আছে সাজানো সংসার, বসতভিটা আর জীবনের পুরো সঞ্চয় দিয়ে গড়ে তোলা স্বপ্নের তাঁত কারখানাগুলো ও তাঁতের সরঞ্জাম। পানি কমতে শুরু করলেও এখনও তলিয়ে আছে অধিকাংশ কারখানা। এ অবস্থায় সরকারি সহযোগিতা ছাড়া ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হবে।

একই কথা বলেন ওই এলাকার শফিকুল ইসলাম ও সাইফুল ইসলামসহ অনেকেই। সদর উপজেলার গাছাবাড়ি গ্রামের তাঁতশ্রমিক মোকলেস আলী বলেন, “একদিকে করোনাভাইরাস অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদি বন্যায় বন্ধ হয়ে গেছে আয়রোজগার। চোখে এখন শুধুই ঘোর অন্ধকার দেখছি। এমন কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি আগে কখনও হতে হয়নি। অনেকের ভাগ্যে এখনও জোটেনি কোনো সহযোগিতা।”

চরসয়দাবাদ গ্রামের জিন্নাহ শেখ ও বাঐতারা গ্রামের সরোয়ার হোসেনের সঙ্গে কথা হলে তারাও একই চিন্তার কথা জানান।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন