পাকার আগমুহূর্তে নওগাঁর আমচাষীদের ক্ষতিতে ফেলল আমপান

|| এম আর রকি, নওগাঁ থেকে ||

ঘূর্ণিঝড় আম্পানে নওগাঁয় বিস্তর ক্ষতিতে পড়েছেন আমচাষীরা। আর কদিন বাদেই যেসব আম তারা বাজারে দেবেন, সেই আম ঝরে পড়ায় দু:শ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে তাদের কপালে। এমনিতেই গেল কয়েক বছর ধরে আমচাষে উৎপাদন খরচ না ওঠায় লোকসান গুণতে হচ্ছে। তার ওপর আমপান ঝড়ের এই ক্ষতি তাদের তীরে এসে তরী ডোবার মত।

চাষিরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে বাগানের প্রায় ২৫ শতাংশ আম ঝরে গেছে। ঝরে পড়া আমের মধ্যে গোপাল ভোগ, লেংড়া, ফজলি, ক্ষিরসাপাতা এবং মোহন ভোগ জাতের সু স্বাদু আমই বেশি। এর মধ্যে গোপাল ভোগ ও লেংড়া জাতের আম চলতি মাসের শেষের দিকে গাছ থেকে নামানোর ঘোষনা দেয় জেলা প্রশাসন ।

বাগান মালিকরাও চরম হতাশ আম ঝরে পড়ায়। ঝরে পড়া আম আড়তগুলোতে নিলেও সুযোগ বুঝে ২০ থেকে ৩০ টাকা মনের বেশী দাম দিচ্ছেন না বেপারীরা।

জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, এ বছর ২৪ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয় নওগাঁয়। প্রায় ১১ হাজার বাগানে চাষীর সংখ্যা ৬ হাজার ৮শ’। হেক্টর প্রতি জমিতে ১৫ মেট্রিক টন হিসাবে এবছর আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল তিন লাখ ৭০ হাজার ৫শ’ মেট্রিক টন। আমপানে এর ২৫ শতাংশ অর্থাৎ ৯০ হাজার মেট্রিক টন আম ঝরে পড়েছে। ভরা মৌসুমে আমের দাম ৪০ টাকা কেজি ধরলে এর দাম দাঁড়ায় প্রায় ৯০০ কোটি টাকা।

জেলার ১১টি উপজেলার মধ্যে ৬০ ভাগেরও বেশি আম উৎপাদন হয় পোরশা, সাপাহার ও পত্নীতলায়। সরজমিনে সাপাহারে দেখা যায় বস্তায় ভরে বিভিন্ন বাহনে আড়তে আম নিয়ে আসছেন চাষীরা। ঝরে পড়া আম মাত্র ২০ থেকে ৩০ টাকা মন দরে কিনছেন বেপারীরা। যে দামে ভ্যান ভাড়াও উঠছে না ।

মধুইল এলাকা থেকে ৯ বস্তা আম নিয়ে এসেছেন আমচাষী সাইদুর রহমান। মাত্র ১শ টাকায় বিক্রি করেন ৯ বস্তা আম। এসব আমের মধ্যে রয়েছে গোপাল ভোগ, লেংড়াসহ ভাল জাতের সব আম। আর কদিন পরই এসব আম নামানোর প্রস্ততি ছিল। কিন্ত হঠাৎ ঘুর্ণিঝড় আমপান সব আশা শেষ করে দিয়েছে সাইদুরের মতো অনেক বাগান মালিকের।

বাগান মালিক তসলিম উদ্দিন বলেন, এবার বড় একটা আশা নিয়ে অনেকেই বাগান করেছিলেন। কিন্ত পর পর দু’দফা ক্ষতিতে পড়ায় সে আশায় গুড়ে বালি পড়েছে। তার ওপর আবার করোনা পরিস্থতি এসব নিয়ে বাগান মালিকরা নানাভাবে বিপর্যস্ত।

সাপাহার আম আড়ত সমিতির সভাপতি কার্তিক সাহা বলেন, এবার দু’দফা ক্ষতির শিকার হলো বাগান মালিকরা। তারপরও যে পরিমান আম আছে তা যদি করোনার কারণে সঠিকভাবে বাজারজাত করা না যায় তবে অনেকেই পথে বসে যাবে।

এদিকে আমচাষের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা অনেকদিন ধরেই আপদকালীন সময়ে বরেন্দ্র এলাকায় আম সংরক্ষনাগার গড়ে তোলার দাবী জানিয়ে আসছেন। এমনি একজন সাপাহার উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান আলী। তিনি বলেন, ‌এখন যে বিপর্যয়টা হলো এখানে যদি প্রাণ ও এসি আইয়ের মতো বড় কোম্পানির সংরক্ষনাগার থাকতো তাহলে এতো আম নষ্ট হতো না। এমন দুর্যোগে যাতে চাষীরা ক্ষতিতে না পড়েন, সেজন্য এলাকায় দ্রুত একটি সংরক্ষণাগার নির্মাণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে সরকারসংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

সাপাহার উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার কল্যান চৌধুরী বলেন, এখনো গাছে বিপুল পরিমান আম রয়েছে। তবে যে সব বাগান ক্ষতিতে পড়েছে তার একটা তালিকা করে জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হচ্ছে যেন তারা কিছুটা হলেও অর্থসহায়তা পান।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন