|| জহুরুল ইসলাম জহির, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ||
আমপানের ঝড়োবৃষ্টিতে চাঁপাইনাববগঞ্জের মোট ফলনের ২৫ ভাগের বেশী আম ঝরে গেছে। জেলার ৩৩ হাজার ৩৫ হেক্টর জমির আম বাগানের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়ায় প্রায় পেকে আসা এসব আম ঝরে যায়। কিছু জায়গায় উপড়ে যায় আমসহ অন্যান্য গাছগাছালি। গত বুধবার সারাদিনই গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হলেও দুপুর রাত থেকেই শুরু হয় ঘুর্ণিঝড় আমপানের তান্ডব। জেলার শিবগঞ্জ, ভোলাহাট, গোমস্তাপুর, নাচোল ও সদর উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যায় এই ঝড়।
আমচাষীরা বলছেন, গেল কয়েক বছর থেকেই আমচাষে লোকসান গুণে আসছেন তারা। চলতি মৌসুমে করোনায় আম বাজারজাত করা নিয়ে শঙ্কার মধ্যেই আমপানে ঝরে পড়েছে প্রায় ২৫ ভাগ আম। এই ক্ষতি কীভাবে কাটিয়ে উঠবেন সেই দু:শ্চিন্তা এখন তাদের।
![](https://i1.wp.com/www.sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/05/Mango-07-scaled.jpg?fit=700%2C394&ssl=1)
শিবগঞ্জ ম্যাংগো কোম্পানি সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল খান শামীম জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে সব চেয়ে বেশি আম হয় শিবগঞ্জ উপজেলায়। আমপানে এই উপজেলারই ২০ ভাগ আম ঝরে পড়েছে। গাছে যে আমগুলো রয়েছে বৃষ্টিতে সেগুলোরও বোটা দূর্বল হয়ে যাওয়ায় ছত্রাকের আক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। সেজন্য চাষীদেরকে ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যাতে আমগুলো ঝরে না পড়ে।
তিনি আরো জানান, এমনিতেই গেল কয়েক বছর ধরে আমচাষে লোকসান গুণতে হচ্ছে চাষীদের। তারওপর পাকার কিছুদিন আগে যে ক্ষতি হয়ে গেল তা কাটিয়ে উঠতে সরকারী প্রণোদনা না পাওয়া গেলে বিস্তর ক্ষতিতে পড়বেন আমচাষী ও বাগান ব্যবসায়ীরা।
এ প্রসঙ্গে আম ব্যবসায়ী মুখলেসুর রহমান বলেন, আমপানে শুধু আমই নয়, এলাকায় শাক সবজি ও ধানের বিস্তর ক্ষতি হয়েছে। সার্বিক এই ক্ষতি কাটাতে কৃষকদের পাশে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে।
শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আমিনুজ্জামান জানান, শিবগঞ্জ উপজেলায় ১৮ হাজার ৮৫৫ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। এর মধ্যে ২ শতাংশ বাগানের ক্ষতি হয়েছে। এসব বাগানের ৩ মেট্রিক টন আম আম ঝরে পড়েছে। তিনি বলেন, আমপানে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আমের। ধান, পেপে, ভুট্টাসহ অন্য শাক-সবজি শষ্যের তেমন ক্ষতি হয়নি।
এ উপজেলা থেকে দেশের বিভিন্ন বাজারে আম সরবরাহের প্রস্ততিও চলছে বলে জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা।
![](https://i0.wp.com/www.sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/05/Mango-01-scaled.jpg?fit=700%2C394&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/www.sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/05/Mango-01-scaled.jpg?fit=700%2C394&ssl=1)
![](https://i0.wp.com/www.sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/05/Mango-01-scaled.jpg?fit=700%2C394&ssl=1)
ভোলাহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শরিফুর ইসলাম জানান, তাঁর উপজেলায় ৩ হাজার ৩৮০ হেক্টর জমির আম বাগান রয়েছে। এসব বাগানের মধ্যে ৪ শতাংশ ক্ষতিতে পড়েছে। এবার আমের লক্ষ্যমাত্রা ২৩ হাজার ৬৬০ মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হয়েছে জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, আমপানে ১৩২ হেক্টর জমির আম ঝরে পড়েছে। যার আর্থিক পরিমাণ ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা। এই উপজেলায় আম বাদে অন্য শষ্য সবজির তেমন ক্ষতি হয়নি বলেও জানান কৃষি কর্মকর্তা।
সবথেকে বেশী ক্ষতি হয়েছে গোমস্তাপুর উপজেলায়। এখানকার বাগানের ৬০ ভাগ আম ঝরে পড়েছে। যার আর্থিক পরিমাণ প্রায় ৩০ লাখ টাকা। এই উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন জানান, ঝড়োবৃষ্টিতে জমিতে পানি জমে যাওয়ায় ধানসহ অন্যান্য শষ্য সবজি নষ্ট হওয়ার সম্ভবানা ছিলো বটে, কিন্তু শুক্রবার থেকে রোদ থাকায় এসব খাদ্যশষ্যের তেমন ক্ষতি হবে না।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কানিজ তাসনোভা জানান, তাঁর উপজেলায় ৫ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। এর মধ্যে ক্ষতিতে পড়েছে ৫ শতাংশ। যার আর্থিক পরিমাণ সোয়া কোটি টাকার মত।
![](https://i2.wp.com/www.sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/05/Mango-05-scaled.jpg?fit=700%2C394&ssl=1)
![](https://i2.wp.com/www.sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/05/Mango-05-scaled.jpg?fit=700%2C394&ssl=1)
![](https://i2.wp.com/www.sangbadsarabela.com/wp-content/uploads/2020/05/Mango-05-scaled.jpg?fit=700%2C394&ssl=1)
এবার এই উপজেলায় আমের লক্ষ্যমাত্রা ৩০ হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হয়েছে জানিয়ে কানিজ তাসনোভা জানান, এর মধ্যে ৬শ মেট্রিক টন আম ঝরে পড়েছে। তিনি আরো জানান, সদর উপজেলায় আমের পাশাপাশি ধান পেপে কলাসহ সব ধরণের শাক সবজির বেশ ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কৃষকদের এই মুহূর্তে আর্থিক সহায়তা দেওয়া না গেলেও অন্যান্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ নজরুল ইসলাম বলেন, আমপানে জেলার আম বাগানগুলোর ৫ থেকে ৬ ভাগ আম ঝড়েছে। এতে ক্ষতির পরিমান ৫ থেকে ৬ কোটি টাকা জানিয়ে তিনি বলেন, ভাল দাম পেলে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন চাষীরা। ঝড়ে শুধু আমই নয়, পেপে ও কলারও বেশ ক্ষতি হয়েছে।