|| সারাবেলা প্রতিনিধি, জয়পুরহাট ||
জয়পুরহাট জেলা আ’লীগে নতুন নের্তৃত্ব এসে দল আরও গতিশীল হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় গোলক ধাঁধায় রয়েছেন এখানকার নেতাকর্মীরা। কমিটিতে স্থান পাওয়া নিয়ে সংশ্লিষ্ট নেতাদের কাছে ব্যাপক লবিং-গ্রুপিং ও দৌড়-ঝাঁপ শুরু করেছেন তারা। গত বছরের ১০ ডিসেম্বর জয়পুরহাট স্টেডিয়ামে জেলা আ’লীগের ৭ম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সম্মেলনে সভাপতি আরিফুর রহমান রকেট ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন মন্ডলকে নির্বাচিত করা হয়েছে এবং ১৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি। কারা স্থান পাচ্ছেন নতুন কমিটিতে এ নিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাঝে জেলা জুড়ে চলছে নানা গুঞ্জন ও আলাপচারিতা। তবে দায়িত্ব পাওয়া নেতারা বলছেন বৈশ্বিক করোনার কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।
আ’লীগের দলীয় সূত্র ও সরেজমিনে জানা যায়, দীর্ঘ ৬ বছর পর গত বছরের ১০ ডিসেম্বর জয়পুরহাট জেলা আ’লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন জয়পুরহাট জেলা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভার্চুয়াল বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সম্মেলনে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় আ’লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ও হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, এস.এম কামাল হোসেন, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা সহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা। সম্মেলনে কেন্দ্রীয় আ’লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান, সভাপতি হিসেবে আরিফুর রহমান রকেট ও জাকির হোসেন মন্ডলকে সাধারণ সম্পাদক করে দু’জনের নাম ঘোষনা করেন এবং ১৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশনাও দেন তিনি। এতে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মাঝে ক্লিন ইমেজের নতুন নের্তৃত্বের চমক আসে জেলা আ’লীগে। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান পাওয়া নিয়ে আশা-নিরাশার গোলক ধাঁধায় রয়েছেন সাবেক কমিটির অনেক নেতা। এদিকে নতুনরা কমিটিতে স্থান পাওয়া নিয়ে জোড় লবিং-গ্রুপিং করছেন দায়িত্ব পাওয়া নেতাদের কাছে। আবার অনেকে সাবেক ও বর্তমান নেতারা পদ-পদবী নিয়ে মন্তব্য করতেও অনিচ্ছা ও শঙ্কা প্রকাশ করছেন।
১৯৭৫ পরবর্তী সময়ের ছাত্রলীগ ও আ’লীগ করা অসুস্থ বলায় চন্দ্র দাস বলেন, ৭৫ এর যারা দুঃসময়ের কান্ডারি তাদের অনেককেই সরে রাখা হয়েছে। তাদেরকে খুঁজে খুঁজে দলে নিয়ে আসতে হবে। আগে যারা নের্তৃত্বে ছিল তারা দলীয় নেতাকর্মীদের তেমন মূল্যায়ন করেনি। আমি পদ চাই না, কিন্তু আ’লীগ পরিবারের সদস্যরা যেন নতুন কমিটিতে থাকে, এটাই আমার চাওয়া।
কালাইয়ের জিন্দারপুর ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, দলের যত আন্দোলন, সংগ্রাম, বিভিন্ন প্রোগ্রাম, মিছিল-মিটিং এগুলোতে মূলত তৃণমূল পর্যায়ের নেতারাই জনসমাবেশ ঘটায়। সেই ক্ষেত্রে তৃণমূলের নের্তৃত্বকে মর্যাদা ও মূল্যায়ন করা দরকার। তৃণমূলের অনেক নেতারা আছেন যারা এখনও তৃণমূলেই পড়ে আছেন। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে জেলা শহর ভিত্তিক ২৫ শতাংশ, বাকি ৭৫ শতাংশ নেতা উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায় থেকে নির্বাচিত করে জেলা কমিটিতে স্থান দেওয়া দরকার।
ক্ষেতলাল উপজেলা আ’লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুল মজিদ মোল্লা বলেন, যারা দল বা পার্টি করে না, প্রভাব ও পতিপত্তির বিনিময়ে কমিটিতে স্থান পেলে তা দুর্দিনের নেতাকর্মীদের দুঃখের শেষ থাকবে না। অনেক নেতাকর্মীরা তৃণমূলে থেকে আ’লীগের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছে, তাদের নিয়ে শক্তিশালী এবং লোভ লালসাহীন কমিটি গঠন করা হোক। একই কথা বলেন ক্ষেতলাল উপজেলার দুঃসময়ে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আ’লীগ করা নেতা সাখাওয়াত হোসেন, জেলা আ’লীগের সাবেক সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সোবহান সহ অনেক নেতাকর্মীরা।
জেলা আ’লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও পাঁচবিবি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল শহীদ মুন্না বলেন, বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অনেক বিচক্ষণ। তারা কমিটির যাকে যে পদে রাখলে ভাল হবে সেখানেই রাখবে। ওখানে থেকেই আমরা দল করবো। জেলা আ’লীগের কমিটিতে নব্য নেতাকর্মীদের আসার সুযোগ নেই, সেই সাথে বিতর্কিত ও হাইব্রিডরাও স্থান পাবেন না বলে ধারণা করছেন সাবেক ছাত্র নেতা ও আক্কেলপুর উপজেলা আ’লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাহফুজ চৌধুরী অবসর। আওয়ামী পরিবারের রাজনীতি করা দুঃসময়ের ত্যাগী ও পরীক্ষিত ব্যক্তিরাই নতুন কমিটিতে স্থান পাক বললেন সদর উপজেলার দোগাছীর সাবেক ছাত্র নেতা সুমন হোসেন।
জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন মন্ডল বলেন, ৭৫ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে। বৈশ্বিক করোনা ও লকডাউনের কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা করতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। আগামী দিনে দলে কোন দুর্দিন আসলে, তা মোকাবিলা করার মতো দুঃসময়ের ত্যাগী নেতাকর্মী ও যাদেরকে আন্দোলন, সংগ্রামে পাওয়া যাবে তাদের নিয়ে কমিটির তালিকা দ্রুত পাঠানো হবে।