এনায়েতপুরে ডা. নাজমুলের লাম্পট্যের কিনারা করতে পারছে না কেউ

চাকরির শুরু থেকেই ডা. নাজমুল ইসলামের বিরুদ্ধে নারী রোগি ও নারী কর্মচারীদের নানাভাবে হয়রানির অভিযোগ ওঠে। কোন সময় টাকা দিয়ে আবার ক্ষমা চেয়ে এসব অভিযোগের আপোষরফাও করেন তিনি।

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, সিরাজগঞ্জ ||

সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরের মন্ডলপাড়ার জনতা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টার-২ এর চিকিৎসক ডা. নাজমুলের লাম্পট্যের কিনারা করতে পারছে না কেউ। একের পর এক ধর্ষন ও ধর্ষন চেষ্টায় অভিযুক্ত এই মেডিকেল এ্যাসিস্টেন্ট সবশেষ ক্লিনিকের আয়াকে ধর্ষনচেষ্টা এলাকায় ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় তুলেছে।

এদিকে ঘটনাটি মিটমাট করে দিতে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র ডা. নাজমুলের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা নিয়ে নির্যাতিতাকে চাপ দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জনতা ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম আহমেদ জানিয়েছেন, ডা. নাজমুল হাসপাতালের নারী কর্মচারী ও চিকিৎসা নিতে আসা নারীদের ধর্ষন ও শ্লীলতহানীর নজিরে আমাদের হাসপাতালের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ডা. নাজমুলের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেবার কথা জানিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন।

প্রসঙ্গত, ২০০৩ সালে এনায়েতপুরে প্রতিষ্ঠা করা হয় জনতা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টার। এরপর স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানটি এলাকায় সুনাম অর্জন করলে পরিধি বাড়াতে ২০১৮ সালে মন্ডলপাড়ায় জনতা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টার-২ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর সার্বিক দায়িত্ব দেয়া হয় মেডিকেল এ্যাসিষ্টেন্ট ডা. নাজমুল ইসলামকে।

প্রতিষ্ঠানের মালিক শামীম আহমেদ ব্যবসায়িক অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকায় হাসপাতালের তদারকির দায়িত্ব দেন মালিকানার অংশীদার বিনদহ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল্লাহ লিটনকে।

চাকরির শুরু থেকেই ডা. নাজমুল ইসলামের বিরুদ্ধে নারী রোগি ও নারী কর্মচারীদের নানাভাবে হয়রানির অভিযোগ ওঠে। কোন সময় টাকা দিয়ে আবার ক্ষমা চেয়ে এসব অভিযোগের আপোষরফাও করেন তিনি।

গত আড়াই বছর আগে জনতা ক্লিনিকে কর্মরত এক আয়াকে ডা. নাজমুল ধর্ষনের চেষ্টা করে। এরপর মেয়েটি পরিবারের সদস্যদের জানালে সালিসী বৈঠককে হাত-পা ধরে ক্ষমা চেয়ে পাড় পান নাজমুল। একই ভাবে গেল বছরের শেষের দিকে খোকশাবাড়ি গ্রামের প্রবাসীর এক স্ত্রী চিকিৎসা নিতে আসলে তার শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করেন ডা. নাজমুল। বিষয়টি তার অভিভাবকেরা জানতে পারলে স্থানীয় মাতব্বরদের সহযোগিতায় মোটা অংকের টাকা দিয়ে তা ম্যানেজ করা হয়।

সর্বশেষ গত ১৮ই আগষ্ট রাতে জনতা ক্লিনিক-২ এর এক আয়ার শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করেন তিনি। নির্যাতনের শিকার মেয়েটি বিষয়টি স্বজনদের জানালে ধামাচাপা দেয়ার জন্য সচেষ্ট হয়ে ওঠে নাজমুল। অভিযোগ উঠেছে, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে স্থানীয় একটি চক্রের মাধ্যমে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে নির্যাতিত মেয়েকে নিয়ে সমঝোতা করেছেন নাজমুল।

ডা. নাজমুলের বিষয়ে হাসপাতালের প্রধান চিকিৎসক ডা. সাখাওয়াত হোসেন জানান, একের পর এক ঘটনায় আমাদের হাসপাতালটি পতিতালয় বানিয়েছে ডা. নাজমুল। এলাকার এক শ্রেণীর মাতব্বরকে টাকা দিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে সে বার-বার পার পেয়ে যাচ্ছে। জনতা ক্লিনিক টু এর আয়া নিজে আমার কাছে অভিযোগ করে বলেছে, ‍‍“মাঝে মাঝেই তাকে কু প্রস্তাব দিয়েছে নাজমুল ডাক্তার। কয়েক দিন আগে নাজমুল তাকে ধর্ষনের চেষ্টা করে।

এতোসব অভিযোগ অস্বীকার করে ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, সাধারন ঘটনা নিয়ে আয়ার সঙ্গে মনমালিন্য হওয়ায় তা মিমাংসা করে নেয়া হয়েছে।

ঘটনাটি নিয়ে এনায়েতপুর থানার ওসি মোল্লা মাসুদ পারভেজ জানান, নির্যাতিতার অভিযোগ পেলে নাজমুলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সিভিল সার্জন ডা. জাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, চিকিৎসকের হাতে নারীরা অনিরাপদ। বিষয়টি আসলেই দুঃখজনক। দায়ী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

৫ thoughts on “এনায়েতপুরে ডা. নাজমুলের লাম্পট্যের কিনারা করতে পারছে না কেউ”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন