শাহজাদপুরে পালিত হলো না ১৫৯তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী

১৫৯ বছর আগে আজকের এই পৃথিবীর বুকে এক মানব প্রেমী নক্ষত্রের আর্বিভাব হয়েছিল। ২৫ বৈশাখ, সেই মহামানব বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী সরকারিভাবে পালন করা হয়। কিন্ত এবছর ১৫৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কবিগুরুর স্মৃতি বিজড়িত শাহজাদপুর কাচারি বাড়িতে করোনা মহামারীর কারনে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানের কোন আয়োজন করেননি সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসন।

প্রথম ১৯৯১ সনে শাহজাদপুরে কবিগুরুর জন্মবার্ষিকী রাস্ট্রীয়ভাবে পালন করা শুরু হয়। তার পর থেকে প্রতি বছর সরকারি উদ্যোগে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসনের আয়োজনে তিন দিন ব্যাপী ব্যাপক অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে যথাযোগ্য মর্যাদায় ও উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী পালিত হয়। এই জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে।এক সময় কুঠিবাড়ীর বকুল তলার মুক্তমঞ্চে স্থানীয় সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গুলোর উদ্যোগে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী পালন করা হতো। তারও আগে প্রফেসর নাছিমউদ্দিন মালিথার “কবিতা সংঘ” এর উদ্যোগে কুঠিবাড়ীর বারান্দায় অনাড়ম্বরভাবে কয়েকবার রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী পালন করতে দেখা গেছে।সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের একটি বিখ্যাত ও জনপ্রিয় পুরাকীর্তি হচ্ছে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শাহজাদপুরের কাচারিবাড়ী। এটি রবীন্দ্রনাথের পৈতৃক জমিদারি তত্ত্বাবধানের কাচারি ছিল। তারও পূর্বে অষ্টাদশ শতাব্দীতে এটি নীলকরদের নীলকুঠি ছিল। সে কারনে এখনও অনেকে একে কুঠিবাড়ী বলে। পরে রবীন্দ্রনাথের দাদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর এটি নিলামে কিনে নেন। এখানে রয়েছে জমিদারির খাজনা আদায়ের কাচারির একটি ধ্বংসাবশেষ, একটি বেশ বড় দ্বিতল ভবন। বর্তমানে এখানে নির্মিত হয়েছে একটি আধুনিক অডিটোরিয়াম। দ্বিতল ভবনটি বর্তমানে রবীন্দ্র জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং আঙ্গিনার বিস্তৃত জায়গা জুড়ে তৈরী করা হয়েছে সুদৃশ্য একটি ফুলবাগান। রবীন্দ্রনাথ পিতার আদেশে ঊনত্রিশ বছর বয়সে ১৮৯০ সালে জমিদারি তত্ত্বাবধানের জন্য প্রথম শাহজদাপুর আসেন।  ১৮৯০ থেকে ১৮৯৬ মোট ৭ বছর জমিদারির কাজে শাহজাদপুরে আসা-যাওয়া এবং অবস্থান করেছেন। তার এই শাহজাদপুরে আসা-যাওয়া শুধু জমিদারি তত্ত্বাবধানের বস্তুনিষ্ঠ প্রয়োজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। বরং এই জমিদারির প্রয়োজনকে ছাপিয়ে প্রাধান্য পেয়েছে কবির সাহিত্য সৃষ্টির অনুপ্রেরণা ও সৃজনশীলতা। এই সময়ের মধ্যে এখানে তিনি তাঁর অনেক অসাধারণ কালজয়ী সাহিত্য রচনা করেছেন। এর মধ্যে ‘সোনার তরী’ কাব্যের ‘ভরা ভাদরে’, ‘দুইপাখি’ ‘আকাশের চাঁদ’, ‘হৃদয় যমুনা’, ‘প্রত্যাখ্যান’, ‘বৈষ্ণব কবিতা’, ‘পুরস্কার’ ইত্যাদি অসাধারণ কবিতা রচনা করেছেন। ‘চৈতালী’ কাব্যের ‘নদীযাত্রা’, ‘শুশ্রূষা’,‘ইছামতি নদী’, ‘বিদায়’, ‘আশিস-গ্রহণ’ ইত্যাদি কবিতা এবং ‘কল্পনা’ কাব্যের ‘যাচনা’, , ‘বিদায়’, ‘নরবিরহ’, ‘মানস-প্রতিমা’, ‘লজ্জিতা’, ‘সংকোচ’, ইত্যাদি বিখ্যাত গান রচনা করেছেন। তাঁর শাহজাদপুরে রচিত ছোটগল্পের মধ্যে ‘পোষ্টমাস্টার’, ‘ছুটি’, ‘সমাপ্তি’, ‘অতিথি’ ইত্যাদি বিখ্যাত। আর প্রবন্ধের মধ্যে ‘ছেলে ভুলানো ছড়া’, ‘পঞ্চভূত’, এর অংশবিশেষ এবং ‘ছিন্নপত্র’ ও ছিন্নপত্রাবলীর আটত্রিশটি পত্র রচনা করেছেন। এছাড়া তার ‘বিসর্জন’ নাটকও এখানে রচিত। সবচেয়ে বড় কথা, তার পরবর্তী সাহিত্য সৃষ্টির ক্ষেত্রে শাহজাদপুরের প্রভাব বিশেষভাবে বিদ্যমান।ঠাকুর পরিবারে জমিদারি ভাগাভাগির ফলে শাহজাদপুরের জমিদারি চলে যায় রবীন্দ্রনাথের অন্য শরীকদের হাতে। তাই ১৮৯৬ সালে তিনি শেষ বারের মতো শাহজাদপুর থেকে চলে যান। এর পরে তিনি আর শাহজাদপুরে আসেননি।শাহজাদপুর ছিল রবীন্দ্রনাথের অত্যান্ত প্রিয় এবং ভালোবাসার একটি স্থান। শাহজাদপুরের মানুষও তাদের হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথকে স্থান দিয়েছে।তাইতো দলমত নির্বিশেষে শাহজাদপুরের মানুষের প্রাণের দাবী ছিল কবিগুরুর নামে শাহজাদপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার। অবশেষে শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের মধ্য দিয়ে এখানকার সব মানুষের প্রাণের দাবী পূরণ হয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন