১১ বছর বিদেশে থেকেও শিক্ষিকা পদে এমপি কন্যা

|| অনলাইন প্রতিনিধি, জামালপুর  ||

দীর্ঘ ১১ বছর বিদেশে অবস্থান করেও বহাল তবিয়তে সরকারি স্কুলের সহকারী শিক্ষক পদে কর্মরত রয়েছে জামালপুরের এক এমপির মেয়ে। সরকার দলীয় এমপির প্রভাবের কারণে ১১ বছরের অনুপস্থিতির থাকার পর তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা। উল্টো বিষয়টি গোপন করে তাকে এক স্কুল থেকে অন্য স্কুলে বদলী দেখানো হয়েছে। সহকারী শিক্ষিকার অনুপস্থিতির বিষয়টি স্বীকার করে জামালপুরের নবাগত জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, কি কারণে আগের শিক্ষা কর্মকর্তারা  বিষয়টি গোপন রেখেছে তা জানা নেই। তবে দ্রæত সময়ের মধ্যে অনুপস্থিত শিক্ষিকার বিরুদ্ধ ব্যবস্থা নেয়া হবে।   

জামালপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জামালপুর-২ (ইসলামপুর) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব ফরিদুল হক খান দুলাল এমপি‘র মেয়ে ফারজানা হক ২০০৫ সালে ৭ ফেব্রæয়ারিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি একই উপজেলার শ্যামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। সেখান থেকে ২০০৯ সালের ৫ ডিসেম্বর উপজেলা সদরের জেজেকেএম সরকারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলী হয়ে আসেন। ২০১০ সালের ৯ ডিসেম্বর থেকে ২০১১ সালের ২০ ফেব্রæয়ারি  পর্যন্ত অসুস্থ্যতা দেখিয়ে ছুটি নেয় এই শিক্ষিকা। এর পর থেকে তিনি কর্মস্থল্ অনুপস্থিত রয়েছে। দীর্ঘ ১০ বছর থেকে তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলেও রহস্যজনক কারণে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় কোন ব্যবস্থা নেয়নি উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা। উল্টো অনুপস্থিতির বিষয়টি গোপন রেখে এমপিকে সন্তুষ্ট রাখতে ১১ বছর ধরে চাকুরীতে বহাল রেখেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফাজানা হক সোমা ২০০৯ সালে জেজেকেএম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় অস্ট্রেলিয়াতে পাড়ি জমান। পরে তিনি ২০১০ সালের ১০ ডিসেম্বর থেকে ২০১১ সালের ২০ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত চিকিৎসাজনিত ছুটির আবেদন করা হলেও তিনি এখন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়াতেই অবস্থান করছেন। এই নিয়ে এলাকা জুড়ে নানা গুঞ্জন শুরু হলেও টনক নেড়েনি উপজেলা ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের। বিষয়টি সংবাদ কর্মীদের নজরে আসায় নড়েচড়ে বসে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা শিক্ষা অফিসের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলেন, এমপির প্রভাবের কারণে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবিষয়ে কোন ব্যবস্থা নিতে পারেননি।

এবিষয়ে ইসলামপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো.ফেরদৌস জানান, সহকারি শিক্ষিকা ফারজানা হক ২০০৯ সালে অসুস্থতাজনিত কারণে এক মাসের ছুটি নেন। এরপর থেকে তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। তিনি আরও বলেন, আমি কয়েক দিন আগে এখানে যোগদান করেছি। কি কারণে তার বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসারকে অবহিত করা হয়নি তা তার বোধগম্য নয়। তবে তিনি এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসের কাছে একটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো.আব্দুর রাজ্জাক জেজেকেএম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা ফারজানা হকের অনুপস্থিতি বিষয়টি স্বীকার করে এই প্রতিবেদককে বলেন, আপনাদের মাধ্যমে বিষয়টি অবহিত হবার পর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছ থেকে একটি প্রতিবেদন পেয়েছি। তবে তিনি ২০০৯ সাল থেকে অনুপস্থিত থাকলে ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১১ সালের ডিসেম্বরের পর থেকে বেতন উত্তোলন করেন নাই। বিনা ছুটিতে দীর্ঘ ১১ বছর কর্মস্থলে না থাকায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ময়মনসিংহ উপ-পরিচালকের নিকট সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। তবে দীর্ঘ ১০ বছর অনুপস্থিত থাকার পরও ওই শিক্ষিার বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলে বিষয়টি তার বোধগম্য নয়। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন