ময়মনসিংহে দালাল আর ঘুষ ছাড়া মিলছে না পাসপোর্ট

ময়মনসিংহ আঞ্চলিক পাসেপোর্ট অফিসে ঘুষ ও দালাল ধরা ছাড়া মিলছে না পাসপোর্ট। এতে করে বিদেশ ফেরত প্রবাসী ও নতুন পাসপোর্ট করতে আসা লোকজনেরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে।

|| সারাবেলা সংবাদদাতা, ময়মনসিংহ ||

ময়মনসিংহ আঞ্চলিক পাসেপোর্ট অফিসে ঘুষ ও দালাল ধরা ছাড়া মিলছে না পাসপোর্ট। এতে করে বিদেশ ফেরত প্রবাসী ও নতুন পাসপোর্ট করতে আসা লোকজনেরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, দালাল ধরে চাহিদামত টাকা দিলেই সময়মতো মিলছে পাসপোর্ট। এছাড়া সাধারণ সেবা প্রত্যাশীরা আবেদন করেও সময়মতো পাচ্ছেন না পাসপোর্ট।

নান্দাইল উপজেলার সাহাব উদ্দিনের ছেলে মো. অন্তর মিয়া করোনা সংক্রমণের আগে সৌদি আরব থেকে দেশে এসে আটকা পড়েন। এর মধ্যে পাসপোর্টের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় কোনও দালাল ছাড়াই আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে আবেদন করেন। ছবি ওঠানো ও বায়োমেট্রিক শেষে পাসপোর্ট পাওয়ার কথা ছিল গত ৮ নভেম্বর। তিনি পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে এসে দেখেন কাজ হয়নি। পরে জানতে পারেন তার পুলিশ ভেরিফিকেশনের কাগজ না আসায় পাসপোর্ট ছাপা হয়নি। এরপর আরও দুইদিন অফিসে এসেও পাসপোর্ট পাননি। এসময় তিনি জানতে পারেন চাহিদা অনুযায়ী ঘুষ না দিলে ও দালালের মাধ্যমে কাজ না করায় তার পাসপোর্টের কাজ হয়নি।

অন্তর মিয়া বলেন, ‘দালাল না ধরে অফিসে সরাসরি আবেদন জমা দেওয়ায় পাসপোর্ট পাচ্ছি না। অফিস খরচের নামে দালালকে প্রতি পাসপোর্ট বাবদ তিন থেকে চার হাজার টাকা অতিরিক্ত দিতে হয়।’

একই সমস্যা সৌদি প্রবাসী ত্রিশালের আবুল কালামের। তিনি নিজেই দোকান থেকে অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ করে গত ২৮ অক্টোবর জরুরি হিসেবে সাত হাজার ২০০ টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে এমআরপির জন্য আবেদন (নম্বর-৮৫৪৭৫০) করেন। পাসপোর্ট পাওয়ার কথা ছিল গত ৮ অক্টোবর।

সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও বেশ কয়েকবার অফিসে এসে জানতে পারেন তারও পাসপোর্ট হয়নি। আবুল কালাম বলেন, ‘দালালের মাধ্যমে ঘুষ না দেওয়ায় পাসপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে না। নিজে আবেদন জমা দিলেও কাউন্টারের লোকজন নানা সমস্যার কথা জানিয়ে দেয়। কিন্তু দালাল ধরে তাদের চাহিদার টাকা দিয়ে আবেদন করলে সময়ের আগেও পাসপোর্ট হাতে পাওয়া যায়। সময়মতো পাসপোর্ট না পাওয়ায় সৌদি আরবে যাওয়ার তার ভিসার মেয়াদ পেরিয়ে গেছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় এক দালাল বলেন, ‘পাসপোর্ট অফিসে একটি সিন্ডিকেট রয়েছে, যারা দালালদের কাছ থেকে প্রতিটি পাসপোর্ট আবেদন জমা নেন এবং এর জন্য টাকা দিতে হয়।’

অপর দালাল পলাশ জানান, নতুন ই-পাসপোর্টের আবেদন দালাল ছাড়া সাধারণ মানুষ জমা দিতে গেলে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এ জন্য পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের দালালের শরণাপন্ন হতে হচ্ছে। একটি পাসপোর্ট করতে যে টাকা মানুষের কাছ থেকে নেওয়া হয়, এর বেশিরভাগই অফিস খরচ হিসেবে কর্মচারীদের হাতে তুলে দিতে হয়। কাজ শেষে একজন দালাল দুই থেকে আড়াইশ’ টাকা পান। ‘পাসপোর্ট পেতে হলে অফিসের ঘুষের চ্যানেল মেনেই কাজ করতে হয়। তা না হলে আবেদনের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে নানা সমস্যা দেখিয়ে পাসপোর্ট পেতে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করানো হয়।’

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক সালাহ উদ্দিন বলেন, আমি সদ্য যোগদান করেছি। দালাল ও অফিসে সিন্ডিকেট করে ঘুষ নেওয়া হয় কিনা বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান তিনি।

 

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন