সুলতানের চলে যাওয়ার দিন আজ

সুলতানের শিল্পকর্মের বিষয় ছিল বাংলার কৃষক, জেলে, তাঁতি, কামার, কুমার, মাঠ, নদী, হাওর, বাঁওড়, জঙ্গল, সবুজ প্রান্তর ইত্যাদি। চিত্রাঙ্কনের পাশাপাশি বাঁশি বাজাতেও পটু ছিলেন তিনি। পুষতেন সাপ, ভল্লুক, বানর, খরগোশ, মদনটাক, ময়না, গিনিপিগ, মুনিয়া, ষাঁড়সহ বিভিন্ন প্রাণী।

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, নড়াইল ||

চিত্রা নদীপাড়ের লাল মিয়া গণমানুষের এসএম সুলতানের আজ চলে যাওয়ার দিন। আজ থেকে ২৫ বছর আগের এই দিনে যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা যান সুলতান। সালটা ছিল ১৯৯৪। তারিখ ১০ই অক্টোবর। জন্মভূমি নড়াইলের কুড়িগ্রামেই তাকে শুইয়ে দেওয়া হয়।

নড়াইলের মাছিমদিয়ায় বাবা মেছের আলী ও মা মাজু বিবির ঘরে ১৯২৪ সালের ১০ই আগস্ট জন্ম হয় সুলতানের। বাবা-মায়ের দেওয়া নাম শেখ মোহাম্মদ সুলতান। ১৯২৮ সালে ভর্তি হন নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুলে। পড়াশুনার ফাঁকে রাজমিস্ত্রি বাবাকে কাজে সহযোগিতা করতেন শেখ মোহাম্মদ সুলতান। ছোট্টটি থাকতে যে সব ছবি আঁকতেন তাতেই নজর পড়ে স্থানীয় জমিদারদের।

নড়াইলের জমিদার ব্যারিস্টার ধীরেন রায়ের আমন্ত্রণে ১৯৩৩ সালে রাজনীতিক ও জমিদার শ্যামাপ্রাসাদ মুখোপাধ্যায় ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল পরিদর্শনে গেলে তার একটি প্রতিকৃতি আঁকেন পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র সুলতান। মুগ্ধ হন শ্যামাপ্রাসাদসহ অন্যরা।

লেখাপড়া ছেড়ে ১৯৩৮ সালে কলকাতায় গিয়ে ছবি আঁকা ও জীবিকা নির্বাহ শুরু করেন। সে সময় চিত্র সমালোচক শাহেদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে তার পরিচয় হয়। সোহরাওয়ার্দীর সুপারিশে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও ১৯৪১ সালে কলকাতা আর্ট স্কুলে ভর্তির সুযোগ পান সুলতান। ১৯৪৩ মতান্তরে দিনগুলোতে আর্ট স্কুল ছেড়ে ঘুরে বেড়ান কলকাতার এখানে-সেখানে। এরপর জীবনের নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে সংগ্রামী জীবনের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে গেছেন সুলতান।

সুলতানের শিল্পকর্মের বিষয় ছিল বাংলার কৃষক, জেলে, তাঁতি, কামার, কুমার, মাঠ, নদী, হাওর, বাঁওড়, জঙ্গল, সবুজ প্রান্তর ইত্যাদি। চিত্রাঙ্কনের পাশাপাশি বাঁশি বাজাতেও পটু ছিলেন তিনি। পুষতেন সাপ, ভল্লুক, বানর, খরগোশ, মদনটাক, ময়না, গিনিপিগ, মুনিয়া, ষাঁড়সহ বিভিন্ন প্রাণী।

চিত্রশিল্পের খ্যাতি হিসেবে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ম্যান অব দ্য ইয়ার’, নিউইয়র্কের বায়োগ্রাফিক্যাল সেন্টার থেকে ‘ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট’ এবং এশিয়া উইক পত্রিকা থেকে ‘ম্যান অব এশিয়া’ পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়া ১৯৮২ সালে একুশে পদকসহ ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সরকারের রেসিডেন্ট আর্টিস্ট স্বীকৃতি এবং ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ সম্মাননা তাঁকে দিয়েছে স্বীকৃতি।

মৃত্যুদিনে এস এম সুলতান ফাউন্ডেশন ও জেলা প্রশাসন শনিবার ১০ই অক্টোবর সকালে শিল্পীর কবরচত্তরে কোরআনখানি, পুষ্পস্তবক অর্পণ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে। করোনার কারণে এবার সংক্ষিপ্ত পরিসরেই হচ্ছে বরেণ্য এই শিল্পীর চলে যাওয়ার দিন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন