৭ কর্মদিবসেই বাগেরহাটে শিশু ধর্ষণ মামলার রায়

দেশে প্রথম মামলা দায়েরের পর বিচার প্রক্রিয়া শুরুর সাত কর্মদিবসেই শিশু ধর্ষণ মামলার রায় হয়েছে বাগেরহাট আদালতে। রায়ে আব্দুল মান্নান সর্দ্দার নামে এক ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে তাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, বাগেরহাট ||

দেশে প্রথম মামলা দায়েরের পর বিচার প্রক্রিয়া শুরুর সাত কর্মদিবসেই শিশু ধর্ষণ মামলার রায় হয়েছে বাগেরহাট আদালতে। রায়ে আব্দুল মান্নান সর্দ্দার নামে এক ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে তাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।

সোমবার ১৯ অক্টোবর যুগান্তকারী এ রায় দেন বাগেরহাট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো: নূরে আলম। এর আগে দেশে এতো দ্রুত কোনো ধর্ষণ মামলার রায় হয়নি। এ রায়ে নারী নেত্রীসহ সুশীল সমাজের বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিবর্গ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, বাবা হারা সাত বছর বয়সী একটি শিশু মোংলা উপজেলায় তার মামার কাছে থাকত। গত ৩ অক্টোবর বিকেলে বিস্কুট খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে শিশুটিকে নিজের ঘরে নিয়ে ধর্ষণ করে একই উপজেলার মাকোড়ডোন গ্রামের ভূমিহীন আশ্রয়ন প্রকল্প এলাকার আব্দুল মান্নান সর্দ্দার।

পরে মেয়েটি তার মামাকে এ কথা জানালে ওই রাতেই আব্দুল মান্নানকে আসামি করে মোংলা থানায় মামলা দায়ের করেন শিশুটির মামা। এরপর একই রাতে মোংলা থানা পুলিশ আব্দুল মান্নানকে গ্রেফতার করে। ১১ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোংলা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বিশ্বজিৎ মুখার্জি। পরে ১২ অক্টোবর মামলাটির অভিযোগ গঠন করা হয়।

১৩ অক্টোবর বাদীপক্ষের ১৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়। ১৪ অক্টোবর চিকিৎসক, বিচারিক হাকিম, নারী পুলিশ সদস্য এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য নেওয়া হয়। ১৫ অক্টোবর আসামির আত্মপক্ষ সমর্থনে সাফাই সাক্ষ্য নেওয়া হয়। ১৬ ও ১৭ অক্টোবর সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় রোববার (১৮ অক্টোবর) বাদী ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ করে সোমবার রায়ের দিন ধার্য্য করেন বাগেরহাট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. নূরে আলম। সে অনুযায়ী রায় ঘোষণা করা হলো।

এদিকে, এ ধর্ষণ মামলায় সাত কার্যদিবসের মধ্যে বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ করে রায়ের তারিখ ঘোষণা করা হয় রবিবার (১৮ অক্টোবর)। তারিখ অনুযায়ী সোমবার (১৯ অক্টোবর) এ মামলার রায় ঘোষণা করা হলো। বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার মাত্র সাত কার্যদিবসে বিচার প্রক্রিয়া শেষ হওয়াকে দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখছেন নারীনেত্রী, আইনজীবী ও সুশিল সমাজের প্রতিনিধিরা। ধর্ষণের মত জঘন্য অপরাধের বিচার এভাবে দ্রুত সম্পন্ন হলে ধর্ষণ রোধে ভূমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।


এ রায়কে ধর্ষকদের জন্য দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে নারী উন্নয়ন ফোরামের খুলনা ও বরিশাল বিভাগের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী রিজিয়া পারভীন বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাা আন্তরিক থাকলে অল্প সময়ের মধ্যে যে বিচার কাজ শেষ হতে পারে, এটি তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

বাগেরহাট জেলা জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট শরীফা হেমায়েত ও নারী নেত্রী এ্যাডভোকেট পারভিন আহম্মেদ এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, এ রায় ধর্ষকদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত হবে। স্বল্প সময়ে রায় হলে বাদী পক্ষ অনেক স্বস্তি পায়। ভুক্তভোগীও তার বিভিষিকাময় স্মৃতির ক্ষত ভোলার আগেই বিচারের রায় শুনে কিছুটা হলেও স্বস্তি পান। আমরা দাবি করব, অন্যান্য ধর্ষণ মামলার বিচার যেন এমন দ্রুত সম্পন্ন হয়।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এপিপি রনজিৎ কুমার মণ্ডল বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে বলা আছে, ধর্ষণের ঘটনায় আসামি ধরা পড়লে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে বিচার কাজ সম্পন্ন করা যাবে। এ মামলাটি তারই প্রমাণ।

এদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী লিয়াকত হোসেন বলেন, এটি একটি ষড়যন্ত্রমূলক মামলা। আমরা এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করব।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন