বাগেরহাটে বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি ঘের-পুকুর ভেসে ক্ষতিতে চাষীরা

চিতলমারী, রামপাল, কচুয়া, মোংলা, মোড়েলগঞ্জ, ফকিরহাট, মোল্লাহাট ও বাগেরহাট সদর উপজেলার হাজারের বেশী পুকুর ও চিংড়িঘের ভেসে গেছে। ক্ষতি হয়েছে কয়েক কোটি টাকার।

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, বাগেরহাট ||

বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ আর অমাবশ্যার প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ার আর গেল ৫ দিন ধরে বৃষ্টিতে বাঁধ উপচে জেলার একশ’র বেশী গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। হাজারো মানুষ পানিবন্দি। মোংলা, মোড়েলগঞ্জ ও বাগেরহাট পৌরসভায় বিস্তীর্ণ এলাকায় ঢুকে পড়েছে নদীর পানি। বাজারঘাটের দোকানগুলোতেও পানি ঢুকে নষ্ট হয়ে গেছে পণ্যসামগ্রি।

জেলার প্রায় সকল উপজেলার বেশীর ভাগ সরকারী-বেসরকারী অফিস, রাস্তা-ঘাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স্কুল-মাদ্রাসা, বাড়ি-ঘর, বীজতলা, পানবরজ ও ফসলের ক্ষেত এখন পানির নিচে। লাগাতার বৃষ্টিতে মোংলা বন্দরে স্বাভাবিক মালামাল ওঠা-নামার কাজ ব্যাহত হচ্ছে।

পানির চাপে পঞ্চকরন, মাঝিডাঙ্গা, কলাবাড়িয়া, বিষ্ণুপুর, যাত্রাপুরসহ জেলার অন্তত ৮টি স্থানে বেড়িবাঁধ ও সড়কে ধস ও ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। আবার অনেক জায়গায় বাঁধ উপচে তীব্র স্রোতে লোকালয়ে হু হু করে ঢুকছে পানি। মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশুপাখিও চরম কষ্টে পড়েছে। সংকট দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানীয়-জলের।

চিতলমারী, রামপাল, কচুয়া, মোংলা, মোড়েলগঞ্জ, ফকিরহাট, মোল্লাহাট ও বাগেরহাট সদর উপজেলার হাজারের বেশী পুকুর ও চিংড়িঘের ভেসে গেছে। ক্ষতি হয়েছে কয়েক কোটি টাকার।

এদিকে জেলার বলেশ্বর, পশুর, পানগুছি, চিত্রা, ভৈরব, মধুমতি, দঢ়াটানাসহ প্রতিটি নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিক মাত্রায় বাড়ছে। বইছে তীব্র স্রোত। স্থানীয়রা বলছেন, স্লুইজগেইটগুলো দিয়ে ঠিকমত পানি ওঠা-নামা না করা, সরকারি খালগুলো ভরাট ও অবৈধ বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করা এবং পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি নামতে পারে না। এতে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। যা প্রতি বছরই বাড়ায় মানুষের দুর্ভোগ।

পঞ্চকরণ ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক মজুমদার বলেন, জোয়ারের পানিতে দেবরাজ ৬ কিলোমিটার ভেরিবাঁধের বিভিন্নস্থান ভেঙ্গে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পঞ্চকরণ বাজার থেকে ৪ কিলোমিটার ভেরিবাঁধ আংশিক ভেঙ্গে গেছে। হোগলাবুনিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো.আকরামুজ্জামান জানান, নদীর তীরবর্তী বদনিভাঙ্গা থেকে পাঠামারা পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার রাস্তা নর্দীগভে বিলীন হয়ে গেছে। পৌর শহরের সানকিভাঙ্গা খাদ্যগুদাম এলাকার বিভিন্নস্থানে ভেঙ্গে গেছে।

বারইখালী ইউনিয়নের পানগুছি নদীর তীরবর্তী ফেরিঘাট থেকে কাশ্মীর হয়ে বহরবুনিয়া থেকে ফুলহাতা পর্যন্ত প্রায় ৬ থেকে ৭ কি.মি. রাস্তার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে ইউপি চেযারম্যান শফিকুর রহমান লাল জানান। এখানে রোপা আমন-সহ প্রায় সব ক্ষেত পানিতে ডুবে গেছে। তেলিগাতি ইউপি চেয়ারম্যান মোর্শেদা আক্তার বলেন, হেড়মা হরগাতি স্লুইজগেইট সংলগ্ন এলাকা ভেঙ্গে যাচ্ছে। সদর ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদ আলীও জানান, গাবতলা কাঠালতলা এলাকায় সড়ক ভাঙ্গছে। মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

জোয়ারের পানিতে ভাসছে সুন্দরবনের করমজল
জোয়ারের পানিতে ভাসছে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র। জোয়ারে পশুর নদীর পানি ৩ থেকে সাড়ে তিন ফুট বাড়ায় করমজলের ভেতরের রাস্তাসহ অধিকাংশ এলাকা তলিয়ে গেছে। রাস্তার উপর অন্তত এক থেকে দেড় ফুট পানি উঠেছে। তবে করমজলে থাকা কোনো বন্য প্রাণির শেডে পানি না ওঠায় আশ্রিত হরিণ, কুমির, কচ্ছপসহ অন্যসব প্রাণী স্বাভাবিক ও নিরাপদে রয়েছে বলে জানিয়েছেন করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির।

ইলিশের ভরা মৌসুমেও জেলেরা বেকার
সমুদ্র উত্তাল থাকায় ইলিশের ভরা মৌসুমেও বাগেরহাটের প্রায় অর্ধলক্ষ জেলে সমূদ্রে ইলিশ শিকারে যেতে পারছে না। জাল ট্রলার নিয়ে তারা সুন্দরবন সংলগ্ন বিভিন্ন খালে আশ্রয় নিয়েছেন। প্রায় ১৫ দিন ধরে ইলিশ জেলেরা সাগরে জাল ফেলতে না পেরে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ফলে দরিদ্র জেলে পরিবারে দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট। লক্ষ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে আড়ৎদার ও ট্রলার মালিকরাও ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

ক্ষতিগ্রস্থরা জানান, করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পর জেলেরা ৬৫ দিনের অবরোধের মুখে পরে। পরে দেখা দেয় ঘূর্ণিঝড় আম্পান। এখন আবার লঘু চাপে সাগর উত্তাল। ফলে ইলিশের এই ভরা মৌসুমে তারা মাছ ধরতে পারছেন না। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ী ও জেলেরা এ বছর ব্যাপক লোকসনের আশংকা করছেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন