বাগেরহাটে জোয়ারে পান ও সবজির ব্যাপক ক্ষতি

ফসলের জমি পানিতে প্লাবিত হয়ে আছে। কোন প্রকার সতর্কামূলক আগাম বার্তা ছাড়া এ বিপর্যয়ে ফলন্ত ক্ষেত মারত্মক নষ্ট হওয়ায় চাষিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

।। সারাবেলা প্রতিনিধি, বাগেরহাট ।।

বাগেরহাটে প্রবল জোয়ার ও ৫ দিনের অতিবৃষ্টিতে মৎস্য ঘেরের পাশাপাশি সবজি ক্ষেত ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। জেলার অধিকাংশ সবজি ক্ষেতের গাছপালার শিকড় জলাবদ্ধতায় পঁচে গেছে। পান বরজেও অনুরূপ ক্ষতি হয়েছে। এখানে অনেক ফসলের জমি পানিতে প্লাবিত হয়ে আছে। কোন প্রকার সতর্কামূলক আগাম বার্তা ছাড়া এ বিপর্যয়ে ফলন্ত ক্ষেত মারত্মক নষ্ট হওয়ায় চাষিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

চিতলমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঋতুরাজ সরকার জানান, এ উপজেলায় এবছর ২ হাজার ৪৭০ একর জমিতে গ্রীষ্ম কালিন সবজির চাষ হয়েছে। এখানে কমপক্ষে ৩০ হাজার সবজি ও চিংড়ি চাষি রয়েছে। চাষিরা এখানে শসা, করল্লা, উচ্ছে, পুঁইশাক, ঢেড়স, চাল কুমড়া, জিংগা, চিচিংগা, বরবটি, মিষ্টি কুমড়া, বেগুন, ডাটা ও লাউয়ের চাষ করেছেন।

এখাঙ্কার সবজি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে থাকে। এছাড়া এখানে ১১ হাজার ৫৩৫ একর জমিতে রোপা আমন এবং ৭৪ একর পান চাষ হয়েছে। গত ক’দিনের প্রবল জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে এ উপজেলার ৭ হাজার ৪১০ একর জমির রোপা আমন ধান তলিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ২ হাজার ৯৯.৫ একর জমির সবজি ও ৭৪ একর জমির পান। তবে রোদ না ওঠা পর্যন্ত ক্ষতির সঠিক তথ্য পাওয়া সম্ভব নয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

দড়িউমাজুড়ি গ্রামের সবজি চাষিরা বলেন, বিভিন্ন এনজিও’র ঋণ নিয়ে ও ধারদেনা করে সবজির চাষ করেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে অস্বাভাবিক জোয়ার আর ৫ দিনের লাগাতার বৃষ্টিতে অধিকাংশ সবজি গাছের গোড়া পঁচে ফলন্ত সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আমরা কি করব বুঝে উঠতে পারছি না। জেলার রামপাল, ফকিরহাট, কচুয়া, মোড়েলগঞ্জ, মোংলা ও সদর উপজেলার অধিকাংশ কৃষক এখন অনুরূপ ক্ষতিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তাঁদের ভাষায়, ‘আমফানে’ সব ভেসে যাওয়ার পর ক্ষয়ক্ষতির কোন সহায়তা পাবার আগেই কোন প্রকার আমার সতর্কতা বার্তা ছাড়াই আবার এই ক্ষতি কোন অবস্থাতেই আমরা কাটিয়ে উঠতে পারব না। এটি আমাদের জন্য চরম দুর্যোগ।

তবে বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক রঘুনাথ কর বলেন, এ জেলায় ৭৪ হাজার ৫৩০ হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৪০ ভাগ জমিতে রোপণ শেষ হয়েছে। গত ছয় দিনে জেলায় এক হাজার ১৫৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। অতিবর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে আমনের বীজতলা পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। যেখানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে সেই এলাকায় বীজতলা-সহ পান ও সবজি ক্ষেতের ক্ষতি হচ্ছে বেশী।

বাগেরহাট জেলা চিংড়ি চাষি সমিতির সভাপতি ফকির মহিতুল ইসলাম সুমন বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের পরে আমরা ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার চেষ্টা করছিলাম। যখনই চাষিরা মাছ বিক্রি শুরু করল তখন জোয়ারের পানিতে ঘেরগুলো তলিয়ে মাছগুলো ভেসে গেল। চাষিদের দুই’শ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে।

বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. খালেদ কনক বলেন, জোয়ারের পানিতে বাগেরহাটের ছয়টি উপজেলার প্রায় ৫ হাজার মৎস্য ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টাকার অংকে চাষিদের কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে সে বিষয়টি নিরুপণ করতে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করেছি আমরা। বাগেরহাট জেলায় প্রায় ৬৭ হাজার হেক্টর জমিতে সাড়ে ৭৮ হাজার বাগদা ও গলদা চিংড়ির ঘেরে চিংড়ি চাষ হয়েছে। গত অর্থ বছরে সাড়ে ১৬ হাজার মেট্রিক টন বাগদা ও সাড়ে ১৫ হাজার মেট্রিক টন গলদা চিংড়ি উৎপাদন হয়েছিল বাগেরহাট জেলায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন