দুর্যোগে দিশেহারা বাগেরহাটের ‘সাদা সোনা’ চাষী

অব্য‍াহত দুর্যােগে ৫ হাজারের বেশি ঘের ভেসে গেছে। কোটি কোটি টাকার ক্ষতিতে বাগেরহাটের ‘সাদা সোনা’ চিংড়ি চাষিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।।

।। সারাবেলা প্রতিবেদন, বাগেরহাট ।।

মহামারী-তাপদাহ ছাড়াও গত ৯ মাসে অতিবৃষ্টি, অস্বাভাবিক জোয়ার ও আমফনে কমপক্ষে তিনবার তাদের মৎস্য ঘের ডুবে গেছে। এরপরেও মরারওপর খাড়ার ঘা’-এর মত করোনা প্রকোপে দরপতন। অব্য‍াহত দুর্যােগে ৫ হাজারের বেশি ঘের ভেসে গেছে। কোটি কোটি টাকার ক্ষতিতে বাগেরহাটের ‘সাদা সোনা’ চিংড়ি চাষিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।।
বাগেরহাট জেলা চিংড়ি চাষি সমিতির সভাপতি ফকির মহিতুল ইসলাম সুমন বলেন, “ঘূর্ণিঝড় আম্পানের চেয়ে এবারের অতিবৃষ্টি ও অস্বাভাবিক জোয়ারে ৫ হাজারের বেশী ঘের ভেসে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। আমফানের পর মাছ বিক্রির সময়ে আবার সব ভেসে গেল। আমাদের মেরুদন্ড ভেঙ্গে গেছে, এখন কিভাবে চাষিরা ঋণ শোধ হবে, কি ভাবে বাঁচবো, আমরা কি করব বুঝে উঠতে পারছিনা।”
বহরবুনিয়া ইউনিয়নের ঘষিয়াখালী গ্রামের নুরুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান, মাসুদ শিকদারসহ ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকেরা আক্ষেপ করে বলেন, অতিজোয়ার ও লাগাতার বৃষ্টিতে আমাদের বাড়িঘর, ঘের, পুকুর, রাস্তা, গোয়ালঘর, ফসলের ক্ষেত সবকিছু ডুবে গেল। কিন্তু এবারই প্রথম আগাম কোন সতর্কতামূলক বার্তা আমরা পেলামনা।
জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্য মতে, সম্প্রতি অতিরিক্ত বৃষ্টি ও অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে এ জেলায় ছয় হাজার ৮৫৩টি মৎস্য ঘেরের ক্ষতি হয়েছে। এর কয়েক মাস আগে ‘বুলবুল’ ও ‘আমফনে’ অনুরূপ ক্ষতি হয়। বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. খালেদ কনক জানান, বাগেরহাটের বিভিন্ন এলাকায় তিন দফায় ১৯ হাজার ৩০১টি মৎস্য ঘের ডুবে চাষিদের ক্ষক্ষতি হয়েছে। বাগেরহাট জেলায় ৬৮ হাজার ১৬৫ একর জমিতে ৭৬ হাজার ৭৩০টি মৎস্য ঘের রয়েছে। আর চিংড়ি চাষের সথে প্রত্যক্ষভাবে ৬৫ হাজার ৮০৪ পরিবার সম্পৃক্ত। পরোক্ষভাবে জড়িত কমপক্ষে তিন লাখ মানুষ।
অনুরূপ অতিবৃষ্টি, অস্বাভাবিক জোয়ার ও জলাবদ্ধতায় অধিকাংশ সবজি ক্ষেত, পান বরজ ও রোপা আমন ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে। পঁচে গেছে শসা, করল্লা, উচ্ছে, পুঁইশাক, ঢেড়স, চাল কুমড়া, জিংগা, চিচিংগা, বরবটি, মিষ্টি কুমড়া, বেগুন, ডাটা ও লাউ, পান গাছের গোড়া।
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসেব অনুযায়ী, এবার জেলায় ৫২ হাজার ৩০৯ হেক্টর জমিতে আউশ, রোপা আমন ধান, বিভিন্ন ধরনের সবজি, পান, আখ ও মরিচ চাষ হয়েছিল। টানা বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় সাড়ে নয় হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এরমধ্যে আবার ৬৯৭ হেক্টর জমিতে আমনের বীজতলা রয়েছে। এবারের জোয়ারে ২৫ হাজার ৩৬৮ জন চাষির ১৭ কোটি ১৮ লাখ ৯২ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় আম্পানেও চাষিদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন