|| সারাবেলা প্রতিবদেক, যশোর ||
নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই বিভিন্নস্থানে উঁচু-নিচু হয়ে উঠছে যশোর-খুলনা মহাসড়কের উপরিভাগ। ফুলে ওঠা সড়কের বিস্তৃতি প্রায় আট কিলোমিটার। ঝুঁকিতে পড়েছে সড়কের এই অংশে যানচলাচল।
নির্মাণকাজে গাফিলতির অভিযোগ থাকলেও সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ যশোরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সৈয়দ রফিকুন নবী দাবি করেছেন, তীব্র তাপ ও গাড়ির ওভারলোডের কারণে এমনটা হয়েছে। সড়ক আঁকাবাঁকা হয়ে ফুলে-ফেঁপে উঠছে। তবে কারণ খুঁজতে পরামর্শক নিয়োগ করা হবে বলেও জানিয়েছেন এই প্রকৌশলী।
যশোর-খুলনা মহাসড়কের ৩৮ কিলোমিটারের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের মে মাসে। খরচ ধরা হয়েছে ৩২১ কোটি টাকা। ২০২০ সালের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ইতোমধ্যেই মেয়াদ বাড়িতে ডিসেম্বরে নেওয়া হয়ছে। যশোর শহরতলির পালবাড়ি মোড় থেকে শুরু হয়ে অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়ার রাজঘাট পর্যন্ত মহাসড়কটির ৩৮ কিলোমিটার অংশ নতুন করে নির্মিত হচ্ছে।
এরমধ্যে ২৭ কিলোমিটার কাজ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাহবুব অ্যান্ড ব্রাদার্স এবং তমা কনস্ট্রাশন অ্যান্ড কোম্পানি। আর এই ২৭ কিলোমিটারের আট কিলোমিটার সড়কে সৃষ্টি হয়েছে উঁচু-নিচু ঢেউ। ফুলে-ফেঁপে উঠেছে পুরো সড়ক।
সওজ সূত্রে জানা গেছে, সড়কটি বর্তমানে ২৪ ফুট চওড়া। এটি আরো ১০ ফুট বাড়িয়ে ৩৪ ফুট চওড়া ও দুই লেন করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে সড়কের নতুন ভিত তৈরি করতে পাঁচ ফুট গর্ত করে প্রথমে বালি ফিলিং, পরে বালি ও খোয়া এবং শেষে বালি ও পাথর মিশিয়ে ভরাট করার নিয়ম রয়েছে। এরপর বিটুমিন সারফেস পাঁচ ইঞ্চি দিয়ে কাজ শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে।
নির্মাণকাজের শুরু থেকেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিস্তর অনিয়মের অভিযোগ তোলেন সড়কসংলগ্ন স্থানীয় মানুষ। তারা বলছেন, শুরু থেকেই তারা দেখতে পান দরপত্রে উল্লেখিত কোন নিয়মনীতিই মানছেন না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
সড়কসংলগ্ন বসুন্দয়ার বাসিন্দা আবদুল জব্বার অভিোগ করেন, শুরু থেকেই গোঁজামিল দিয়ে কাজ করার প্রবণতা দেখেছেন তারা। নতুন ইট ও খোয়া দিয়ে গর্ত ভরাট করবার কথা থাকলেও ঠিকাদাররা সড়কে আগে থেকেই ব্যবহৃত পুরনো ইট ও খোয়া তুলে সেটাই আবার ব্যবহার করেছেন বলেও জানান স্থানীয় এই বাসিন্দা। এমনকি গর্ত পাঁচ ফুট গর্ত করে রাস্তার ভিত তৈরির নির্দেশণাও মানা হয়নি বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে।
যশোর বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম চাকলাদার জানান, “আমি সম্প্রতি খুলনায় গিয়েছিলাম। নতুন নির্মিত সড়কে এমন ফুলে-ফেঁপে ওঠা কখনো দেখিনি। সওজের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আঁতাত করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়কের কাজে অনিয়ম করার কারণে এমনটি হয়েছে। এতে আমাদের গাড়ির ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি ঝুঁকিও বাড়ছে।”
এ ব্যাপারে যশোর সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, “শিল্পশহর নওয়াপাড়া থেকে ওভারলোড গাড়ি চলাচল করায় এবং তীব্র তাপের কারণে সড়কে এমনটি হতে পারে। আমাদের দেশে যে বিটুমিন ব্যবহার করা হয় তা নিম্নমানের। তারপরও আমরা পরামর্শক নিয়োগ করছি। যেসব জায়গায় সড়কে সমস্যা হয়েছে, সেসব রাস্তা আবারো নির্মাণ করা হবে।”
তিনি বলেন, “আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঠিকাদারের কাজে অনিয়মের সুযোগ নেই। সড়কের কাজ শুরুর সঙ্গেই এসও এবং এসডিও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারাই সড়ক দুটির সব কাজের দেখভাল করছেন। তার পরও কাজে অনিয়ম পেলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।”