বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবিকে দুর্ঘটনা নয় হত্যাকাণ্ড বলছেন নৌ প্রতিমন্ত্রী

|| সারাবেলা প্রতিবেদন, ঢাকা ||

ঢাকার শ্যামবাজারের কাছে বুড়িগঙ্গা নদীতে লঞ্চডুবিকে দুর্ঘটনা নয় হত্যাকাণ্ড মনে করছেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তার এমনটাই মনে হয়েছে।

বেলা সাড়ে ৩টার দিকে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজকের ঘটনাটি অন্যান্য ঘটনা থেকে একেবারেই আলাদা। আমি সিসিটিভি ফুটেজ দেখেছি এবং দেখার পরে আমার কাছে মনে হয়েছে ঘটনাটি ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটানো হয়েছে। এটা মনে হচ্ছে একটা হত্যাকাণ্ড।’

ঘটনা তদন্তে একজন যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে এবং কমিটিকে এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে জানিয়ে খালিদ মাহমুদ বলেন, ‘তদন্তের পরে আমরা প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেব।’

সোমবার সকালে রাজধানীর শ্যামবাজারের কাছে চাঁদপুর থেকে ঢাকাগামী লঞ্চ ময়ূর-২ এর ধাক্কায় ছোট্ট লঞ্চ মর্নিং বার্ড ডুবে যায়। লঞ্চটি মুন্সিগঞ্জের কাঠপট্টি থেকে যাত্রী নিয়ে সদরঘাটের দিকে আসছিল।

ডুবে যাওয়া লঞ্চ থেকে এ পর্যন্ত ৩২ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১৯ জন পুরুষ, ৮ নারী এবং তিনজন শিশু বলে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। লঞ্চটিতে ৫০ জনের বেশী যাত্রী ছিল।

বিআইডব্লিউটিএ এর পরিবহন পরিদর্শক মো. সেলিম জানান, এমভি মর্নিং বার্ড নামের ওই লঞ্চটি শ্যামবাজারের কাছে চাঁদপুর থেকে আসা ময়ূর-২ লঞ্চের ধাক্কায় ডুবে যায়। মর্নিং বার্ড নামের ওই লঞ্চে অর্ধশতাধিক যাত্রী ছিলেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও অনেকেই ভেতরে আটকা পড়েন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চাঁদপুর থেকে আসা ময়ূর-২ ভোর সাড়ে ৪টার দিকে লালকুঠী ঘাটে যাত্রী নামিয়ে সদরঘাটের চাঁদপুর ঘাটে গিয়ে নোঙ্গর করার জন্য ব্যাক গিয়ারে ঘুরছিল। ওই সময় পেছনে নদীতে থাকা এমভি মর্নিং বার্ডের সঙ্গে ধাক্কা লাগে।

লঞ্চসহ বাকিদের উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী ও নৌ পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন। উদ্ধারকাজে অংশ নিয়েছে র‌্যাব ও বিমানবাহিনীর দুটি হেলিকপ্টার। পোস্তাগোলা সেতুর উচ্চতা কম হওয়ায় উদ্ধারকারী জাহাজ ঘটনাস্থলে পৌঁছতে না পারায় লিফটিং ব্যাগ দিয়ে লঞ্চটিকে তোলার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন নৌ বাহিনীর কর্মকর্তারা।

নিখোঁযাত্রীদের স্বজনদের যোগাযোগের জন্য বিআইডব্লিউটিএ’র নম্বর ০১৭১৬-০২৬৭০৪। কারন জানতে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি তাদের কাজ শুরু করেছে। এদিকে মৃত প্রত্যেক পরিবারকে দেড় লাখ টাকা ও দাফন বা সৎকারের জন্য ১০ টাকা করে দেয়া হবে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে। শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা রোজিনা ইসলাম বলেন, সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এ দুর্ঘটনার পর তাদের ডুবুরি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। পাশাপাশি নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড, নৌ পুলিশ ও বিআইডব্লিউটিএর কর্মীরাও সেখানে উদ্ধার অভিযানে অংশ নিচ্ছেন। পোস্তাগোলা সেতুর উচ্চতা কম হওয়ায় উদ্ধারকারী জাহাজ ঘটনাস্থলে আসতে না পারায় লিফটিং ব্যাগের সাহায্যে লঞ্চটি তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ডুবুরিরা লঞ্চের নিচে লিফটিং ব্যাগ ঢুকিয়ে দিয়ে তাতে বাতাস ঢুকিয়ে লঞ্চটিকে উপরে তুলে আনবেন।

এদিকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা যেসব লাশ উদ্ধার করেছেন, তাদের মধ্যে যমুনা ব্যাংকের ইসলামপুর শাখার কর্মচারী সুমন তালুকদারকে শনাক্ত করেন তার বড় ভাই নয়ন তালুকদার। তিনি জানান, তাদের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিমে। প্রতিদিন বাড়ি থেকে এসে পুরান ঢাকার ইসলামপুরে অফিস করতেন সুমন। প্রতিদিনের মত সকাল সাড়ে ৭টার দিকে লঞ্চে উঠে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন এক সন্তানের বাবা সুমন। পরে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে এবং তার ফোন বন্ধ পেয়ে সদরঘাটে ছুটে আসেন তার ভাই।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক সাংবাদিকদের বলেন, দুই লঞ্চের কর্মীদের অসতর্কতায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে তারা মনে করছেন। উদ্ধার অভিযান শেষে এ বিষয়ে তদন্ত শুরু হবে।
দুর্ঘটনার পর হাজার হাজার মানুষ ঘাটে এসে ভিড় করেন। মর্নিং বার্ডের নিখোঁজ যাত্রীদের খোঁজে ঘাটে আসা স্বাজনদের বিলাপ করতে দেখ যায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন