নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণে এখন পর্যন্ত মারা গেছে ২৪জন

এ পর্যন্ত মারা যাওয়া ২৩ জনের মধ্যে ২০ জনের লাশ ইতোমধ্যেই তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তাদের দাফনও করা হয়েছে।

|| সারাবেলা প্রতিবেদন, ঢাকা ||

নারায়ণগঞ্জ শহরের পশ্চিম তল্লায় বায়তুস সালেহ জামে মসজিদের এসি বিস্ফোরণে দগ্ধদের মধ্যে আরও তিনজনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২৩ জন। ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে যে ১৪ জন ভর্তি আছেন, তাদের অবস্থা সম্পর্কে ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, “যারা ভর্তি আছেন, তারা কেউ শঙ্কামুক্ত নন। তাদের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ বলা যায়।”

ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক পার্থ শংকর পাল জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের পর দগ্ধ অবস্থায় যে ৩৭ জনকে বার্ন ইনস্টিটিউটে আনা হয়েছিলে, তাদের মধ্যে শনিবার রাত ১১টা পর্যন্ত মারা গেছে ২১ জন। এরপর রোববার ভোরের মধ্যে মারা যান জুলহাস উদ্দিন (৩০) ও শামীম হোসেন (৪৮) নামে দুজন। পরে রোববার সকালে মারা যান আরো একজন। এদের নিয়ে সবশেষ মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৩ জন।

ফতুল্লা মডেল থানার ওসি আসলাম হোসেনের বরাত দিয়ে আমাদের নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, রোববার রাতে যে দু’জন মারা গেছেন, তাদের মধ্যে শামীম হোসেন ছিলেন ওই মসজিদ কমিটির কোষাধ্যক্ষ। মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনও এর আগেই মারা গেছেন।

এ পর্যন্ত মারা যাওয়া ২৩ জনের মধ্যে ২০ জনের লাশ ইতোমধ্যেই তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তাদের দাফনও করা হয়েছে।

এ পর্যন্ত মারা গেছেন যারা

নয়ন, বয়স ২৭, বাবার নাম: মেহের আলী, বাড়ি: লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী থানার পলাশী গ্রামে
বাহার উদ্দিন, বয়স ৫৫, বাবার নাম: আব্দুল খালেক, বাড়ি: নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায়
জুবায়ের, বয়স ১৮, বাবার নাম: নূর উদ্দিন, বাড়ি: শরীয়তপুরের নড়িয়ায় কালিয়াপ্রাসাদ গ্রামে
সাব্বির, বয়স ২১, বাবার নাম: নূর উদ্দিন, বাড়ি: শরীয়তপুরের নড়িয়ায় কালিয়াপ্রাসাদ গ্রামে
মোস্তফা কামাল, বয়স ৩৪, বাবার নাম: করিম মিজি, বাড়ি: চাঁদপুর সদর উপজেলা
কলেজ শিক্ষার্থি, বয়স ১৮, বাবার নাম: আনোয়ার হোসনে, বাড়ি: ফতুল্লার নিউখানপুর ব্যাংক কলোনি
মাইনু্দ্দিন, বয়স ১২, বাবার নাম: মৃত মহসিন, বাড়ি: চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার শেখদী গ্রামে
মো. রাসেল, বয়স ৩৪, বাবার নাম: সেকান্দর মিয়া, বাড়ি: নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায়
জয়নাল, বয়স ৫০, বাবার নাম: আনোয়ার হোসেন, বাড়ি: নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায়
কুদ্দুস বেপারী, বয়স ৭০, বাবার নাম: জইন উদ্দিন বেপারী, বাড়ি: মুন্সীগঞ্জের লৌহজং হাটবুকদিয়া গ্রামে
মাওলানা আব্দুল মালেক, বয়স ৬০, মসজিদের ইমাম, বাড়ি: কুমিল্লার মুরাদনগরের পুটিয়াজুড়ি গ্রামে
কাঞ্চন হাওলাদার, বয়স ৫৩, বাবার নাম: কাদের হাওলাদার, বাড়ি: খুলনার খানজাহান আলী থানার মীরের জঙ্গা গ্রামে
জামাল আবেদিন, বয়স ৪০, বাবার নাম: বেলায়েত বারী, বাড়ি: পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী কাউখালী গ্রামে
জুলহাস উদ্দিন, বয়স ৩০, বাবার নাম: বাচ্চু ফরাজী, বাড়ি: পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালীর বাহেরচরে
জুয়েল, বয়স ৭, বাবার নাম: জুলহাস উদ্দিন, বাড়ি: পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালীর বাহেরচরে
হাফেজ দেলোয়ার হোসেন, বয়স ৪৭, মসজিদের মুয়াজ্জিন, বাড়ি: কুমিল্লা লাঙ্গলকোটের বদরপুর গ্রামে
জুনায়েদ, বয়স ১৭, মুয়াজ্জিন হাফেজ দেলোয়ার হোসেনের ছেলে, বাড়ি: কুমিল্লা লাঙ্গলকোটের বদরপুর গ্রামে
নিজাম, বয়স ৪০, বাবার নাম: সাজাহান পোদ্দার, বাড়ি: পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর সেনের হাওলা গ্রামে
মোহাম্মদ ইব্রাহিম বিশ্বাস, বয়স ৪৩, বাবার নাম: আব্দুল হক, বাড়ি: পটুয়াখালী সদরের দড়িতালুক গ্রামে
মোহাম্মদ রাশেদ, বয়স ৩০, বাবার নাম: খালেক হাওলাদার, বাড়ি: পটুয়াখালীর গলাচিপায়
শামীম হাসান, বয়স ৪৫, মসজিদ কমিটির কোষাধ্যক্ষ, বাড়ি: চাঁদপুরের মতলব থানার সুজাপুর গ্রামে
নাদিম, বয়স ৪৫, বাবার নাম: মজিদ, বাড়ি: নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লাতে
হুমায়ুন কবীর, বয়স ৭০, বাবার নাম: কফিল উদ্দিন শেখ, বাড়ি: নারায়ণগঞ্জের তল্লায়

এদিকে নারায়ণগঞ্জের ডিসি জসিম ‍উদ্দিন শনিবার সকালে বার্ন ইনস্টিটিউটে যান। মৃতদের পরিবারকে ২০ হাজার এবং আহতদের ১০ হাজার টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দেন জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

শুক্রবার এশার নামাজের সময় নারায়ণগঞ্জ শহরের পশ্চিম তল্লার বায়তুস সালেহ জামে মসজিদের ছয়টি এসি একসঙ্গে বিস্ফোরিত হয়। দমকল বাহিনীর ৫টি ইউনিট আধা ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। সে সময় মসজিদে থাকা পঞ্চাশের বেশী মানুষের সবাই কমবেশি দগ্ধ হন। তাদের মধ্যে ৩৭ জনকে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা চলছে যাদের-

বরিশালের বাকেরগঞ্জের বারঘড়িয়া গ্রামের সোবাহান ফরাজীর ছেলে মনির ফরাজী, আবুল বাশার মোল্লা, ময়মনসিংহের ত্রিশালের আব্দুর রহমানের ছেলে ফরিদ, কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া থানার চর আলগী গ্রামের এমদাদুল হকের ছেলে শেখ ফরিদ, নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা মকবুলের ছেলে মোহাম্মদ আলী মাস্টার, নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লার পশ্চিম তল্লার মো. স্বপনের ছেলে সিফাত, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা আফজালের ছেলে হান্নান, একই এলাকার আব্দুল মান্নানের ছেলে আব্দুস সাত্তার, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসিরহাট গ্রামের আবদুল আহাদের ছেলে আমজাদ, পটুয়াখালীর চুন্নু মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ কেনান, শরীয়তপুরের নড়িয়ার আলাল শেখের ছেলে ইমরান, শরীয়তপুরের নড়িয়া কেদারপুর গ্রামের মনু মিয়ার ছেলে আব্দুল আজিজ, পটুয়াখালী মোহাম্মদ রাজ্জাকের ছেলে নজরুল ইসলাম, পটুয়াখালীর ধুমকির চর বয়রা গ্রামের লতিফ হাওলাদারের ছেলে মামুন।

দমকল বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, ওই মসজিদের নিচ দিয়ে তিতাসের যে গ্যাসের পাইপ গেছে, সেখানে লিকেজ থেকে গ্যাস জমে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে বিস্ফোরণ ঘটেছে প্রাথমিকভাবে তারা ধারণা করছে। প্রতিষ্ঠানটির উপপরিচালক দেবাশীষ বর্ধন বলেন, “এসিতে ব্যবহৃত ফ্রেয়ন গ্যাসের অস্তিত্ব আমরা মসজিদের ভেতরে বাতাসে পেয়েছি। এর পেছনে অন্য কোনো ঘটনা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

এ ঘটনা তদন্তে ফায়ার সার্ভিস, তিতাস গ্যাস ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন