|| সারাবেলা প্রতিবেদন, ঢাকা ||
করোনাদুর্যোগ মোকাবেলায় স্বাস্থ্যমান্ত্রী জাহিদ মালেকের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ এনে তাঁর পদত্যাগ ও বিচারের দাবীতে প্রতিবাদি অবস্থান নিয়েছিলেন আরমান হোসেন আরমান। তাকে প্রতিবাদ জানাতে দেয়নি আইন শৃংখলারক্ষাকারী বাহিনী। আরমানের অভিযোগ, তাকে শনিবার জোর করে তুলে দেওয়া হয়েছে।
আরমান জানান, রাষ্ট্রিক ও সরকারের জনবিরোধী যে কোন কার্যক্রমের প্রতিবাদ জানানো ও সংক্ষুব্ধ হওয়া নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। আইনশৃংখলা বাহিনীর লোকজন তাকে সেই প্রতিবাদ জানাতে দেয়নি। তবে রোববার সকাল থেকে আবারো প্রতিবাদী অবস্থান নেবেন বলে জানিয়েছেন আরমান।
রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সংক্ষুব্ধ অবস্থান নেওয়ার আগে রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য আরমান হোসেন আরমান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, “একাই, কিন্তু আমি একা নই; গোটা বাংলাদেশ আমার সঙ্গে আছে। কারণ, করোনাকালে সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও তার মন্ত্রণালয়ের যাবতীয় দুর্নীতি, অদক্ষতা ও ব্যর্থতার প্রভাব দেশের সমস্ত নাগরিকের ওপরে পড়েছে।
করোনা সংক্রমণের শুরুতে নিরাপত্তা সামগ্রী হিসেবে নকল মাস্ক ও পিপিই দিয়ে ডাক্তার ও নার্সসহ সমস্ত স্বাস্থ্যসেবীদের মনোবল ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। রেকর্ড সংখ্যক স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত ও নিহত হয়েছে। ফলে করোনা রোগী তো দূরের কথা, সাধারণ রোগীদের জন্যেও চিকিৎসা সেবা বন্ধ হয়ে গেছে। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে, এমনকি হতে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ বিনা চিকিৎসায় মরতে বাধ্য হয়েছে। এবং এরপরেও আমরা দেখেছি, নির্লজ্জ ও বিবেকহীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও তার দোসর কর্মচারি গং মিলে স্বাস্থ্য সামগ্রী কেনাকাটায় গলাকাটা দুর্নীতি করেছে; ৫০০ টাকাও দাম নেই যে চশমার সেগুলোর খরচ ৫০০০ টাকা দেখানো হয়েছে।
উচ্চ কমিশনের কারণের নিজদেশের উদ্ভাবিত কিট অনুমোদন না দিয়ে চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে মানহীন ভুয়া কিট আমদানি করা হয়েছে- যেগুলো দিয়ে করোনা পরীক্ষার ফলাফল একেক পিসিআর মেশিনে একেক রকম ধরা পড়ছে। এরপর এখন আবার পর্যাপ্ত কিট না থাকার কারণে নানান রকমের মিথ্যা অজুহাত দিয়ে ময়মনসিংহ সহ দেশের নানান স্থানে করোনার নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা বন্ধ করে মানুষকে অসহায় ও আতংকগ্রস্ত করে ফেলা হচ্ছে।
এর পাশাপাশি বাস্তবতা বর্জিত, মিথ্যা উন্নয়নী পরিসংখ্যানের মতো আইইডিসিআরকে দিয়ে প্রতিদিন সঙ্গতিহীন ভুয়া তথ্য প্রচার করা হচ্ছে, দেশের প্রকৃত বাস্তবতা এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা না করে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অসৎ ব্যবসায়ীদের অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ জরুরি মেডিকেল সামগ্রী সরবরাহ ও বিক্রিতে অমানবিক কারসাজি করতে দেয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে, দেশের অজস্র মানুষকে চিকিৎসা না দিয়ে খুন করে তথাকথিত ভিআইপিদের চিকিৎসায় অসাংবিধানিকভাবে বিশেষ সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এবং এরই অংশ হিসেবে বর্তমান বাজেটে আপাদমস্তক দুর্নীতিপ্রবণ, ব্যর্থ ও ভঙ্গুর এই স্বাস্থ্যখাত গড়ে তোলার লক্ষ্যে পর্যাপ্ত বরাদ্দ ও সুনির্দিষ্ট রূপরেখা প্রণয়ন না করে সামান্য কিছু টাকা থোক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে- যাতে এগুলোও মন্ত্রী এবং সরকারি দোসর গং বিনা হিসেবে গিলে খেতে পারে। এরকম অজস্র অভাবিত ব্যর্থতার পাহাড় জমে গেছে বর্তমান সরকারের অদক্ষ, অযোগ্য ও অপরাধী স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ঘাড়ে। অবিলম্বে এই ব্যর্থ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাদ ও বিচাররের আওতায় আনতে হবে।
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ, সংবিধান যাদেরকে এদেশের মালিক বলে, যারা নিজেদের শ্রমের টাকা দিয়ে এই সরকারকে পরিপালন করে – সরকারকে এই মানুষের, এদেশের মালিকদের কথা শুনতে হবে, তাদের স্বার্থ সুরক্ষা করতে হবে। এবং এ কারণে অনতিবিলম্বে বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে পদচ্যুত করে দৃষ্টান্তমূলক বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। এই মন্ত্রীর অপকর্মের অংশীদার সরকারি বেসরকারি সমস্ত অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। যারা বিনা চিকিৎসায় মরতে বাধ্য হয়েছে, তাদের পরিবারকে উপযুক্ত আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, তাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।
স্বল্পতম সময়ে সর্বাধিক রক্তপ্রাণ দিয়ে যে বাংলাদেশ নির্মিত হয়েছে- সে দেশকে আমরা এইসব অযোগ্য, অদক্ষ ও অপরাধী চক্রের কারণে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিনত হতে দিতে পারি না। বাংলাদেশের মানুষ এটা সহ্য করবে না ।”
তথ্যসূত্র : সংবাদ বিজ্ঞপ্তি