ব্যারিস্টার ইমতিয়াজের খুনিদের শাস্তি চান সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবীরা

ছেলের হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচার দাবি করে সাবেক এই এমপি বলেন, আইনশৃংখলাবাহিনী পারেনা এমন কোনো কাজ নেই। ঘটনার অনেক দিন পার হয়ে গেল অথচ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। আমি এ হত্যাকাণ্ডের মামলায় আসামীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবী জানাচ্ছি। এরপর তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

|| সারাবেলা প্রতিনিধি, উচ্চ আদালত ||

সুপ্রিম কোর্টের এক তরুণ আইনজীবী ব্যারিস্টার আসিফ ইমতিয়াজ খান জিসাদের খুনের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার ও মামলার সুষ্ঠু তদন্ত দাবিতে মানববন্ধন করেছেন সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীরা। তারা মঙ্গলবার দুপুরে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে মানববন্ধনে অংশ নেন।

মানবন্ধনে অংশ নিয়ে ব্যারিস্টার ইমতিয়াজের বাবা মুক্তিযোদ্ধা সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট শহিদুল ইসলাম খান অভিযোগ করেন, তার ছেলে ব্যারিস্টার আসিফ ইমতিয়াজ খানের শ্বশুর-শাশুড়ি, শ্যালক ও শ্যালকের ছেলে মিলে খুন করেছে। ঘটনার দিন রাত্রি দেড়টা পর্যন্ত ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে শহিদুল ইসলাম খান বলেন, সেদিন রাতে ছেলে আমাদেরকে ফোন করেছে। রাত দশটায় সে বাসায় এসে খাওয়ার কথা ছিলো। এরপর সে আবার ফোন করে বলে পরের দিন সকাল শুক্রবারে আসবে। সে দিন রাত দেড়টা পর্য‌ন্ত তার বন্ধুদের সঙ্গে মামলা মোকাদ্দমা দিয়ে কথা বলেছে। রাত ২টার দিকে শুরু হয়েছে ঝগড়া। এরপর রাতে একপর্যায়ে হাতাহাতি অথবা তাকে তার শ্বশুর বাড়ীর লোকেরা পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে।

ছেলের হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচার দাবি করে সাবেক এই এমপি বলেন, আইনশৃংখলাবাহিনী পারেনা এমন কোনো কাজ নেই। ঘটনার অনেক দিন পার হয়ে গেল অথচ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। আমি এ হত্যাকাণ্ডের মামলায় আসামীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবী জানাচ্ছি। এরপর তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

আসিফের মৃত্যুর ঘটনায় তার স্ত্রী সাবরিনা শাহীদ নিশিতাসহ চারজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়েছে। মামলার অন্য আসামিরা হলেন-আসিফ ইমতিয়াজের শ্বশুর এ এস এম শহিদুল্লাহ মজুমদার, শাশুড়ি রাশেদা শহীদ ও শ্যালক সায়মান শহীদ নিশাত। আসিফের বাবা শহিদুল ইসলাম খান বাদী হয়ে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই মামলা করেন। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদবীর ইয়াছির আহসান চৌধুরী কলাবাগান থানাকে অভিযোগটি নিয়মিত মামলা হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতে বাদীপক্ষে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. ইকবাল হোসেন ও সাবেক সভাপতি কাজী নজিবুল্লাহ হিরু শুনানি করেন।মামলাটি এখন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিআইবিতে) তদন্তে রয়েছে।

ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ইকবাল হোসেন জানান, আসিফ ইমতিয়াজের শ্বশুর বাড়ির লোকজনের কথায় তিনি একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে পারিপার্শ্বিক ঘটনা, সুরতহাল রিপোর্ট ও আসামিদের আচরণে বাদী বুঝতে পেরেছেন আসিফ লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেননি বরং তাকে হত্যা করে ওপর থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে। তাই দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় নিহত আসিফের বাবা বাদী হয়ে এই মামলাটি দায়ের করেছেন। আদালত কলাবাগান থানাকে এই মামলার অভিযোগটিকে এজাহার হিসেবে গ্রহণ করে তা নিয়মিত মামলা হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, বলা হয়, গত ১১ই সেপ্টেম্বর শুক্রবার ভোর ৯ তলার বারান্দা থেকে লাফিয়ে পড়ে আসিফ মারা যান। কাঁঠালবাগান এলাকায় একটি ভবনের নবম তলায় শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন তিনি। ওই ভবনের নিচ থেকে ভোরে রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করা হয়। আসিফকে প্রথমে গ্রিন লাইফ হাসপাতাল, পরে স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনি মারা যান।

আসিফ ব্যারিস্টারি পাশ করে সুপ্রিম কোর্টে প্র্যাকটিস শুরু করেন। চার বছর আগে সাবরিনা শাহিদ নিশিতার সঙ্গে প্রেমের বিয়ে হয়। বাবা-মা কানাডা থাকায় আসিফ কাঁঠালবাগান শ্বশুর বাড়িতেই থাকতেন। তাদের কোনো সন্তান নেই। সম্প্রতি আসিফ স্ত্রীসহ কানাডা থাকবার হওয়ার জন্য সব প্রক্রিয়া শেষ করেছিলেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন