বিজেএমসি বিলুপ্ত করে পাটকল চালু চান ইনু

।।সারাবেলা প্রতিবেদন, ঢাকা।।

বিজেএমসি বিলুপ্ত করে বন্ধ পাটকলগুলো সরকারি ব্যবস্থাপনায় স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে চালুর ‍প্রস্তাব দিয়েছেন আওয়ামী লীগের জোট শরিক জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু। পাট-সুতা ও বস্ত্রকল শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের আলোচনা সভায় তিনি এ প্রস্তাব দেন।

জাতীয় প্রেসক্লাবে পাট-সুতা ও বস্ত্রকল শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের এই আলোচনায় পরিষদের আহ্বায়ক সহিদুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বর্তমানে বিজেএমসি পরিচালিত ২২টি কারখানার হেসিয়ান, সেকিং, সিবিসি এই তিন ধরনের মোট ১০ হাজার ৮৩৫টি তাঁত রয়েছে। আধুনিক স্বয়ংক্রিয় তাঁতের তুলনায় এগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা অত্যন্ত কম। হেসিয়ান তাঁতের পূর্ণ উৎপাদন ক্ষমতা ১৬ টন, সেকিং তাঁতের ৩৯ টন, সিবিসি তাঁতের ১৮ টন।

নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করলে পাটকল ও তাঁতের গড় উৎপাদন ৬০ শতাংশ বেড়ে যাবে বলে জানান পাট কমিশনের সাবেক সদস্য সহিদুল্লাহ চৌধুরী । তিনি বলেন, সেক্ষেত্রে উৎপাদিত পণ্যের বিক্রয়মূল্য হেসিয়ান তাঁত থেকেই আসবে ১৩০০ কোটি টাকা। এছাড়া সেকিং ও সিবিসি থেকে আসবে প্রায় আরও প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। ফলে বিজেএমসি তখন আত্মনির্ভরশীল প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। কোনো ধরনের সরকারের আনুকূল্য ছাড়াই সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক নিয়মে পরিচালিত হবে।

আলোচনায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, শ্রমিকদের অবসরে পাঠানোর জন্য যে ৫ হাজার টাকা সরকার বরাদ্দ করেছে, তা সেই টাকা দিয়ে পাটকলগুলো আধুনিকায়নের মাধ্যমে লাভজনক করা সম্ভব।

গত জুন মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর ক্রমাগত লোকসানকে কারণ হিসেবে কারখানাগুলো বন্ধ করে দেয় সরকার। লোকসানের জন্য পাটকলগুলোর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বিজেএমসিকে দায়ী করেন পাটমন্ত্রী গাজী গোলাম দস্তগীর।

সেই কথার সূত্র ধরে ইনু বলেন, প্রত্যেকটা পাটকলকে একটা স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষণা করেন। সেগুলোর ব্যবস্থাপনার একটা আধুনিক পদ্ধতিতে আসুন। এ ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য যত টাকা লাগে দিন, উৎপাদন এমনিতেই বাড়বে।

আলোচনায় যুক্ত হয়ে বিজেএমসির আমলতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সমালোচনা করেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমলাতান্ত্রিক ও ভর্তুকি নির্ভর যে মডেলে আমরা যে রাষ্ট্রীয় খাত চালাচ্ছি, সে মডেল কার্যকর করে কিন্তু আমরা পাট শিল্পের স্বার্থ রাখতে পারব না।

পাটকলগুলোতে উৎপাদন বাড়াতে চীনের সঙ্গে জিটুজি চুক্তির মাধ্যমে আধুনিক যন্ত্রপাতি এনে মিলগুলো আধুনিকায়নের পরামর্শ দেন তিনি।

পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের জমিতে নতুন করে শিল্প এলাকা তৈরি করে সেখানে পাট ব্যবসার নতুন ক্ষেত্র বিস্তৃত করার প্রস্তাবও দেন তিনি।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, পাটকলগুলো বন্ধ করলে আমরা একদিকে যেমন দক্ষ শ্রমিক হারিয়ে ফেলব, তেমনি শ্রমিকদের পক্ষেও মধ্যবয়সে এসে পেশা পরিবর্তন করা সম্ভব হবে না। আমাদের যে আন্তর্জাতিক বাজার, সেটিও আমরা আর ফিরে পাব না। তাই পাটখাতের ব্যাপারটাকে এখন এড়িয়ে যাওয়া যাবে না।

এ আলোচনায় আরও যুক্ত হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক এম এম আকাশসহ পাটকল আন্দোলনের নেতারা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সংবাদ সারাদিন